দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ওয়ান-ইলেভেনের বর্ণচোরা তত্ত্বাবধায়ক শাসনামলে সরকারিভাবে জোর করে আদায় করা হয়েছিল ১ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। বন্দুকের নলের সামনে অথবা নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে আদায়কৃত অর্থের পরিমাণ যে আরও বেশি তা সহজেই অনুমেয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক শাসন কায়েম হয়। নতুন সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, তারা ওয়ান-ইলেভেনের সময় জোর করে আদায় করা অর্থ ব্যবসায়ীদের ফেরত দেবে। কিন্তু গত ১১ বছরে সেই অর্থ ফেরত না পাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা জিইয়ে আছে। ওয়ান-ইলেভেনের কালো দিনগুলোয় অস্ত্রের মুখে ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায় ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এর মধ্যে অবৈধ পন্থায় সরকারিভাবে আদায়কৃত অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্র“তি গত এক দশকেও বাস্তবায়ন হয়নি। ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবরা ক্ষমতা থেকে বিদায় নিলেও তাদের প্রেতাত্মারা এখনো সক্রিয়। সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের আস্থার সম্পর্কে অন্তরায় সৃষ্টির জন্য তারা কলকাঠি নাড়ায় টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্র“তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আস্থার সংকট থাকায় স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সত্ত্বেও দেশের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাণ খুলে সক্রিয় হতে পারেননি। দেশি বিনিয়োগের গতি বেগবান না হওয়ায় বিদেশিরাও বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দ্বিধা কাটিয়ে উঠতে পারছেন না। স্মর্তব্য, ২০০৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০০৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত একটি গোয়েন্দা সংস্থা ও টাস্কফোর্স ইনটেলিজেন্টস নামের একটি বিশেষ সংস্থার কর্মকর্তারা ৪০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১ হাজার ২৩২ কোটি টাকা জোর করে আদায় করে। এ টাকা ২ শতাধিক পে-অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা হয়। ২০০৯ সালে একাধিক মন্ত্রী জোর করে টাকা আদায়ের ওই ঘটনাকে বেআইনি ও অনৈতিক বলে অভিহিত করেন। এ টাকা ফেরতদানের প্রতিশ্র“তিও দেওয়া হয়েছিল সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে। প্রধানমন্ত্রীর ইতিবাচক মনোভাব ও হাই কোর্টের নির্দেশনা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোর করে আদায় করা অর্থ ফেরত দেওয়ার বিষয়টি আটকে আছে সর্বোচ্চ আদালতে সরকারের আপিলের কারণে। এ ভূমিকার অবসান হওয়া উচিত।