রবিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ভাতের পরিপূরক খাদ্য মিষ্টি আলু

নজরুল ইসলাম

ভাতের পরিপূরক খাদ্য মিষ্টি আলু

সুস্থ-সবল দেহ গঠনে প্রয়োজন পরিমিত খাদ্য ও পুষ্টি। পুষ্টির অভাব একটি সুস্থ-সবল জাতি গঠনে প্রধান অন্তরায়। এ দেশের জনসংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যের চাহিদা যেমন বাড়ছে, তেমন বাড়ছে অপুষ্টিজনিত সমস্যা। খাদ্যে প্রোটিন, নানা ধরনের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের অভাবে এ দেশে কোটি কোটি শিশু স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারছে না। তারা বিভিন্ন ধরনের অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগছে। ফলে তাদের কর্মক্ষমতা ও মেধার বিকাশ ঘটছে না। এমনকি একমাত্র ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবে এ দেশে বছরে ৩০ থেকে ৪০ হাজার শিশু অন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বয়স্ক লোকেরাও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারছে না। এসব সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে আমাদের প্রধান খাদ্য চাল ও গমের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমিয়ে পরিপূরক খাদ্য হিসেবে গোল আলু ও মিষ্টি আলু জাতীয় খাদ্যের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া দরকার।

মিষ্টি আলু একটি প্রত্যন্ত পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাদ্য হিসেবে বিবেচিত। এটি বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভাতের পরিপূরক খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি একটি শ্বেতসার প্রধান খাদ্য। ফলে এটি আমাদের প্রধান খাদ্য চাল ও গমের বিকল্প হিসেবে খাওয়া যায়। এর পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ সিদ্ধ চালের কাছাকাছি। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’, যা চাল কিংবা গমের মধ্যে নেই। তা ছাড়া হলুদ শাঁসযুক্ত জাতের মিষ্টি আলু ক্যারোটিন (ভিটামিন-এ)-সমৃদ্ধ। প্রতিদিন ১৩ গ্রাম হলুদ শাঁসযুক্ত মিষ্টি আলু খেলে একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের ভিটামিন ‘সি’-এর চাহিদা পূরণ হতে পারে।

এ ছাড়া মিষ্টি আলুতে অন্যান্য ভিটামিনের মধ্যে যথেষ্ট ভিটামিন ‘বি’ পাওয়া যায়। খনিজ দ্রব্যের মধ্যে এতে যথেষ্ট ক্যালসিয়াম, লোহা, ফসফরাস ও পটাসিয়াম রয়েছে। মিষ্টি আলুর কন্দমূল ক্যালরির একটি ভালো উৎস। পরিমাণে কম হলেও এর প্রোটিনের জৈবিকমান খুবই ভালো। মিষ্টি আলুর প্রোটিনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে লাইসিন থাকে, যা চাল ও গমের প্রোটিনে খুব কম আছে। তাই ভাত ও আটার সঙ্গে মিষ্টি আলু খেলে প্রোটিনের আত্তীকরণ বৃদ্ধি পায়। মিষ্টি আলু অনেক গুণের অধিকারী। তার পরও এটিকে এ দেশে গরিবের খাদ্য হিসেবে অবহেলা করা হয়। অথচ পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে এটি একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় খাদ্য হিসেবে বিবেচিত। চীন, পাপুয়া নিউগিনি ও ফিলিপাইনের অনেক জায়গায় মিষ্টি আলু সে দেশের মানুষের প্রধান অন্যতম খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পাপুয়া নিউগিনিতে একজন লোক প্রতিদিন গড়ে এক কেজি পরিমাণ মিষ্টি আলু খান। জাপানে এটি খাদ্য হিসেবে বহুল পরিচিত।

যুক্তরাষ্ট্রে মোট উৎপাদনের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মিষ্টি আলু সে দেশের মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেসব দেশের মানুষের মতো আমরাও যদি বেশি করে মিষ্টি আলু খাই তাহলে এ দেশে ভাতের ওপর যে চাপ কমে আসবে শুধু তাই নয়, বরং ভাতের চেয়ে অনেক বেশি পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা হবে। এ দেশে মৌসুমের সময় মিষ্টি আলু চালের চেয়ে অনেক কম দামে পাওয়া যায়। এই সময় বেশি করে মিষ্টি আলু খেয়ে ভাতের ওপর চাপ কমিয়ে ভবিষ্যতের জন্য চাল সংরক্ষণ করে রাখা যায়।

এ ছাড়া মিষ্টি আলু কুচি করে কেটে অর্ধেক পরিমাণ আলু ও অর্ধেক পরিমাণ চাল একসঙ্গে মিশিয়ে রান্না করে খেলে চালের পরিমাণ কম লাগে। এতে চাল সাশ্রয় হয়। আবার মিষ্টি আলুকে অন্যান্য সবজির সঙ্গে মিশিয়ে অথবা এককভাবে তরকারি হিসেবেও খাওয়া যায়। তা ছাড়া শিঙ্গাড়া, হালুয়া, বুন্দিয়া ইত্যাদি প্রস্তুতেও মিষ্টি আলু ব্যবহৃত হয়। কাজেই আমাদের খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ এবং সুস্থ-সবল স্বাস্থ্য গঠনে প্রতিদিন ভাতের চেয়ে বেশি করে মিষ্টি আলু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। এ ছাড়া আমাদের দেশে অধিক পরিমাণ মিষ্টি আলু উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করা সম্ভব।

                লেখক : কলামিস্ট ও গবেষক।

সর্বশেষ খবর