সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

যুক্তিহীন উক্তির খপ্পরে প্রযুক্তি

হানিফ সংকেত

যুক্তিহীন উক্তির খপ্পরে প্রযুক্তি

এখন চারদিকে চলছে ডিজিটাল ডিজিজ। ডিজিটাল রোগে আক্রান্ত অনেকেই। সবার হাতে হাতে মোবাইল। জনে জনে চ্যানেল। যখন যেখানে খুশি সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই যা ইচ্ছে তাই আপলোড করা যায়, লেখা যায়। কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, নেই কোনো জবাবদিহিতা। যার ফলে কারও মানহানি হয়, কারও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। কিছু কিছু বিষয়ে আবার দেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট হয়। গত ১২ ডিসেম্বর ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস। তাই এই দিবসের যথার্থ স্লোগান ছিল, ‘সত্য-মিথ্যা যাচাই আগে, ইন্টারনেটে শেয়ার পরে’। এটাই হওয়া উচিত কিন্তু বাস্তবে হচ্ছেটা কী? সত্য-মিথ্যা যাচাই-বাছাই না করে যখন-তখন, যা খুশি তাই লেখা হচ্ছে, বলা হচ্ছে এবং ইন্টারনেটে শেয়ার করা হচ্ছে। এর কারণ এখন ইচ্ছে করলেই চ্যানেলের মালিক হওয়া যায়। যেই চ্যানেলের নাম ইউটিউব চ্যানেল। এর জন্য কোনো অফিস লাগে না, কর্মচারী লাগে না, প্রাতিষ্ঠানিক কোনো খরচও লাগে না। শুধু আপলোড আর ডাউনলোড। ইনভেস্টমেন্ট ছাড়াই চ্যানেল মালিক। সারা পৃথিবীর ১৫০ কোটিরও বেশি মানুষ এখন এই চ্যানেল দেখে। দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে টিভির দর্শক। বাড়ছে ইউটিউব দর্শক। কারণ মানুষ এখন অন্যের নির্ধারিত শিডিউলে কিছু দেখতে চায় না। নিজের সময়মতো সে চলতে চায়। তবে যে যাই বলুক এ কথাটি বিতর্কিত। কারণ ইউটিউবের ভিউ দেখা গেলেও টিভির অনুষ্ঠানে ভিউ দেখার কোনো সুযোগ নেই। নেই কোনো সঠিক পরিমাপ যন্ত্র। সুতরাং টিভির দর্শক কমেছে এ কথাটা যৌক্তিক নয়। যেমন অনলাইনে পত্রিকা পড়া গেলেও ছাপানো পত্রিকার পাঠক কমেনি। হোম ডেলিভারি খাবারের জন্য বাসাবাড়িতে রান্নাবান্না বন্ধ হয়নি। অনলাইনে কেনাকাটার সুবিধা থাকলেও শপিং মল বা বাজারহাট সবই চলছে। সুতরাং টেলিভিশন থেকে ইউটিউবের দর্শক বেশি এটা মনে করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। তবে হ্যাঁ ইউটিউবে সুবিধা অনেক, টিভির মতো এখানে প্রযোজক, পরিচালক দরকার নেই কিংবা কোনো বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়ারও দরকার নেই। চিত্রগ্রহণের জন্য কোনো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্যামেরা পারসনের প্রয়োজন নেই। হাতের মোবাইল ক্যামেরাটিই মোক্ষম যন্ত্র। এখানে স্ক্রিপ্টের প্রয়োজন নেই। বিশিষ্ট শিল্পী হওয়ারও দরকার নেই। এই চ্যানেলে যে কেউ শিল্পী হতে পারে। কোনো সেন্সর নেই। যা খুশি করা যায়, যা খুশি বলা যায়, যা খুশি দেখা যায়। কী করলেন তা বোঝা যায়, স্বাধীন মতামত পাওয়া যায়। চুরি করলে ধরাও যায়। স্পন্সর ছাড়া প্রচার হয়। বাজেট ছাড়া শুটিং হয়। আর জিনিস যদি ভালো হয় কিউ ছাড়াই ভিউ হয়। ইউটিউব হিট হয়। আর্টিস্ট তখন তারা (তারকা) হয়। চ্যানেলগুলোর গেস্ট হয়। এই ইউটিউবের বিষয় ভাবনার জন্য চিন্তাবিদের দরকার নেই। মোবাইল ক্যামেরা তাক করে ইচ্ছুক যে কাউকে বললেই হলো যার যা প্রতিভা আছে দেখান। কোনো মেকাপ বা সাজসজ্জার প্রয়োজন নেই। যে যেখানে যেভাবে আছেন, সেটাকেই মঞ্চ ধরে নিন। এবারে হাসেন, কাঁদেন, নাচেন, লাফ দেন, ডিগবাজি খান, চিৎকার করেন, গান করেন, ঝগড়া করেন, অভিনয় করেন, নকল করেন। মোট কথা যার যেটা ভালো লাগে সেটা করেন। তাদের ধারণা এ থেকে একটা না একটা বিষয় মানুষ ‘খাবেই’। এই ‘খাবে’ শব্দটি খাদ্য জাতীয় কোনো পদার্থ নয়, এই খাওয়া মানে পছন্দ করা। এই জাতীয় হাজারটা ভিডিও থেকে ২/৪টা ‘ভিডিও’ ভাইরাল হলেই চ্যানেল হিট। প্রচুর ভিউ হয়, সাবস্ক্রাইবার বাড়ে, ঘরে পয়সা আসে। বেকার জীবনে এ এক আশীর্বাদ। যে কারণে যত্রতত্র ক্যামেরা বাহিনী ছড়িয়ে পড়েছে। কখন যে কার কোনো দৃশ্য বা কথা নেটে ছেড়ে দেবে বলা যায় না। আবার এক শ্রেণির দর্শক আছে, যাদের ভালোর চাইতে খারাপটা দেখার আগ্রহ বেশি। তারা এগুলো লুফে নেয় এবং আপন আনন্দে ছড়িয়ে দেয়। যে কারণে নেটে ঘেঁটে এসব দেখতে হয় না, নানাজনের শেয়ারে সহজেই চোখে পড়ে। শুধু ইউটিউবই নয়, এনড্রয়েড অ্যাপ টিকটকের মাধ্যমেও আজকাল অনেকেই স্টার হচ্ছে। আর এর জন্য কোনো চ্যানেল বা কারও পেছনে ঘুরতে হয় না। মাত্র ১৫ থেকে ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিওর মাধ্যমে যে কেউ পৌঁছে যেতে পারে কোটি দর্শকের কাছে। আর কারও ক্রিয়েশন যদি ভালো হয়, তবে সে হয়ে যায় ফেমাস।

