সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

বেড়েই চলেছে ধর্ষণ

প্রয়োজন দ্রুত বিচার ও কঠোর শাস্তি

দেশে ধর্ষণের মতো ভয়াবহ যৌন অপরাধ বেড়েই চলছে। বিচারের দীর্ঘসূত্রতা ও অপরাধীদের লঘু সাজা এ ধরনের অপরাধ সংঘটনে প্রকারান্তরে উৎসাহ জোগাচ্ছে। ধর্ষণ সম্পর্কিত আইনগুলোর মধ্যে অস্পষ্টতা থাকা এবং ধর্ষিতার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার ধারা বহাল থাকায় এ সংক্রান্ত বিচার প্রক্রিয়া অনেক ক্ষেত্রে প্রহসনে পরিণত হচ্ছে। ধর্ষণ মামলার বিচারের নামে ধর্ষিতার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকায় আদালতে এ বিষয়ে আসামি পক্ষের আইনজীবীদের জেরায় ধর্ষিতাকে নাস্তানাবুদ করার চেষ্টা চালানো হয়- যা ভিকটিমকে আরেক দফা ধর্ষণের শামিল। চতুর্দিকের অবহেলায় দেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে চললেও ঘৃণ্য এই অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের সাজার হার খুবই কম। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর ধর্ষণের মামলার নিষ্পত্তি হয় চার ভাগেরও কম। দীর্ঘ সময় ধরে চলা বিচার প্রক্রিয়ায় অধিকাংশ আসামিই খালাস পেয়ে যায়। জঘন্য এ অপরাধের বিচারে দীর্ঘসূত্রতার পেছনে মূলত আইনের দুর্বলতা ও অস্পষ্টতাই দায়ী। বিশেষজ্ঞদের মতে, কঠিন সাজা নিশ্চিত করার মাধ্যমে অপরাধীদের মনে ভয় ঢোকাতে পারলেই ধর্ষণের ঘটনা কমবে। অপরাধের সংখ্যা বাড়তে থাকা সত্ত্বেও ধর্ষণের অপরাধ, বিচার ও দন্ড দেওয়ার বিষয়ে সময়োপযোগী কোনো বিশেষ আইন নেই। তার পরও বিচার পাওয়ার আশায় ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৬০ সালের দন্ডবিধি, ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইন, ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের কয়েকটি ধারার ওপরে নির্ভর করতে হয় বিচারপ্রার্থীদের। সংশ্লিষ্ট আইনগুলোর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞা থাকলেও সেখানে ধর্ষণের শিকার যে কোনো লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, জাতিসত্তা বা প্রতিবন্ধিতার বিচারের বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। ভুক্তভোগীর জন্য ধর্ষকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের পর্যাপ্ত ব্যাখ্যাও নেই। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিস কেন্দ্র (আসক)-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ১ হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ৭৩২। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় দেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে দ্বিগুণ। এদিকে ২০১৯ সালে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৭৬ জনকে। আর আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ১০ নারী। এ অপরাধ বন্ধে আইন সংস্কারের পাশাপাশি দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা জরুরি এবং এর কোনো বিকল্প নেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর