শনিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
বিচিত্রতা

কাপ্তাই হ্রদ

বাংলাদেশ এমনকি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম মনুষ্যসৃষ্ট স্বাদুপানির হ্রদ। প্রধানত  জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এর সৃষ্টি হলেও এ জলাধারে প্রচুর মিঠাপানির মাছ চাষ হয়। নৌবিহার, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও কৃষি আবাদ ইত্যাদিতেও এর অবদান উল্লেখযোগ্য। পার্বত্য চট্টগ্রামের কাপ্তাইয়ে কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দেওয়ার কারণে জলাধারটি গড়ে ওঠে। মূল লেকের আয়তন প্রায় ১,৭২২ বর্গ কিমি, তবে আশপাশের আরও প্রায় ৭৭৭ বর্গ কিমি এলাকাও হ্রদের কারণে প্লাবিত হয়েছে। মূলত রাঙামাটি জেলাতেই জলাধারটি সীমিত যার অন্তর্ভুক্ত উপজেলাসমূহ হচ্ছে রাঙামাটি সদর, কাপ্তাই, নানিয়ার চর, লংগদু, বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি।

ইংরেজি এইচ বর্ণের আকৃতিবিশিষ্ট কাপ্তাই লেকের দুটি বাহু শুভলংয়ের কাছে একটি সংকীর্ণ গিরিসংকট দ্বারা সংযুক্ত যা কর্ণফুলী নদীর গতিপথের একটি অংশ। হ্রদের ডান বাহু অর্থাৎ কাসালং দক্ষিণ দিকে দুটি অন্তঃপ্রবাহী নদী মাইনি ও কাসালং দ্বারা এবং পাশ দিয়ে কর্ণফুলী নদী দ্বারা পুষ্ট। রাঙামাটি-কাপ্তাই, অর্থাৎ বাম বাহুটি দুটি নদী, উত্তরে চেঙ্গী (বা চিংগ্রী) ও দক্ষিণে  রাইনখিয়াং দ্বারা পুষ্ট। কর্ণফুলী নদী তিনটি প্রধান শাখার জন্ম দিয়েছে- একটি রাঙামাটিতে, একটি ধুলিয়াছড়িতে ও অন্যটি কাপ্তাইয়ে। রাঙামাটি ও ধুলিয়াছড়ি শাখাদ্বয় বর্তমানে কাপ্তাই বাঁধ দ্বারা সৃষ্ট জলাধারের অধীনে। কাপ্তাই হ্রদ মধ্য কর্ণফুলী উপত্যকার প্রায় সমগ্র অংশ এবং চেঙ্গী, কাসালং ও রাইনখিয়াং নদীর নিম্ন মোহনাসমূহকে নিমজ্জিত করেছে। ভূতাত্ত্বিকভাবে কাপ্তাই-রাঙামাটি অঞ্চলের কাপ্তাই হ্রদের নিম্নাঞ্চল প্রতিবর্তী কর্দমশিলা ও পলিশিলার সঙ্গে প্রধানত হলুদাভ-বাদামি, সূক্ষ্ম থেকে মাঝারি দানাদার, ঘন থেকে তির্যক স্তরিত বেলেপাথরে গঠিত এবং ঊর্ধ্বাঞ্চল হলুদাভ-বাদামি, সূক্ষ্ম থেকে মাঝারি দানাদার, উপকৌণিক থেকে উপগলিত, মাঝারি থেকে কম বাছাই, ভারী থেকে ঘন স্তরিত এবং সুরক্ষিত পত্রছাপসমৃদ্ধ মাঝে মাঝে তির্যক স্তরিত বেলেপাথর এবং তার সঙ্গে স্ফটিক দানা, নুড়ি ও কাদা পাথর দ্বারা বৈশিষ্ট্যম-িত। শুভলং ও বরকলের আশপাশে অবশ্য হ্রদটি প্রধানত ভুবন স্তরসমষ্টি দ্বারা গঠিত। স্থানীয় লোকজন হ্রদটিকে ঘিরে রাখা প্রতিরক্ষামূলক গাছপালা উজাড় করে ফেলায় এসব শিলাপাথর বর্ষাকালে বৃষ্টির পানিতে সহজেই ক্ষয় হচ্ছে। এতে ভূমিধস সংঘটিত হচ্ছে এবং আলগা শিলা পদার্থসমূহ ঢাল বেয়ে গড়িয়ে নদীবাহিত হয়ে হ্রদে গিয়ে  পড়েছে। ফলে হ্রদটি দ্রুত ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নববই দশকের প্রথম দিকে যখন হ্রদটির বয়স ৩০ বছর, তখনই এর প্রায় ২৫% ভরাট হয়ে এসেছিল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর