মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক আইনে এর বৈধতা

বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান (এম.আর. হাসান)

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক আইনে এর বৈধতা

১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের তৎকালীন অস্থায়ী সরকার (বা মুজিবনগর সরকার) কর্তৃক জারিকৃত ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ ছিল মূলত বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি সাংবিধানিক দলিল। ২৬ মার্চ, ১৯৭১-এর প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (যিনি ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে তৎকালীন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে নির্বাচিত নেতা) কর্তৃক ঘোষিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাটি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রদান করা হয়, যা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রেই উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ঘোষণাপত্রে জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের ‘আইনানুগ অধিকার’ শব্দদয় বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। অর্থাৎ বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে ‘আইনানুগ’ বলার কারণ বা ভিত্তি এবং এর প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আলোকপাত করাই এ লেখাটির উদ্দেশ্য।

আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে ‘আইনানুগ’ বলার ভিত্তিটি পাওয়া যাবে (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী) ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ফ্রানসিসকোয় ২৬ জুন, ১৯৪৫-এ স্বাক্ষরিত জাতিসংঘ সনদ

 

(Charter of the United Nations)-এ। জাতিসংঘ সনদের অনুচ্ছেদ-১-এ জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যসমূহ বিবৃত হয়েছে। অনুচ্ছেদ-১-এর ২ নম্বর ধারায় এরূপ লক্ষ্য সম্পর্কে বলা হয় যে-

২। ‘সমঅধিকার এবং জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নীতির ভিত্তিতে জাতিসমূহের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উন্নয়ন করা’ (আন্ডারলাইন করার মাধ্যমে গুরুত্বারোপ করা হলো)।

ফলে, প্রথমত, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি আন্তর্জাতিক আইন তথা জাতিসংঘ সনদের অনুচ্ছেদ-১, ধারা-২-এর বিধান দ্বারা সমর্থিত। কিন্তু কোনো জাতি-গোষ্ঠী বা সম্প্রদায় কেবল জাতিসংঘ সনদের উপরোক্ত বিধান থাকার কারণে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের দাবিতে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে বা পৃথক রাষ্ট্র দাবি করতে পারে না। একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রীয় কাঠামো থেকে বিচ্ছিন্ন বা secede হতে পারে না। জাতিসংঘ সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইন ও প্রথা বিচ্ছিন্নতাবাদ বা secession সমর্থন করে না, বরং রাষ্ট্রীয় অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করে। ফলে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদ’ বা ‘secession’ এবং ‘আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার’ বা ‘right to self-determination’ এ দুটি মূলত সম্পূর্ণ পৃথক দুটি আইনি শব্দ বা আইনগত ধারণা। এ দুটি শব্দের আইনগত তাৎপর্য এবং পরিণামও ভিন্ন, যেমনই ভিন্ন এদের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। এ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অথরিটি হিসেবে গণ্য করা হয় আন্তর্জাতিক আইনের এমন ভাষ্যকারগণের মতে, জাতিসংঘ সনদে বর্ণিত আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার কেবল কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে পৃথক এবং স্বাধীন হওয়ার অধিকারকে বৈধতা প্রদান করে (অর্থাৎ সর্বক্ষেত্রে নয়)। দ্রষ্টব্য  Mitchell Hill, What The Principle of Self Determination Means Today (1995) । বিষয়টি স্পষ্ট হবে কানাডিয়ান সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক প্রদত্ত ইন রি. সিসেসন অব কুইবেক বা In Re Secession of Quebec মামলার রায় থেকে,  2SCR 217 [1998)। কানাডার ইতিহাসে বিভিন্ন পর্যায়ে কুইবেক নামক প্রদেশটি স্বাধীনতা দাবি করে আসছিল। একপর্যায়ে কুইবেক প্রদেশের স্বাধীনতার ইস্যুটি তৎকালীন গভর্নর ইন কাউন্সিল কর্তৃক কানাডার সুপ্রিম কোর্টের মতামত বা advisory opinion-এর জন্য প্রেরণ করা হয় এবং In Re Secession of Quebec রেফারেন্স মামলাটির উদ্ভব হয়। উক্ত মামলায় জাতিসংঘ সনদ, আন্তর্জাতিক আইন ও প্রথা ইত্যাদিসহ কানাডার সংবিধান এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর আলোকে কুইবেক জনগণের পৃথক রাষ্ট্র গঠনের বা স্বাধীনতার দাবির বিষয়ে কানাডার সুপ্রিম কোর্ট বিশদ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে। অবশেষে তাদের সার্বিক আলোচনা-পর্যালোচনার আলোকে কানাডার সুপ্রিম কোর্ট এই মতামত প্রদান করে যে, কানাডার সংবিধান কুইবেক প্রদেশকে (বা তার আইন সভাকে) একক সিদ্ধান্তে কানাডা থেকে পৃথক (secede) হওয়ার বা স্বাধীন হওয়ার অধিকার প্রদান করে না, বরং এটি (অনুমোদিত হলে) কানাডার সরকারব্যবস্থাকে এমনভাবে পরিবর্তন করে দেবে, যা কানাডার সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে স্পষ্টতই অসংগতিপূর্ণ। কানাডার সুপ্রিম কোর্ট তখন এ প্রশ্নটিও বিবেচনায় নিয়েছে যে, কানাডার সরকার গঠনে বা সরকারব্যবস্থায় অর্থবহ অংশগ্রহণের (meaningful participation-এর) সুযোগ কুইবেকের রয়েছে কিনা (যেমন, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ১৯৭০-এর নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরও সরকার গঠনের এই অধিকার বা সুযোগটি পায়নি)। এ প্রশ্নের উত্তরে কানাডার সুপ্রিম কোর্ট এই উপসংহারে আসে যে, যেহেতু কানাডার সরকার গঠন ও সরকার পরিচালনায় (কানাডীয় সংবিধান অনুযায়ী) কুইবেকের অংশগ্রহণ রয়েছে বা অংশগ্রহণের বিধান রয়েছে সেহেতু কানাডা থেকে তাদের পৃথক হওয়ার দাবি অগ্রহণযোগ্য।

