বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

হে আল্লাহ! আমাদের মানবসেবার সুযোগ দিন

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

হে আল্লাহ! আমাদের মানবসেবার সুযোগ দিন

মাঘের কনকনে শীতের দাপটে মফস্বলের মানুষ দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে শীতের প্রকোপে বেঁচে থাকাই দায় হয়ে উঠেছে। এমনিতেই তো মাঘের শীতের দোর্দন্ড ঠান্ডায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, তার ওপর রয়েছে একাধিক শৈত্যপ্রবাহের সংকেত। সঙ্গে থাকবে বৃষ্টিও। আমাদের মতো নাতিশীতোষ্ণ দেশের মানুষের জন্য শৈত্যপ্রবাহ মানেই বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তো এই সময় সাধ্যমতো উষ্ণতার ছোঁয়া নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো মানুষ হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আর একজন মুসলমান হিসেবে এটা আমাদের ইমানি কর্তব্যও। বিপদাপদ, দুর্যোগ-মুসিবতে মানুষের পাশে দাঁড়ানো ইসলামের মৌলিক শিক্ষাগুলোর একটি। সুফিগুরু ইমাম গাজ্জালি (রহ.) লিখেছেন, ধার্মিকরা আল্লাহকে পাওয়ার সাধনায় ব্যাকুল। কেউ বনে গিয়ে সাধনা করে। কেউ মসজিদে গিয়ে ইতেকাফ করে। কেউ বা পথে পথে পাগল হয়ে আল্লাহর সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু মাওলাকে এভাবে পাওয়া যায় না। পাওয়া সম্ভবও নয়। তাঁকে যদি পেতে হয়, তাঁর সন্তুষ্টি যদি হাসিল করতে হয় তাহলে তিনি যেভাবে বলে দিয়েছেন সেভাবে করতে হবে। আর আল কোরআন ও হাদিসের আলোকে জানা যায়, বান্দার ওপর আল্লাহ তখনই রাজি-খুশি হন, যখন সে আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি সদয় হয়, দয়া দেখায়।

শুধু মানুষ নয়, যে কোনো প্রাণীর প্রতি দয়া দেখালে, তাদের কষ্ট দূর করলে এর বিনিময়ে জান্নাত লাভ হবে বলে বিভিন্ন হাদিসে বলা হয়েছে। তো এখন দেশজুড়ে যে তীব্র শীতের প্রকোপ চলছে সামর্থ্যবানদের জন্য, আল্লাহ-পাগল বান্দাদের জন্য এটা একটা সুবর্ণ সুযোগ আল্লাহকে রাজি-খুশি করে পরকালের জীবনে জান্নাত অর্জন করার। মুসলিমের একটি বিখ্যাত হাদিস আমরা সবাই জানি। ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ বান্দাকে ডেকে বলবেন, আমি প্রচন্ড ক্ষুধায় কাতর হয়ে তোমার দুয়ারে হাত পেতেছিলাম, তুমি আমাকে খাবার না দিয়ে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছ। আমি তীব্র রোগগ্রস্ত হয়ে তোমার সেবাপ্রার্থী হয়েছি, তুমি সেবা না করে আমার থেকে পালিয়ে গিয়েছ- এসব কথা শুনে বান্দা অবাক হয়ে বলবে, হে আল্লাহ! আপনি হচ্ছেন সবার রিজিকদাতা-পালনকর্তা। আপনাকে কীভাবে আমি খাওয়াব কিংবা আপনার সেবা আমি কীভাবে করব? উত্তরে আল্লাহ বলবেন, দুনিয়ার হায়াতে তোমার কাছে আমার যেসব অনাহারী বান্দা এক মুঠো খাবারের আশায় হাত পেতেছিল, তাদের খাওয়ালে আমাকেই খাওয়ানো হতো। তোমার আশপাশের যেসব অসুস্থ মানুষ বিনা চিকিৎসায়, অবহেলা-অনাদরে রোগের কষ্টে মারা গেছে তাদের সেবা করলেই আমার সেবা করা হতো।’ তো এখন যারা শীতের প্রকোপে কষ্ট পাচ্ছে তাদের দেখে আমরা সামর্থ্যবানেরা যদি মুখ ফিরিয়ে রাখি, গরম কাপড়, অর্থ নিয়ে তাদের পাশে না দাঁড়াই, তাহলে কোনো সন্দেহ নেই কেয়ামতের দিন আল্লাহ আমাদের ধরে ধরে বলবেন, বান্দারে! আমি প্রচ- শীতে ছটফট করে মরেছি, কিন্তু তুমি আমাকে একটি গরম কাপড়ও দাওনি...। মুসলিমে আরেকটি হাদিস এসেছে- ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ বলেন, হে দুনিয়ার মানুষ! শোনো, এই পৃথিবীর সবকিছু আমার সৃষ্টি। এরা সবাই আমার পরিবারের মতো। এদের কষ্ট দিলে আমি কষ্ট পাই। আর এদের সেবা করলে আমি খুশি হই, যেন আমাকেই সেবা করা হয়।’ আল্লাহকে পাওয়ার জন্য আমাদের এত শ্রম, এত সাধনা, মসজিদ মন্দিরে এত ছোটাছুটি সবই বৃথা হবে যদি মানবতার কল্যাণে আমরা নিজেদের উজাড় করে দিতে না পারি। আসলে শরিয়তের ইবাদতগুলো মূলত একটা প্র্যাকটিস মাত্র। কীভাবে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাঁর সৃষ্টির সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেব- এ প্রশিক্ষণই ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে দেওয়া হয়।

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন।

www.selimazadi.com

 

সর্বশেষ খবর