রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

আত্মহত্যার দেশ যুক্তরাষ্ট্র

সমৃদ্ধির মধ্যে লুকিয়ে সীমাহীন হতাশা

বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ দেশ, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রবক্তা যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ৯০ লাখ মানুষ আত্মহত্যার কথা ভাবে। আর আত্মহত্যা করে অর্ধলাখ মানুষ। ভয়ঙ্কর এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে ফেডারেল সরকারের ‘রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র’ (সিডিসি) থেকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৮ সালে ৪৮ হাজার ৩৪৪ জন আত্মহত্যা করেছেন। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ৪৭ হাজার ১৭৩। ৩০ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ১৯৯৯ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে আত্মহত্যার হার বেড়েছে ৩৫ ভাগ। যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান যে ১০টি কারণ রয়েছে তার একটি হচ্ছে আত্মহত্যা এবং অন্যটি নিউমোনিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জা। আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব সুইসাইডোলজির একজন বোর্ড মেম্বার বলেছেন, আত্মহত্যা রোধে বিজ্ঞানভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে কেউই এখন পর্যন্ত যত্নবান হননি। এমন অবস্থা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আত্মহত্যার প্রবণতাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত এবং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি লাখে ১৪.২ জন আত্মহত্যা করছেন। ২০১৭ সালে ১ কোটি ৬ লাখ মার্কিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। এর মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন ৩২ লাখ। শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার প্রক্রিয়া অবলম্বন করেন ১৪ লাখ। বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও সমৃদ্ধ দেশ যুক্তরাষ্ট্রে আত্মহত্যার ভয়াবহ প্রবণতা বিবেকহীন যান্ত্রিক সভ্যতার অন্তঃসারশূন্য অবস্থারই প্রতিফলন ঘটিয়েছে। বিশ্বের কথিত উন্নত দেশগুলোর মানুষ ক্রমেই যান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন হয়ে উঠছে। তাদের জীবনে হৃদয়বৃত্তি উপেক্ষিত হচ্ছে। মানুষের কাছে অন্য সবকিছুর চেয়ে বস্তুগত স্বার্থ প্রাধান্য পাওয়ায় হতাশাও বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে প্রতিদিন ১৩৩ জন আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এর অন্তত ৫০ গুণ মানুষ। যাদের সিংহভাগ শেষ পর্যন্ত প্রাণে বেঁচে যান। যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর অন্যতম কারণ এখন আত্মহত্যা। এতে প্রমাণিত হয়, সমৃদ্ধ এ জনপদের মানুষ আশান্বিত হওয়ার বদলে হতাশায় ভুগছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হৃদয়বৃত্তির বিকাশ ঘটাতে হবে। পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা ও আস্থার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হবে। যান্ত্রিক মনোভাবের বদলে প্রাধান্য দিতে হবে হৃদয়বৃত্তিকে।

সর্বশেষ খবর