বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

পাটকল শ্রমিকদের অনশন

দ্রুত সমাধানের সিদ্ধান্ত নিন

গত বছরের মতো এ বছরের প্রথম দিনটিও রাজপথে কাটিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা। দ্বিতীয় দফায় আমরণ অনশনে নেমেছেন তারা। পাটকল শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সরকার দৃশ্যত সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। প্রচন্ড শীতে রাজপথে অনশনরত পাটকল শ্রমিকের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আগের অনশনে দুই শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটায় এ ধরনের ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাটকল শ্রমিকরা মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে অনশন করছেন। গতকাল বুধবার তাঁদের অনশন চার দিনে পৌঁছেছে। পাটকল শ্রমিকদের অনশনে সরকারের মধ্যে উদ্বেগ থাকলেও তারা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। একসময় পাটকে বলা হতো সোনালি আঁশ। দেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা হিসেবে বিবেচিত হতো পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রাকে। সে পাট এখন জাতির জন্য গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের পাটকলগুলোয় এ মুহূর্তে মজুদ রয়েছে অন্তত ৮০ হাজার টন পাটপণ্য। দেশে পাটপণ্যের ক্রেতা একেবারে সীমিত। বিদেশেও পাট ও পাটপণ্যের চাহিদা ক্রমান্বয়ে কমছে। সরকারি পাটকলগুলো লাগাতার লোকসান করে চলছে স্বাধীনতার পর থেকে। বর্তমানে অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে, পাটকলে উৎপাদন না করে শ্রমিক-কর্মচারীদের বসিয়ে বেতন দিলেও লোকসানের পরিমাণ হ্রাস পাবে। এ প্রেক্ষাপটে মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ শ্রমিকদের ১১ দফা দাবি মেনে নেওয়া হলে তাতে লোকসানের পরিমাণ স্ফীত হবে। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর অবলুপ্তি ঘটিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য পাপ্য অর্থ মিটিয়ে দেওয়ার কথা ভাবার সুযোগ থাকলেও সরকার সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে অস্বস্তিতে ভুগছে। পাটকল শ্রমিকরা মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের যে দাবি জানাচ্ছেন তা অবশ্যই যৌক্তিক। পাটকলের লাভ-লোকসানের তারা কোনো পক্ষ নন। দুনিয়াজুড়েই রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান মানেই এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাইয়ের প্রতিষ্ঠান। পাটকলগুলোর কর্তাব্যক্তিদের কারণেই যে লোকসান গুনতে হচ্ছে তা অনস্বীকার্য। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকদের কোনো দায় না থাকায় হয় তাঁদের দাবি মেনে নেওয়া হোক, নতুবা ন্যায্য পাওনা মিটিয়ে মিলগুলো বন্ধ করে লোকসানের হাত থেকে জাতিকে রেহাই দেওয়া হোক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর