সামাজিক অপরাধ যেভাবে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। সমাজের সব স্তরেই ছড়িয়ে পড়ছে একের পর এক বীভৎস ঘটনা। মনে হচ্ছে মানুষের পারিবারিক ও সমাজ জীবন থেকে একে অপরের প্রতি মায়া-মমতা উঠে যাচ্ছে। মূল্যবোধের সংকট ক্রমান্বয়ে ঘনীভূত হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের শীর্ষ প্রতিবেদনে সামাজিক অপরাধের যে তিনটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা মানুষের মনোজগতে অস্বস্তি দানা বেঁধে ওঠার জন্য যথেষ্ট। এর মধ্যে প্রথমটি মৌলভীবাজারের বড়লেখায় স্ত্রী-শাশুড়িসহ চারজনকে কুপিয়ে হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যা করেছেন নির্মল কর্মকার (৪০) নামের এক ব্যক্তি। নিহতরা সবাই চা শ্রমিক। রবিবার ভোরে উপজেলার পাল্লাতল চা বাগানে এ ঘটনা ঘটে। নির্মলের দায়ের কোপে গুরুতর আহত হয়েছেন পাশের ঘরের বসন্ত ভৌমিকের স্ত্রী কানন ভৌমিক। তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পারিবারিক কলহের জেরে ভোরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। এর একপর্যায়ে নির্মল স্ত্রী জলিকে দা দিয়ে কোপাতে থাকেন। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে শাশুড়ি লক্ষ্মী ও পাশের ঘরের বসন্ত এবং তার মেয়ে শিউলিকেও নির্মল কুপিয়ে হত্যা করেন। নির্মলের সৎ মেয়ে চন্দনা পালিয়ে রক্ষা পান। পরে নির্মল একটি ঘরে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন। একই দিন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার আমিন মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র মারুফ হোসেন হৃদয়কে (১৫) ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করেছে দুর্বৃত্তরা। আরেক ঘটনায় ওই দিন রংপুরে চাষের জমিতে পুঁতে রাখা এক ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সাত দিন নিখোঁজ থাকার পর মোশাররফ হোসেন পপির লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশের এক কনস্টেবলসহ তিনজনকে গ্রেফতার করাও হয়েছে। সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধির পেছনে বিচারহীনতার সংস্কৃতি অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করা হয়। আমাদের দেশে কোনো অপরাধ হলে বিচারের দীর্ঘসূত্রতা বিচার প্রার্থীদের নিয়তির জন্য লিখন হয়ে দাঁড়ায়। যা প্রকারান্তরে অপরাধীদের মনে সাহস জোগায়। একের পর এক হত্যাকান্ড সমাজে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করছে। সমাজের তো বটেই অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যরাও একে অপরের ওপর আস্থাহীনতায় ভুগছেন। এ অবস্থার অবসানে সমাজ সংশ্লিষ্ট সবাই সচেতন হবেন এমনটিই প্রত্যাশিত।