উল্লেখ্য, এখানে কানাডার কুইবেক প্রদেশের দাবিকে, এর রাজনৈতিক ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক প্রেক্ষাপটে, বিচ্ছিন্ন হওয়া বা

secede হওয়ার একটি দাবি হিসেবেই আদালত কর্তৃক গণ্য করা হয়েছিল। তবে ওই মামলায় কুইবেকানদের আত্মনিয়ন্ত্রণের সব অধিকার (কেবল পৃথক হওয়ার অধিকার বাদে) সমর্থন লাভ করে। এ প্রসঙ্গে এটাও গুরুত্বের স্বার্থে লক্ষ্য করা প্রয়োজন যে, এ ধরনের বিতর্ক বা প্রশ্ন বা দাবি সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থায় (যেখানে পৃথক ভাষা বা কৃষ্টির বিশাল জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পৃথক প্রদেশ রয়েছে) লক্ষ্য করা যায়।

যা হোক, বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার এবং কুইবেক প্রদেশের জনগণের পৃথক রাষ্ট্র গঠনের দাবির মধ্যে অনেক মৌলিক, রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক ও সাংবিধানিক ব্যবধান রয়েছে। দুটি জনগণের দাবির ক্ষেত্রেই জাতিসংঘ সনদের অনুচ্ছেদ-১, ধারা-২-এর প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরার সুযোগ থাকলেও এটা লক্ষণীয় যে, কানাডার একটি সংবিধান ছিল (যাতে কুইবেক প্রদেশের সরকার গঠনে অংশগ্রহণের অধিকার স্বীকৃত ছিল) অথচ পাকিস্তানের কোনো সংবিধান ছিল না এবং অনুরূপ অধিকার প্রদানের প্রশ্নও ছিল না।

যা হোক, পাকিস্তানের জন্য একটি সংবিধান রচনা, প্রণয়ন ও গ্রহণের জন্য তৎকালীন পাকিস্তানে একটি সাংবিধানিক পরিষদ

(Constituent Assembly) গঠিত হয়েছিল। ১০ আগস্ট, ১৯৪৭ সালে উক্ত সাংবিধানিক পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় করাচিতে। কিন্তু পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল ১৯৫৫ সালে Constituent Assembly ভেঙে দিয়ে তদস্থলে একটি Constitution Convention প্রতিষ্ঠা করেন (Constitution Convention Order, 1955) জারি করার মাধ্যমে। তাঁর এরূপ ক্ষমতা প্রয়োগের বৈধতা Usif Patel Vs. The Crown (PLD 1955 FC 387) মামলায় চ্যালেঞ্জ করা হয়। উচ্চ আদালত গভর্নর জেনারেল কর্তৃক এরূপ সাংবিধানিক প্রকৃতির আইন জারি বা প্রণয়ন করার কার্যের সমালোচনা করে, যেহেতু এটি ছিল তাঁর এখতিয়ারবহির্ভূত। এ বিতর্কের সুরাহা করার লক্ষ্যে গভর্নর জেনারেল তখন ফেডারেল কোর্টের মতামত চাইলে তা থেকে Reference Case No.1 of 1955-এর উদ্ভব হয়। এ রেফারেন্স মামলার রায়ের আলোকে সংবিধান রচনা ও প্রণয়নের বৈধ এখতিয়ার  Constituent Assembly-এর বিষয়টি সাব্যস্ত হয় এবং এটি পুনর্বহাল হয়। অতএব, Constituent Assembly সংবিধান রচনা ও প্রণয়নের কাজে পুনরায় অগ্রসর হয়। অতঃপর, উক্ত সাংবিধানিক পরিষদ কর্তৃক প্রণীত Constitution Bill সাংবিধানিক পরিষদে উত্থাপন করা হয় এবং ২৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধানটি গৃহীত হয়। উল্লেখ্য, ওই Constituent Assembly-এর অন্যতম সদস্য (makers of the constitution) ছিলেন জনাব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, জনাব এ কে ফজলুল হক এবং জনাব শেখ মুজিবুর রহমান। এ সংবিধানটি প্রণীত হওয়ার আড়াই বছরের মধ্যে এবং এর অধীনে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগেই পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইসকান্দার মির্জা ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর রাতে পাকিস্তানের ১৯৫৬ সালের সংবিধানটি স্থগিত (abrogate) করে দেন, মার্শাল ল জারি করেন এবং ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভেঙে দেন। তিনি মন্ত্রীদের বরখাস্ত করেন এবং রাজনৈতিক দলসমূহকে নিষিদ্ধ করেন। সেনাপ্রধান জেনারেল আইয়ুব খানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত করেন। ঘটনার ধারাবাহিকতার এক পর্যায়ে জেনারেল আইয়ুব খান কর্তৃক ২৭ অক্টোবর, ১৯৫৮ তারিখে ইসকান্দার মির্জা অপসারিত হন, তাকে বন্দী করা হয় এবং ব্রিটেনে নির্বাসনে পাঠানো হয়। আইয়ুব খান নিজেকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত করেন।

১৯৬০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি প্রশ্নবিদ্ধ গণভোটের আয়োজন করে জেনারেল আইয়ুব খান নিজেকে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি গণ্য করার ব্যবস্থা করে নেন এবং পাকিস্তানের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়নের কর্তৃত্ব হাতে নেন। এরূপ একটি ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে তিনি নিজে (এক ব্যক্তি) ১ মার্চ, ১৯৬২ সালে পাকিস্তানের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন করেন। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, একটি সংবিধানের জন্মের নিয়ম-কানুন, পদ্ধতি বা পূর্বশর্তসমূহ এ ক্ষেত্রে পালিত হয়নি। যা হোক, এক পর্যায়ে ৮ জুন, ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান মার্শাল ল তুলে নেন এবং ১৫ জুলাই, ১৯৬২ সালে রাজনৈতিক দলসমূহের ওপর ইতিপূর্বে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেন।

এই সময় চলমান গণআন্দোলন ১৯৬৯ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে গণঅভ্যুত্থানের রূপ নেয়। যার চাপে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান ২৪ মার্চ, ১৯৬৯-এ দায়িত্বভার গ্রহণের জন্য জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে একটি পত্রের মাধ্যমে অনুরোধ করেন। তদপ্রেক্ষিতে, জেনারেল ইয়াহিয়া খান ২৫ মার্চ, ১৯৬৯-এ মার্শাল ল জারি করেন, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের ও সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ৩১ মার্চ, ১৯৬৯-এ তিনি নিজেকে রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত করেন, যা ২৫ মার্চ, ১৯৬৯ থেকে কার্যকর হবে মর্মে বিধান রাখেন। তিনি ১৯৬২ সালের সংবিধান স্থগিত করেন এবং ৪ এপ্রিল, ১৯৬৯-এ

Provisional Constitutional Order-1969 জারি করেন।

এরূপ অবস্থায় ১৯৬৯ সালে তৎকালীন পাকিস্তান পুনরায় সংবিধানবিহীন ও গণতন্ত্রবিহীন একটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়। অন্যদিকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছাত্র, শ্রমিক, জনতার এবং সর্বস্তরের মানুষের সম্মিলিত ও ব্যাপক গণআন্দোলনের চাপ জোরালো হতে থাকে। ছয় দফা দাবিসহ সাধারণ নির্বাচন ও সংবিধান প্রণয়নের দাবি প্রবলতর হতে থাকে। এ বাস্তবতা স্বীকার করেই একটি সংবিধানের রচনা ও তা গ্রহণের জন্য লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার, ১৯৭০ (পি.ও. নম্বর ২/১৯৭০ বা এল.এফ.ও.)-এর অধীনে ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এলএফওর ধারা ৮ অনুযায়ী তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয় (একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও হাই কোর্টের দুজন বিচারপতি যার সদস্য)। এ কমিশন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্পন্ন করে এবং অনতিবিলম্বে ফলাফল ঘোষণা করে; যা সর্বমহলে গৃহীত হয়।

১৯৭০ সালের এই সাধারণ নির্বাচনে বিশাল গণরায় আওয়ামী লীগ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষে যাওয়ায় এ দেশের জনগণ পাকিস্তানের সরকার গঠন করার বা সরকার গঠনে অংশগ্রহণ করার এবং সরকার পরিচালার বৈধ অধিকার লাভ করে, যা তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী অস্বীকার করে। তৎবিপরীতে দেখা যায় কানাডার সংবিধান অনুযায়ী কানাডার সরকার গঠনে অর্থবহ অংশগ্রহণের অধিকার কুইবেকের ছিল এবং তাদের এ অধিকার কানাডার সংবিধানের দ্বারাও স্বীকৃত ছিল। অথচ ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে ব্যাপক গণরায় পক্ষে থাকা সত্ত্বেও এ দেশের জনগণের ক্ষেত্রে তৎকালীন পাকিস্তানের শাসকমহল বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এ দেশের জনগণের সরকার গঠনের অধিকার বরং ২৫ মার্চ, ১৯৭১-এর গভীর রাতে একটি অন্যায় ও আকস্মিক যুদ্ধ এ দেশের জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয় এবং গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করে। এ অবস্থায় এ দেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার রক্ষা এবং তা আদায় ও প্রতিষ্ঠার একটি পরিষ্কার হেতু, আইনগত ভিত্তি এবং প্রেক্ষাপট তৈরি হয়।

ফলে, জাতিসংঘ সনদের অনুচ্ছেদ-১-এর ২ নম্বর আর্টিকেল মোতাবেক ২৬ মার্চ, ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা, ১০ এপ্রিল, ১৯৭১-এ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করা, মুজিবনগর সরকার গঠন করা এবং স্বাধীনতা অর্জনসহ সে লক্ষ্যে গৃহীত যাবতীয় ব্যবস্থাদি ও কার্যক্রম আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী সিদ্ধ বটে।

                লেখক : বিচারপতি।

সর্বশেষ খবর