শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

উম্মতের জন্য নবীজির উপদেশ

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

উম্মতের জন্য নবীজির উপদেশ

ইবনে হাজার আসকালিন (রহ.)-কে বলা হয় ‘হাফেজুদ দুনিয়া’ অর্থাৎ জগতের সব তাঁর মুখস্থ। বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ বুখারির শরাহ ফাতহুল বারির লেখক হওয়ায় হাদিসের ছাত্রদের কাছে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। হাদিসের ওপর তাঁর অনেক গবেষণা রয়েছে। ‘আল ইসদিদাদ লি ইয়াওমিল মাআদ’ অর্থাৎ পরকালের জীবনের প্রস্তুতি নামে তিনি একটি চমৎকার হাদিসগ্রন্থ সংকলন করেন। এখানে তিনি শুরুতে কিছু হাদিস উল্লেখ করেছেন, যেসব হাদিসে উম্মতের প্রতি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুটি করে উপদেশ দিয়েছেন। আসুন জেনে নিই বিভিন্ন সময় উম্মতকে দেওয়া তাঁর উপদেশগুলো-

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘দুনিয়ার মানুষ টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি এসব বৈষয়িক সম্পত্তিকে শ্রেষ্ঠ মনে করে। কিন্তু একজন মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো দুটি জিনিস। যার মাঝে এ দুটি অমূল্য সম্পদ পাওয়া যাবে দুনিয়া-আখেরাতে সে চূড়ান্ত সফলতা লাভ করবে। সে দুটি হলো- ১. আল্লাহর প্রতি ইমান আনা ও ২. মানুষের সেবায় জীবন কাটিয়ে দেওয়া।’ এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসরা বলেন, বান্দা যখন আল্লাহর প্রতি ইমান আনে তখন সে পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মানুষ হওয়ার বিরল সৌভাগ্য অর্জন করে। আর সে যখন ইমানের দাবি অনুযায়ী আল্লাহতায়ালাকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে মানুষের কল্যাণে জীবন অতিবাহিত করে, তখন সে আখেরাতের মুক্তি নিশ্চিত করেই দুনিয়া থেকে বিদায় নেবে।

অন্য এক হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতকে আরও দুটি উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘নানান কারণেই মানুষের মন মরে যায়। হৃদয়ের আনন্দ উড়ে যায়। গভীর নিস্তব্ধ হতাশা বুকের গহিনে বাসা বাঁধে। দুটি কাজ নির্জীব মনে সজীবতা ফিরিয়ে আনে। তা হলো- ১. আল্লাহওয়ালাদের সংস্রবে থাকা ও ২. জ্ঞানীদের জ্ঞানপূর্ণ কথা শোনা। (এতটুকু বলার পর তিনি একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।) অনুর্বর জমিন যেমন শীতল বৃষ্টিতে উর্বর হয়ে ওঠে, তেমনি জ্ঞানের অমিয় সুধায় ঘুমিয়ে পড়া মন জেগে ওঠে।’ জ্ঞানের তাৎপর্য বোঝাতে গিয়ে হজরত আলী (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যে ব্যক্তি জ্ঞানের পথে থাকে, সে আসলে জান্নাতের পথেই চলে। আর যে ব্যক্তি মূর্খের মতো দুনিয়ার পেছনে ঘোরে, সে আসলে জাহান্নামের চারদিকে ঘুরতে থাকে।

অন্তর কখন নির্জীব হয়ে পড়ে? কখন জিন্দা দিল ঘুমে বেহুঁশ থাকে? হজরত ওসমান (রা.)-এর হাদিসে সে কথা বলা হয়েছে। হজরত ওসমান (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘মানুষ যখন দুনিয়ার চিন্তায় বিভোর থাকে, দুনিয়া নিয়ে স্বপ্ন দেখে, তখনই তার সুন্দর জাগ্রত মনটি মরে যায়। তাই হে মানুষ! কখনোই মনকে দুনিয়ার ফিকিরে ডুবিয়ে রেখো না। সব সময় আখেরাতের চিন্তায় নিজেকে ব্যস্ত রাখবে। তাহলেই মন কখনো সজীবতা হারাবে না।’ প্রখ্যাত তাবেয়ি হজরত ইয়াহইয়া ইবনে মইন (রহ.) বলেন, ‘বুদ্ধিমান মানুষ কখনোই দুনিয়ার ফিকিরে ডুবে থেকে অন্তরের সজীবতা হারিয়ে ফেলে না। কারণ, বুদ্ধিমান মানুষমাত্রই জানে এ দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, পরকাল চিরস্থায়ী।’

একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবিদের ডেকে বললেন, ‘সাবধান! আমার দুটো উপদেশ খুব মনোযোগ দিয়ে শোনো। তা হলোÑ কখনোই গোনাহকে ছোট মনে করবে না। আর তওবার পর কখনোই কবিরা গোনাহে জড়িয়ে পড়বে না।’ এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসরা বলেন, নেক বান্দাদের শয়তান ছোট ছোট গোনাহে জড়িয়ে ফেলে। তারপর আস্তে আস্তে সে বড় গোনাহে জড়িয়ে যায়। আর সাধারণ মানুষকে কবিরা গোনাহ করায় আর বলে, পরে তাওবা করে নিও। তাই শয়তানের এই সূক্ষ্ম ধোঁকা থেকে বাঁচার জন্য রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতকে সাবধান করে দিয়েছেন। হজরত আবুবকর (রা.) বলেন, ‘যখন কোনো নেক বান্দা শয়তানের ধোঁকায় পড়ে গোনাহের কাজে জড়িয়ে যায়, তখন আসমানের ফেরেশতারা কাঁদতে থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত সে তওবা করে আবার নেকের পথে ফিরে না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতাদের কান্না-আফসোস থামে না।’ তাই হে আল্লাহর বান্দারা! গোনাহ থেকে সাবধান থাকো। কখনো যদি গোনাহ হয়েই যায়, সঙ্গে সঙ্গে তওবা করে চিরদিনের জন্য গোনাহ ছেড়ে দাও।

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন।

সর্বশেষ খবর