সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ব্যাংকিং খাতের হাল-হকিকত

লুটেরাদের বিরুদ্ধে কঠোর হোন

এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই তত্ত্বের অতি প্রয়োগে শ্রীহীন হয়ে পড়ছে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা। বলা যায়, লুটেরাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে এ খাতটি। ব্যাংক ঋণের নামে প্রকাশ্যে লুট করা হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এক দুই লাখ টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে যেখানে সাধারণ মানুষের জুতার তলা খসে যায় সেখানে লুটেরাদের ঋণ নিতে কোনো কষ্টই করতে হয় না। ব্যাংক পরিচালনার দায়িত্ব যে পরিচালকদের হাতে লুটেরা কর্মকান্ডে তারাই এগিয়ে। অসৎ রাজনীতিক, ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং কথিত ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে তারা ঋণের নামে ব্যাংক লুট করার কাজে ব্যস্ত। কোনোরকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই এক ব্যাংকের পরিচালক আরেক ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন ইচ্ছামতো। ভুয়া কাগজপত্র মর্টগেজ দেখিয়ে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে যাচ্ছে জালিয়াত চক্রের সদস্যরা। কোনো মর্টগেজ ছাড়াই করপোরেট গ্যারান্টির নামে দেদার ঋণ দিচ্ছে বিভিন্ন ব্যাংক। ব্যাংক মালিক, ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা ও জালিয়াত চক্রের যোগসাজশে ব্যাংক ঋণের নামে লুটপাট চলায় ব্যাংক খাত থেকে প্রতিনিয়ত বেরিয়ে পড়ছে জনগণের গচ্ছিত টাকা। সংসদে অর্থমন্ত্রীর দেওয়া তথ্যমতে, শুধু ব্যাংক পরিচালকরাই ১ লাখ ৭১ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন; যা মোট বিতরিত ঋণের ১১ দশমিক ২১ শতাংশ। এর ফলে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। একই সঙ্গে সব ধরনের দায় এড়াতে, অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ কমাতে ও ব্যাংকের ফিন্যানশিয়াল রিপোর্ট ভালো দেখাতে অবলোপন করা হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের ব্যাংকিং খাত পরিচালিত হচ্ছে ভুল পথে। ঋণ খেলাপিদের শাস্তির বদলে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। ব্যাংক মালিকরাই ব্যাংকে গচ্ছিত জনগণের টাকা আত্মসাৎ করছেন নানা কৌশলে। এ লুটেরা কর্মকান্ডের জন্য তারল্য সংকটে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের অনেকে ব্যাংক ঋণের জন্য আবেদন করে নেতিবাচক জবাব পাচ্ছেন। ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের মালিক ব্যাংকের পরিচালক কিংবা ব্যাংক কর্মকর্তা নয়, সাধারণ মানুষ। এ টাকা নিয়ে লুটপাট চলায় ব্যাংকিং খাতের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সব কিছু ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে ব্যাংক লুটের সংস্কৃতি রুখতে সরকারকে এখনই কঠোর হতে হবে।

সর্বশেষ খবর