আবার অনেকে ফেসবুক লাইভে এসে নিজের নানান কীর্তি দেখান। কেউ বা দোকানও খুলে বসেছেন। জামা, কাপড়, শাড়ি, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী থেকে শুরু করে হেন জিনিস নেই যা তিনি বিক্রি করছেন না। অনলাইন অর্ডারে ব্যবসা চলছে। অনেকে আবার ফেসবুক লাইভে এসে চিত্তানন্দে নিজের বাসা-বাড়ি, বসার ঘর, শোবার ঘর, এমনকি বাথরুমও দেখান। শুধু সাধারণ মানুষ না, কিছু অসাধারণ মানুষকেও এই কর্মে দেখা গ্যাছে। এতেও অনেকে আনন্দ পান। অনেকে আবার ফেসবুক সাংবাদিক সেজে সমাজের ভুলত্রুটিও দেখাতে চেষ্টা করেন।

ইদানীং আবার ইউটিউবে মোটিভেশনাল স্পিকারের ছড়াছড়ি অর্থাৎ প্রেরণামূলক বক্তা। এখন অনেকেই এ কাজে নেমে পড়েছেন। এরা যে যার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কথা বলেন। যে কারণে এদের কিছু বক্তব্য মানুষকে করে উদ্দীপ্ত, কিছু করে ক্ষিপ্ত। কিছু হয় আনন্দদায়ক, কিছু হয় পীড়াদায়ক। যে কারণে ভালো বক্তারা হন বিব্রত।

