শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

বিশ্ব ইজতেমা হোক শান্তিপূর্ণভাবে

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

বিশ্ব ইজতেমা হোক শান্তিপূর্ণভাবে

হজরতজী মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) এর হাত ধরে তাবলিগ জামাতের পথ চলা শুরু। আল্লাহভোলা, দীনহারা মানুষকে নবীর পথে আনার জন্য হজরতজী এক অদ্ভুত পন্থা বেছে নেন। গরিব কৃষক-শ্রমিক লোকদের কাছে গিয়ে বলেন, তোমরা কাজের বিনিময়ে যে টাকা পাও আমি তোমাদের পাওনা মিটিয়ে দেব। বিনিময়ে তোমরা আমার মজলিসে এসে বস। মসজিদে নামাজ পড়তে আস। এভাবে মানুষের হাতে পায়ে ধরে পকেটের পয়সা খরচ করে পথহারা মানুষকে প্রভুর পথে নিয়ে আসেন তিনি। আল্লাহ যখন বান্দার কাজ কবুল করেন, তখন দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে তার মিশন। হজরতজীর এ দাওয়াতি মিশনও ভারতের গন্ডি  পেরিয়ে বিশ্বের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়তে লাগল। আজকের তাবলিগ জামাত ও বিশ্ব ইজতেমার এই হলো শুরুর গল্প। অরাজনৈতিক-অহিংস এই দীনি সংগঠনের একমাত্র গর্ব ছিল তাদের মধ্যে কোনো দলাদলি নেই, ফাটল নেই, মতভেদ নেই। শুরু থেকেই তারা কোরআনে বলা এক মুমিন অন্য মুমিনের ভাই- এ আয়াতের বাস্তব প্রতিচ্ছবি হয়ে কাজ করছে। মানুষও তাদের এ দাবিকে বিনা দ্বিধায় চোখ বুঝে মেনে নিয়েছিল। দিন দিন তাবলিগ জামাতের সুনাম-সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে লাগল পৃথিবীর আনাচে-কানাচে। একপর্যায়ে বিশ্ব ইজতেমা এক পর্ব থেকে বেড়ে দুই পর্বের হয়ে গেল। তবুও মানুষের জায়গা হতো না। তারপর ইজতেমা ছড়িয়ে পড়ল জেলায় জেলায়। দুঃখজনক হলেও সত্য! অহিংস এ দাওয়াতি সংগঠনটির কিছু মানুষের তীব্র হিংস্ররূপ দেখেছে পুরো বিশ্ব। হৃদয়ের গভীর থেকে প্রার্থনা করছি, অন্তত বিশ্ব ইজতেমা যেন সুখে-শান্তিতে সুন্দরভাবে সমাপ্ত হয়ে যায়...। আর যেন কোনো রক্ত না ঝরে...। একজন ইজতেমাপ্রেমিক তাবলিগভক্ত কখনই এ বিরোধ, বিভেদ মেনে নিতে পারে না। শুধু তাই নয়, একজন মুসলমানও এমন হিংস্রতা কখনই প্রত্যাশা করে না। ঐক্য এবং ভ্রাতৃত্ব ইসলামের প্রাণ। পৃথিবীর অন্যসব ধর্ম ভ্রাতৃত্বকে এতটা গুরুত্ব দেয়নি ইসলাম যত বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। সব ধর্মই ব্যক্তিগত মুক্তিতে বিশ্বাস করে। তাই তাদের ইবাদত ব্যক্তিকেন্দ্রিক। তারা একাকী ইবাদত ও সাধনা করার জন্য লোকালয় ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু ইসলাম তো বৈরাগ্য ও সন্ন্যাসবাদকে সুস্পষ্ট হারাম করেছেই, পাশাপাশি প্রতিটি ফরজ ইবাদত ঐক্যবদ্ধভাবে করার নির্দেশ দিয়েছে। নামাজ, রোজা, হজ এগুলো সবই সামাজিকভাবে ১০ জনের সঙ্গে মিলেমিশে করার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। যেন মুসলমানদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব এবং ঐক্য সুদৃঢ় হয়। এ কথা সবাই জানে, যে কোনো সফলতার জন্য ঐক্যের চেয়ে বড় কোনো শক্তি নেই। পবিত্র কোরআনের সূরা হুজরাতে আল্লাহ বলেছেন, ‘মুমিনদের দুটি দল যদি ভেঙে যায়, তাহলে তোমরা তাদের মাঝে মিলিয়ে দাও।’ এই মিলিয়ে দেওয়ার কাজ হলো আলেমদের। মুরুব্বিদের। আফসোস! আজ আলেম আর মুরুব্বিরাই বিরোধ-বিভেদের উৎসবে মেতে উঠেছে। শুধু তাই নয়, এ বিরোধে তারা শরিয়তের চূড়ান্ত সীমা লঙ্ঘন করে সংঘাতের পর্যায়ে চলে গিয়েছে। আজ যারা ভাইয়ে ভাইয়ে বিরোধে লিপ্ত হয়েছেন, তাদের মনে রাখা দরকার কোনো দলই এর দায় থেকে বাঁচতে পারছেন না। আল্লাহর কাছে কেউই নেক হয়ে দাঁড়ানোর সুযোগ রাখছেন না। নবীর উম্মত হিসেবে তাবলিগের মুরুব্বিদের পায়ে ধরে বলছি, দয়া করে দীনের স্বার্থে, ইসলামের স্বার্থে ত্যাগ করুন। বিশ্বজুড়ে ইসলাম ও মুসলমানদের এই দুর্দিনে আপনারা ব্যর্থ হলে ইসলামেরই ক্ষতি হবে, তাবলিগের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে যাবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে দীনের সহি বুঝ দান করুন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর