শিরোনাম
শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

একাত্মবাদে অবিচল থাকার পুরস্কার জান্নাত

মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম : পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

একজন মুমিনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ইমান ও ইসলামের ওপর অটল অবিচল থাকা। যাকে ইসতেকামাত বলে। এমন যেন না হয় যে যখন মনে চায় তখন ইসলামের বিধান অনুযায়ী আমল করে আর যখন মনে না চায় বা ইসলামের কোনো বিধান যদি নিজের কাছে কঠিন মনে হয় তখন ওই বিধানকে ছেড়ে দেয়; বরং প্রকৃত মুমিন মুসলমান তো ওই ব্যক্তি যে মনেপ্রাণে এ কথা বিশ্বাস করবে, শান্তি-সফলতা একমাত্র আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালনের মাঝেই নিহিত আছে। ভালো লাগুক চাই না লাগুক, বুঝে আসুক বা নাই আসুক, সুখে-দুঃখে, সচ্ছলতা-অসচ্ছলতায় সর্বাবস্থায় দীনের ওপর অটল-অবিচল থাকতে হবে।

ইসলামের শুরুলগ্নে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মানুষকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দিতে শুরু করলেন তখন কোরাইশ কাফিরদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ‘হে মুহাম্মদ! তুমি এসব কথা বলে যদি সম্পদ অর্জন করতে চাও তাহলে আমরা তোমাকে বিত্তশালী করে দেব। নেতা বানিয়ে দেব। আর যদি রাজা-বাদশাহ হতে চাও তাহলে আমরা তোমাকে রাজা বানিয়ে দেব।’ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসব লোভনীয় প্রস্তাবের উত্তরে বলেছিলেন, ‘আল্লাহর শপথ! যদি তারা আমার ডান হাতে সূর্য ও বাঁ হাতে চন্দ্রও এনে দেয় তবু আমি দীন প্রচার থেকে বিরত থাকব না।’।

অনুরূপভাবে আমরা যদি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সান্নিধ্যে ধন্য সাহাবায়ে কিরামের জীবনের দিকে তাকাই সে ক্ষেত্রে অসংখ্য অগণিত ঘটনা রয়েছে যে সাহাবায়ে কিরাম ঘরবাড়ি, আত্মীয়স্বজন এমনকি দেশান্তরিত হতে হিজরত পর্যন্ত করেছেন এর পরও ইসলামের সুশীতল ছায়া থেকে বিন্দু পরিমাণ দূরে সরে যাননি। হজরত বিলাল (রা.) কে কাফিররা লোহার বর্ম পরিয়ে প্রখর রোদে ফেলে রাখত। ছোট ছোট বাচ্চারা তাকে মক্কার পাহাড়ি অঞ্চলে টানা হেঁচড়া করে বেড়াতে লাগল। এত কষ্ট সহ্য করেও তাঁর ইমানে বিন্দু পরিমাণ দুর্বলতা সৃষ্টি হয়নি। বরং এই কঠিন অবস্থায়ও তিনি মুখে আহাদ আহাদ উচ্চারণ করেছেন। হজরত খাব্বাব (রা.) উম্মে আনসারের দাস ছিলেন। তিনি ইসলাম গ্রহণ করলে মনিব উম্মে আনসার লোহা গরম করে তাঁর মাথায় রাখল। এমনকি একদিন হজরত ওমর (রা.) তাঁর পিঠ দেখে বললেন, আজ পর্যন্ত আমি এমন পিঠ দেখিনি, কী হয়েছে তোমার? হজরত খাব্বাব উত্তরে বললেন, আমি ইসলাম গ্রহণ করার কারণে কাফিররা আমাকে অঙ্গারের ওপর শুইয়ে হেঁচড়াত। এমন অসংখ্য অগণিত ঘটনা হাদিসে বর্ণিত আছে।

সুতরাং এসব ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। ইসলামের বিধান লঙ্ঘন করে কোনো ধরনের কোনো অবৈধ সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করা যাবে না এবং ইসলামের বিধানাবলি পালনের  ক্ষেত্রে যত বাধাই আসুক না কেন, সব বাধা উপেক্ষা করে প্রতিটা বিধান মেনে ইসলামের ওপর অটল অবিচল থাকতে হবে। তাই তো ইসলামের ওপর অটল অবিচল থাকার পুরস্কার ঘোষণা করে রব্বুল আলামিন ইরশাদ করছেন, ‘নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অতঃপর এর ওপর স্থির থাকে, তাদের কোনো ভয়ভীতি নেই। নেই কোনো চিন্তা-পেরেশানি। পৃথিবীতে যা আমল করেছে তার প্রতিদান-স্বরূপ তারাই জান্নাতের চিরস্থায়ী অধিবাসী। সূরা আহকাফ, আয়াত ১৩-২৪।

অন্য আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘নিশ্চয় যারা বলে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ অতঃপর অবিচল থাকে, তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে, তোমরা ভীত হইও না। তোমরা চিন্তিত হইও না এবং যে জান্নাতের বিষয়ে তোমাদের সঙ্গে ওয়াদা করা হয়েছে তার সুসংবাদ গ্রহণ করে আনন্দিত হও।’ সূরা হামিম সিজদা, আয়াত ৩০। মুসলিমের এক হাদিসে এসেছে, ‘ইউসুফ সাকফি নামক একজন সাহাবি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আল্লাহর রসুল! ইসলাম সম্পর্কে আমাকে এ রকম একটি কথা বলুন যেন পরবর্তীতে আমাকে কারও কাছে প্রশ্ন করতে না হয়। তিনি উত্তরে বললেন, তুমি বল আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছি এবং এর ওপর স্থির থাকব।’

প্রিয় বন্ধুরা! বর্তমান সময়ে দীন ইসলামের ওপর অটল অবিচল থাকা কঠিন। তাই তো রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেন, ‘মানুষের ওপর এমন এক সময় আসবে, যে সময় দীনের ওপর অটল অবিচল ব্যক্তিকে ওই ব্যক্তির মতো ধৈর্যশীল হতে হবে, যার হাতে থাকবে জ্বলন্ত অঙ্গার।’ তিরমিজি।

দীনের ওপর অটল অবিচল থাকার উপায় : দীনের ওপর অটল অবিচল থাকার অন্যতম উপায় হলো অন্তরে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি করতে হবে। আর আল্লাহর ভয় অন্তরে সৃষ্টি করতে হলে যাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে এমন কোনো খাঁটি আল্লাহওয়ালার তত্ত্বাবধানে, পরামর্শে জীবন পরিচালনা করতে হবে। সব ধরনের গুনাহ বর্জন করতে হবে। আল্লাহর সব আদেশ-নিষেধ মেনে চলতে হবে এবং প্রতিটি কাজ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত অনুযায়ী করতে হবে। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন।

সর্বশেষ খবর