ক্যামেরা, কথা এবং চ্যানেল সহজলভ্য হয়ে যাওয়ায় যার যেভাবে খুশি কথা বলেই যাচ্ছি। ফেসবুক-টুইটারেও লিখে যাচ্ছি। আর নেট দুনিয়ার অনেকেই এসব কল্পকাহিনি বা গুজব সত্যমিথ্যা যাচাই না করে লাইক, শেয়ার, কপি ও স্ট্যাটাসের মাধ্যমে অন্যের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। কেহ স্বনামে, কেউবা ভুয়া আইডি ব্যবহার করে বেনামে ছড়াচ্ছে। যা অন্যের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করছে। এটা এক ধরনের সাইবার অপরাধ। আমাদের অনেকেরই এই সাইবার অপরাধ সম্পর্কে ধারণা নেই, অর্থাৎ কখন কী করলে বা কী লিখলে ভার্চুয়াল মিডিয়ায় সাইবার অপরাধ হয়। ফেসবুক বা যে কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা গণমাধ্যমে এমন কিছু লেখা, পোস্ট করা, স্ট্যাটাস দেওয়া, মন্তব্য করা কিংবা ছবি বা ভিডিও আপলোড করা যা মানহানিকর, বিভ্রান্তিমূলক, অশালীন, অরুচিকর, অশ্লীল, আক্রমণাত্মক উদ্দেশে করা হয়, তা সাইবার ক্রাইম বা সাইবার অপরাধ বলে বিবেচ্য হয়। অনলাইন ব্যবহারে এমন কিছু করা যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয় মানুষের অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে, অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়াসহ নানান কারণে সাইবার অপরাধ হতে পারে। আবার এসব শেয়ার, লাইক বা ট্যাগ করলেও সাইবার অপরাধ হয়।

আজকাল ইউটিউবে কোন ভিডিও আপলোড করলে অর্থ আয় করা যায় অর্থাৎ যে চ্যানেলের যত বেশি ভিউজ এবং সাবস্ক্রাইবার ওই চ্যানেলের তত বেশি আয়। সে জন্য সৃজনশীল মৌলিক ভিডিও বাদ দিয়ে অনেক নব্য ইউটিউবার দেশের জনপ্রিয় সেলিব্রেটি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কিংবা সমাজের বিভিন্ন অঙ্গনের প্রতিষ্ঠিত মানুষ নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক ভিডিও নির্মাণ করে ইউটিউবে আপলোড করে। এর মাধ্যমে মনগড়া তথ্য, বিকৃত ছবি ও সংবাদ প্রচার করে। বলা যায় এক ধরনের তথ্যসন্ত্রাস। যার পুরোটাই হয়তো কল্পনাপ্রসূত। এসব ভিডিও আবার দ্রুত কিছু মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কারণ এতে থাকে চমক লাগানো শিরোনাম। ফলে ইউটিউবের ভিউ এবং সাবস্ক্রাইবার বাড়ে। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক, গত বছর মৃত্যুবরণ করেন ইত্যাদির নিয়মিত সংগীত পরিচালক আলী আকবর রুপু। মৃত্যুর একদিন পরেই আমার ছবি ছেপে একটি অখ্যাত অনলাইন পত্রিকায় শিরোনাম হলো ‘তাকে আর ইত্যাদিতে দেখা যাবে না’। অথচ সংবাদটির ভিতরে ঠিকই আলী আকবর রুপুর মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে লেখা হয়েছে, ‘ইত্যাদিতে আর আলী আকবর রুপুকে দেখা যাবে না’। সেক্ষেত্রে আলী আকবর রুপুর ছবিটি ছাপলেই প্রাসঙ্গিক হতো, কিন্তু ব্যবহার করল আমার ছবি। ফলে ভিতরে ঢুকে নিউজ পুরোটা না পড়ে অনেকেই আমার ফ্যান পেজে নানান মন্তব্য দেওয়া শুরু করলেন। ২/১ জন তো আমার আত্মার শান্তি কামনাও করলেন। শুধু আমার ক্ষেত্রেই নয়, বর্ষীয়ান অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান কিংবা সম্প্রতি শিল্পী এন্ড্রু কিশোরকে নিয়েও মৃত্যুগুজব শুরু হয়েছিল। মানুষ কতটা বিকৃত মানসিকতার হলে এই পর্যায়ে নামতে পারে তা ভাবাই যায় না। কী লেখা উচিত কিংবা উচিত নয় এ ব্যাপারেও অনেকের ধারণা নেই। কার সম্পর্কে কী লিখে কার কী ক্ষতি হলো সেটাও তাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। লক্ষ্য একটাইÑভাইরাল করতে হবে, অতএব ভিউ বাড়াও-অর্থ কামাও। এই ইউটিউবেই আমরা অনেক ভাইরাল ভিডিও দেখি। যা শিক্ষামূলক, অনুপ্রেরণামূলক, যেখানে থাকে না কোনো ভুল তথ্য। অসৎ উদ্দেশ্যে কিংবা ভাইরাল করার ইচ্ছায় কোনো বিষয়বস্তু নিয়ে ভিডিও নির্মাণ না করাই শ্রেয়। মনে রাখতে হবে, সব ভিডিও যেমন ভাইরাল হয় না তেমনি সব ভিডিও মানুষ গ্রহণও করে না।

সামাজিক দায়বদ্ধতা, মানবীয় অঙ্গীকার ও মূল্যবোধের চেতনা থেকে ইত্যাদিতেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রচার হয়ে আসছে দীর্ঘকাল থেকেই। যেগুলো আমরা দীর্ঘসময় গবেষণা করে তৈরি করেছি। এসব প্রতিবেদনের ভিউও হয়েছে লাখ লাখ। ২০১৬ সালের শেষে ইউটিউব চ্যানেল খুলে, খুব কমসংখ্যক ভিডিও (মাত্র ১৪৫টি) আপলোড করে, স্বল্প সময়ের ব্যবধানে আমাদের অর্থাৎ ফাগুন অডিও ভিশনের ইউটিউব চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইবার ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ সাবস্ক্রাইবার বাড়াবার জন্য দীর্ঘ সময়ের যেমন প্রয়োজন হয় না, তেমনি হাজার হাজার কন্টেন্টও দরকার হয় না। প্রয়োজন দর্শক গ্রহণযোগ্য মানসম্মত ও বিশ্বাসযোগ্য কন্টেন্ট বা বিষয়। তাহলে ভিউ এমনিতেই বাড়বে। যেহেতু ইউটিউবে নিজের প্রতিভা তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে। তাই অনেক ভ্রমণপ্রিয় তরুণকে দেখেছি তাদের ভ্রমণ বৃত্তান্ত মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যার যার ইউটিউবে আপলোড করছেন। অনেক দুর্গম অঞ্চল আছে আমাদের দেশে, যেখানে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। ওইসব স্থানে তরুণদের সহজে যাওয়া সম্ভব হলেও বয়স্কদের যাওয়া অত্যন্ত কঠিন। বিশেষ করে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি বা রাঙামাটির দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়। গত অনুষ্ঠানটি আমরা ধারণ করেছিলাম বান্দরবানে, যেখানে রয়েছে কেওক্রাডং, সাকা হাফং, তাজিংডংয়ের মতো সুউচ্চ পর্বতমালা। রয়েছে ডিম পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য এসবই ৩০০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। আমাদের অনুষ্ঠানটিও আমরা করেছিলাম সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬০০ ফুট উঁচুতে নীলাচলে। দেখেছি মেঘের খেলা, অসাধারণ সব দৃশ্য। এসব স্থানে অনেক জায়গায় হেঁটেও যেতে হয়। যেমন-ডিসেম্বর, জানুয়ারি ছাড়া বছরের অন্যান্য সব মাসেই কেওক্রাডং উঠতে হলে বগালেক থেকে প্রায় চার ঘণ্টা হেঁটে চূড়ায় উঠতে হবে। তেমনি থানচি, তিন্দু, রেমাক্রি, আন্ধারমানিক, জাদিপাই ঝরনা, রাইং লেক, ডাবল ফলস এসব অসাধারণ স্থানগুলো দেখতে হলে কয়েকদিন ধরে হেঁটে যেতে হবে। যা তরুণদের পক্ষে সম্ভব হলেও বয়স্ক মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। অজানাকে জানা এবং অদেখাকে দেখার আগ্রহের কারণে তরুণরা এসব দুর্গম অঞ্চলে যায় এবং মোবাইল ফোনে ধারণ করে ইউটিউবে ছড়িয়ে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে অপেশাদার চিত্রায়ন হলেও তাদের সাবলীল ধারা বর্ণনা এবং স্থানের বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। এর মাধ্যমে এই তরুণরা যেমন দেশের অপার সৌন্দর্য ইউটিউবে তুলে ধরছেন, তেমনি পর্যটন শিল্পেরও বিকাশ ঘটাচ্ছেন, পাশাপাশি এসব দেখিয়ে ভালো ভিউও পাচ্ছেন। আর অন্যদিকে এক শ্রেণির অসৎ ইউটিউবার উদ্ভট সংবাদ প্রকাশ, তথ্য বিকৃতি, অশোভন, অরুচিকর, মানহানিকর, বিভ্রান্তিমূলক বিষয়াদি ইউটিউবে প্রকাশ করে বিকৃত মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছে। পাশাপাশি ইউটিউবেও বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে।

আজকাল সেলফি ছাড়া যেন কোনো অনুষ্ঠানই পূর্ণতা পায় না। সেলফির ধারণাটা এসেছেÑজনমানবহীন জায়গা যেখানে ছবি তুলে দেওয়ার লোক নেই, সেখানে নিজের ছবি নিজেই যাতে তুলতে পারে সেজন্যই মোবাইল ফোনে এই সম্মুখ ক্যামেরার সংযোজন এবং সেলফি ধারণ। যা মানুষকে কিছুটা আত্মকেন্দ্রিকও করে তুলেছে। আজকাল অনেকেই কারও অনুমতি ছাড়াই যেখানে সেখানে সেলফি তুলছেন। যা বিব্রতকর। দূর থেকে আপত্তিকর অবস্থায় ভিডিও ধারণ করছেন এবং ছড়িয়ে দিচ্ছেন ইউটিউবে। যা অন্যায় এবং আইনগতভাবে দণ্ডনীয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে গণমাধ্যমের নীতিমালার মতো ইউটিউবের জন্যও দু-একটি নীতিমালা করার সময় এসেছে। কারণ ইউটিউবের এই ভিডিও শুধু আমাদের দেশেই দেখে না বিশ্বব্যাপী মানুষ দেখতে পায়। এতে যেমন আমাদের দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হতে পারে তেমনি ক্ষুণœও হতে পারে। সুস্থ ধারার ইউটিউবারের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। তারা আমাদের সামাজিক সচেতনতা, শিক্ষার প্রসার, নৈতিকতা ও আইনের স্বপক্ষে বিভিন্ন শিক্ষামূলক ভিডিও আপলোড করছে। যা বিপুলভাবে সমাদৃত হচ্ছে। ভুল সংবাদ বা ফেক নিউজ আগেও ছিল। আমরা বলতাম হলুদ সাংবাদিকতা। এ কথাটি এখন উঠেই গেছে। কারণ এখন চারদিকে অনেক ফেক বা ভিত্তিহীন সংবাদের ছড়াছড়ি। যা ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার ইত্যাদি যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুতগতিতে। যা অনৈতিক, অন্যায় এবং অপরাধ।

তবে সাইবার বুলিং এ আক্রান্ত হলে সাড়া না দেওয়াই উত্তম। কারণ একসময় এরা নিজেদের ভুল বুঝতে পারে। দর্শকদের বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায়ও এদের বোধদয় হতে পারে। বরং যে কারণে বা যাদের দ্বারা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন, তার স্বপক্ষে যথাযথ প্রমাণ সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করে রাখা ভালো। যা পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা করবে। কারণ প্রযুক্তির এই উন্নয়নের যুগে প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত যুক্তিহীন কিছু নতুন রোগ অনেকেরই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আসলে তথ্য কতটা সত্য, মূল কতটা নির্ভুল, উক্তি কতটা যুক্তিবহ তা নিয়ে ভাবনার অভাব থেকেই অনেকের স্বভাবে দাঁড়িয়ে যায়, ভুল ধরার অসত্য পথে যুক্তিহীনভাবে প্রযুক্তির অপব্যবহারের। মূল কথা না বোঝার ব্যর্থতা নিয়ে যথা তথা ভুল কথা লেখার বা বলার এই প্রথায় কল্যাণকর প্রযুক্তি হয়ে দাঁড়ায় ক্ষতির মাধ্যম। সত্য জানার বিচার বোধহীন এই প্রবণতার যত দ্রুত অবসান হবে তত দ্রুতই ফিরে আসবে সামাজিক সুস্থতা।

                লেখক : গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

সর্বশেষ খবর