বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

মাদকাসক্তি ও যুবসমাজ

আফতাব চৌধুরী

মাদকাসক্তি ও যুবসমাজ

দেশের তরুণ সমাজ একটি দেশের সম্পদ। এ তরুণ সমাজ যদি বিপথগামী হয় তাহলে জাতির সর্বনাশ। তরুণ সমাজকে উদ্দীপিত করে কবি লিখেছিলেন তাঁর অমর কাব্য ‘আঠারো বছর বয়স’। আঠারো বছর বয়সের যেমন ভালো দিক আছে, তেমন মন্দ দিকও আছে। তরুণ সমাজকে ভালো কাজে নিয়োজিত করতে পারলে যেমন সুফল মেলে হাতে হাতে, তেমন মন্দ কাজেও এদের জুড়ি মেলা ভার। সুকান্ত তাঁর কবিতায় শেষ চরণে এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে বলে প্রার্থনা করেছিলেন। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুও তাঁর ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রবন্ধে দেশের তরুণ সমাজকে উদ্দীপ্ত করেছিলেন। তরুণ সমাজ যে দেশের কল্যাণে কতটুকুু কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে, এ কথা ভালোই জানতেন নেতাজি। কিন্তু এই তরুণ সমাজ আজ অনেকটাই বিপথগামী। তারও আছে নানা ব্যাখ্যা। কেউ বলছেন হতাশা থেকেই দেশের তরুণ সমাজের বিরাট একটি অংশ আজ বিপথগামী। আর মাদকাসক্তিই হচ্ছে কারও কারও মতে সেই হতাশা থেকে মুক্তির তথাকথিত পথ। সাংসারিক টানাপোড়েন, বেকারত্ব, কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে না-পারার দুঃসহ যন্ত্রণা থেকেই আসে হতাশা। তাই মাদকাসক্তরা ভাবে, সাংসারিক সব ঝামেলা থেকে নিষ্কৃতি পেতে হলে মাদক সেবনই বুঝি উত্তম পন্থা। সমাজে থাকাও গেল অথচ কোনো ধরনের দায়দায়িত্ব বর্তাল না। কিন্তু এ ভুল ধারণাই যে একসময় কাল হয়ে দেখা দেয়, এ কথা বোঝার অবকাশ তারা খুব কমই পায়। জীবনের বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতকে জয় করার মানসিকতা হারিয়ে জীবন্মৃত হয়ে পড়ে এরা। তখনই সমাজের কাছে, পরিবার-পরিজনের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়ায় এসব মাদকাসক্ত। ক্রমে সমাজও এদের একঘরে করে ফেলে। একাকিত্বের জ্বালা, হতাশা, মাদকাসক্তির শেষ পরিণাম হয়ে দাঁড়ায় মৃত্যু। আর মৃত্যুকে জয় করার মতো কোনো অমৃতসুধা আজ অবধি কেউ পান করতে সক্ষম হননি, হবেনও না। এ তো অবধারিত সবার জন্যই। প্রতিবছর ২৬ জুন ছিল বিশ্ব মাদকবিরোধী দিবস হিসেবে পালিত হয়। বিভিন্ন সংগঠন মাদকবিরোধী বিভিন্ন সভার আয়োজন করে মাদক সেবনের অপকারিতা নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে। কিন্তু সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যাপার হচ্ছে, শুধু আলোচনা সভার মাধ্যমে এত বিস্তৃত ব্যাপারটির সমাধান সম্ভব নয়। সরকারি স্তরে যদি কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয়, মাদকবিরোধী আইন যদি প্রণয়ন করে প্রয়োগ করা না যায়, তাহলে এসব সভা-মিছিলের কোনো গুরুত্ব থাকবে না। জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে যেমন সভা-মিছিলের প্রয়োজন, তেমনি সরকারি স্তরে কড়া পদক্ষেপেরও প্রয়োজন। সচেতন নাগরিক সভা করবেন মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে, আবার সরকার নীরব থাকবে অবৈধ মাদক ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে বা ঢালাওভাবে মদের দোকানে লাইসেন্স দেবে, তাহলে মাদকবিরোধী অভিযান সার্থকতা লাভ করবে কীভাবে? জনগণ চাইবে এক, সরকার করবে ঠিক তার বিপরীত। এভাবে কোনো কাজেই সাফল্য আসবে না। আসতে পারে না। মাদকসেবন একটি সামাজিক সমস্যার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সমস্যাও বটে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর