বুধবার, ১ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

বর্ষ পরিক্রমাও আল্লাহর কুদরত

মুহম্মাদ আশরাফ আলী

বর্ষ পরিক্রমা ঘটে মহান আল্লাহর ইচ্ছায়; যে কুদরতের অংশ হিসেবে আসে রাত-দিন। যেভাবেই ভাগ করা হোক না কেন, দিন-রাত-সময় সবকিছুই মহান সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাধীন। সূরা আম্বিয়ার ৩৩ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘(আল্লাহ হচ্ছেন) তিনিই যিনি সৃষ্টি করেছেন রাত-দিন, চন্দ্র ও সূর্য। এদের প্রত্যেকেই পরিভ্রমণে নিয়োজিত রয়েছে নিজ নিজ কক্ষপথে, নিজস্ব গতিবেগ-সহকারে।’ এ বিষয়ে সূরা ইয়াসিনের ৩৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘সূর্য কখনোই চন্দ্রকে ধরতে পারবে না কিংবা রাত কখনো অতিক্রম করতে পারবে না দিনকে। প্রত্যেকেই পরিভ্রমণে নিয়োজিত নিজ নিজ কক্ষপথে, নিজস্ব গতিবেগ-সহকারে।’ চন্দ্র, সূর্য সবকিছুই যেমন আল্লাহর সৃষ্টি, তেমন চান্দ্র বা সৌরবর্ষ- যেভাবেই সময়কে ভাগ করা হোক না কেন সবকিছুর নিয়ন্তা মহান আল্লাহ। দিন-রাত সবকিছুতে যেমন মহান স্রষ্টার মহিমা প্রকাশ পায়, বর্ষ পরিক্রমাও তাঁর মহিমা-বিশেষ।

চন্দ্র, সূর্য, পৃথিবীসহ সব গ্রহ-নক্ষত্র আল্লাহর ইচ্ছায় সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে নিজের খলিফার মর্যাদা দিয়েছেন। আল্লাহ তার হাবিব রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বেছে নিয়েছেন মানুষের মধ্য থেকে। মানুষের উচিত আল্লাহ-প্রদত্ত সময় অর্থাৎ দিন-রাত-বছরকে তাঁর নির্দেশিত পথে অতিবাহিত করা। বিভিন্ন সূরায় এ বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। সূরা ফাতিহায় সরল পথ পাওয়ার জন্য ও বিপথগামীদের পথ থেকে রক্ষা পাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ সূরার ৫-৭ আয়াতে আছে- ‘তুমি আমাদের সরল পথ দেখাও, তাদের পথ যাদের তুমি অনুগ্রহ দান করেছ, তাদের পথ নয়, যারা ক্রোধ নিপতিত ও পথভ্রষ্ট।’ মানবজাতির সবারই আল্লাহর রহমত যে পথে সে পথ অনুসরণ করা উচিত। সূরা বাকারার তৃতীয় আয়াতে রয়েছে, ‘সৎ জীবিকা থেকে ব্যয় করার আদেশ সৃষ্টিকর্তার।’ এ ব্যাপারটি প্রতিটি মানুষ মেনে চললে পৃথিবীতে একটি সুষম সমাজ গড়ে উঠবে। সম্পদ বণ্টনে ভারসাম্য হবে। অসৎ উপার্জন থেকে মানুষ বিরত থাকলে পৃথিবীতে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হবে। ৪২ নম্বর আয়াতে রয়েছে মিথ্যার সঙ্গে সত্য না মিশিয়ে ফেলার আদেশ এবং জেনেশুনে সত্য গোপন না করার কথা। আল কোরআনের এ ঐশী শিক্ষার সফল বাস্তবায়ন ও চর্চা মানুষকে সঠিক পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করবে এমনটি কাক্সিক্ষত। ৪৪ নম্বর আয়াতেই রয়েছে, ‘তোমরা কি মানুষকে ভালো কাজের কথা বল আর নিজেরা ভুলে থাক, আবার কিতাবও পড়! তবু কি তোমরা বুঝবে না?’ অর্থাৎ কোরআন পাঠ করলে ও উপদেশ দিলে হবে না, এর থেকে শিক্ষা নিয়ে ব্যক্তিজীবনে সৎ, সুন্দর হয়ে অন্যদের জন্য উদাহরণ হতে হবে। ৬০ নম্বর আয়াতেই রয়েছে পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি না করার উপদেশ। ৮৩ নম্বর আয়াতে এক আল্লাহর ইবাদতের পাশাপাশি শিক্ষা রয়েছে মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকিনদের প্রতি সদয় হওয়ার, মানুষের সঙ্গে সৎভাবে কথা বলার আদেশ দেওয়া হয়েছে। আল কোরআনে সর্বশক্তিমান আল্লাহ মানুষকে যেভাবে চলার উপদেশ দিয়েছেন সেভাবে চলার মধ্যে রয়েছে সত্যিকারের জাগতিক ও আখেরাতের শান্তি। আল্লাহ আমাদের ২০২০ সালের প্রতিটি দিন তাঁর নির্দেশিত পথে চলার তৌফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর