রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

সে-ই সবচেয়ে উত্তম যে আল্লাহর পথে ডাকে

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

সে-ই সবচেয়ে উত্তম যে আল্লাহর পথে ডাকে

দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ যিনি করেন, তাকে দায়ি ও মুবাল্লিগ বলা হয়। দায়ি ও মুবাল্লিগের অনেক মর্যাদা ও ফজিলত কোরআন-হাদিসে বলা হয়েছে। দায়ির সবচেয়ে বড় ফজিলত হলো, দায়ির চেয়ে উত্তম মানুষ, ভালো মানুষ, শ্রেষ্ঠ মানুষ আল্লাহর দুনিয়ায় আর কেউ নেই। আল্লাহ বলেন, ‘তার চেয়ে আর কে উত্তম কথা বলে, যে আল্লাহর পথে ডাকে, ভালো কাজ করে এবং বলে আমি একজন মুসলমান।’ সূরা হামিম সিজদাহ, আয়াত ৩৩।

এ আয়াতে প্রথম যে কথাটি বলা হয়েছে তা হলো, যিনি আল্লাহর পথে ডাকেন তার কথার চেয়ে আর কারও কথা শ্রেষ্ঠ নয়। যিনি সবচেয়ে ভালো কথা বলেন, সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ কথা বলেন, তিনি যে শ্রেষ্ঠ মানুষ সবচেয়ে ভালো মানুষ হবেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কেন তিনি সবচেয়ে ভালো মানুষ? এ বিষয়ে খুব সূক্ষ্ম কথা বলেছেন সুফিরা। তারা বলেন, মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা, হেদায়াতের পথ দেখানো এটা মূলত আল্লাহরই কাজ। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি, আমিই তাকে পথ দেখাব।’ এ পথ দেখানোর কাজটা আল্লাহর। কিন্তু আল্লাহর তো সরাসরি সামনে এসে বা তার কানে কানে অথবা তার হাত ধরে তাকে হেদায়াতের পথে নিয়ে যাওয়া এ দুনিয়ার পদ্ধতিতে সম্ভব নয়। তাই আল্লাহর এ কাজ যারা স্বেচ্ছায় কাঁধে নিয়েছে, তাদের আল্লাহ সম্মানসূচক ‘শ্রেষ্ঠ মানুষ’ পদমর্যাদা দিয়েছেন। যেমন আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, আল্লাহও তোমাদের সাহায্য করবেন।’ অর্থাৎ তোমরা মানুষকে আল্লাহর পথে ডেকে আমাকে সাহায্য কর, আমি তোমাদের দুনিয়া-আখেরাতে সব ধরনের সুবর্ণ সুযোগ দিয়ে সাহায্য করব। কোরআনে এই বাক্যাংশ থেকে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায়। এ পৃথিবীর মানুষের কাছে মর্যাদার মাপকাঠি হলো, কার কত টাকা আছে, কার কত ডিগ্রি আছে, কে কত ক্ষমতাবান, কার সৈন্যবাহিনী কত বেশি, কার পেশিশক্তি সবচেয়ে বেশি ইত্যাদি। কিন্তু আল্লাহ বলছেন, ক্ষণস্থায়ী এ পৃথিবীতে তোমরা যে মর্যাদার মাপকাঠি বানিয়ে নিয়েছ তা পুরোটাই ভুল। বরং সম্মান-মর্যাদার মাপকাঠি হওয়া উচিত চিরস্থায়ী জীবন আখেরাতকে কেন্দ্র করে। কারণ, ওটাই মানুষের আসল জীবন। ওখানে সে-ই সবচেয়ে ক্ষমতাশালী হবে, সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ হবে যে এ দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর কাজ করে আল্লাহর পথে চলে তার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পেরেছে। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সবচেয়ে উত্তম উপায় হলো মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা।

মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে, যে হেদায়াতের পথে মানুষকে ডাকে, যাদের ডেকেছে তাদের সব আমলনামার সওয়াব বোনাস হিসেবে তার আমলনামায় যোগ হবে।। এতে সাড়া দানকারী মানুষের সওয়াব থেকে কোনো কমবেশি করা হবে না। আরেকটি হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মানুষ মারা গেলে তার সব ধরনের আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে সে যদি কোনো সদকায়ে জারিয়া অর্থাৎ চলমান সওয়াবের কাজ রেখে যায় তাহলে তার আমলনামায় সওয়াবের ধারা কিয়ামত পর্যন্ত চলতেই থাকবে। সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত একটি কাজ হলো, কাউকে সে দীনি এলেম শেখাল বা কোনো আমল দেখিয়ে দিল অথবা হেদায়াতের পথে নিয়ে এলো, এতে ওই ব্যক্তি যত দিন এ আমল করবে এবং যত জনকে এ আমল শেখাবে, হেদায়াতের পথে নিয়ে আসবে সবার আমলনামার সওয়াব প্রথম ওই দায়ির আমলনামায় যোগ হবে।

দাওয়াতের কাজে কেউ সাড়া দিলেই শুধু এ মর্যাদা বা ফজিলত লাভ হবে তা নয়, দাওয়াতে মানুষ সাড়া না দিলেও দায়ি শ্রেষ্ঠ মানুষ হওয়ার মর্যাদা লাভ করবে। কোরআনের আয়াতে এ কথাই স্পষ্ট করে বলা হয়েছে।

লেখক : মুফাস্সিরে কোরআন।

সর্বশেষ খবর