সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
ইতিহাস

মীরজুমলা

মীরজুমলা (১৬৬০-১৬৬৩ খ্রি.) বাংলার সুবেদার। জন্মসূত্রে তিনি ছিলেন ইরানি এবং প্রথমে তার নাম ছিল মুহম্মদ সাঈদ। মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে তিনি মুয়াজ্জম খান, খান-ই-খানান, সিপাহ সালার এবং ইয়ার-ই-ওয়াফাদারের মতো বিভিন্ন উপাধি লাভ করেছিলেন। তবে মীরজুমলা নামেই তিনি ইতিহাসে সমধিক পরিচিত। ইস্পাহানের আর্দিস্তানে ১৫৯১ খ্রিস্টাব্দের দিকে তার জন্ম হয়। তিনি ছিলেন এক দরিদ্র তেল-ব্যবসায়ীর পুত্র। বাল্যকালে মীরজুমলা কিছুটা পড়তে, লিখতে এবং অঙ্ক কষতে শিখেছিলেন, যার ফলে তিনি হীরক খনির জন্য বিখ্যাত গোলকুন্ডার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক হীরক ব্যবসায়ীর অধীনে কেরানির চাকরি লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি অন্য একজন ব্যবসায়ীর অধীনে চাকরি নিয়ে ভারতে এসেছিলেন। তিনি অবশ্য নিজেই হীরার ব্যবসা শুরু করেন, কয়েকটি হীরক খনি ইজারা নেন এবং ঝুঁকিপূর্ণ সামুদ্রিক বাণিজ্যে লিপ্ত হন। ক্রমে ক্রমে বহু জাহাজের মালিক হয়ে তিনি এক খ্যাতিমান ব্যবসায়ী রূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। মীরজুমলা গোলকুন্ডার সুলতানের অধীনে চাকরি গ্রহণ করেন এবং রাজ্যের উজির বা প্রধানমন্ত্রীর পদে উন্নীত হন। তিনি কর্ণাটক রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে তা দখল করে প্রচুর ধনসম্পদ লাভ করেন। বিষয়টি তার প্রতি গোলকুন্ডার সুলতানের সন্দেহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দাক্ষিণাত্যের মুঘল সুবাহদার শাহজাদা আওরঙ্গজেব তার উন্নতির সহায়ক হন এবং সম্রাট শাহজাহান তার নিরাপত্তা বিধান করেন। সম্রাট তাকে মুয়াজ্জম খান উপাধি প্রদান করে সম্মানিত করেন এবং তার পদমর্যাদা ৬০০০ জাট ও ৬০০০ সাওয়ারে উন্নীত এবং তাকে দিউয়ান-ই-কুল বা প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। সম্রাট আওরঙ্গজেবের অধীনে মীরজুমলা শাহ সুজার মোকাবিলা করার দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। খাজোয়ার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে শাহ সুজা তান্ডায় পালিয়ে যান এবং ৯ মে ১৬৬০ খিস্টাব্দে ঢাকায় পৌঁছেন। মীরজুমলা খাজোয়া থেকে তান্ডা হয়ে ঢাকা পর্যন্ত শাহ সুজার পশ্চাদ্ধাবন করেন। কিন্তু সুজা ঢাকা থেকে পূর্ব সীমান্ত অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত আরাকানের রাজার কাছে আশ্রয়লাভ করেন। মীরজুমলা ঢাকায় পৌঁছার অল্পদিন পরই বাংলার সুবাহদার হিসেবে তার নিয়োগের রাজকীয় ফরমান লাভ করেন ১৬৬০ খিস্টাব্দে।

মীরজুমলার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ উপাধি ও পুরস্কার প্রদান ছাড়াও মনসব বৃদ্ধি করে সম্রাট তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছিলেন। দায়িত্ব গ্রহণ করেই তিনি প্রশাসনকে পুনর্গঠিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। উত্তরাধিকার যুদ্ধ চলাকালে শাহ সুজার অনুপস্থিতির কারণে প্রশাসন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল এবং সেখানে অবাধ্যতা এবং একগুঁয়েমি দেখা দিয়েছিল। তিনি সুজা কর্তৃক রাজমহলে রাজধানী স্থানান্তর বাতিল করে ঢাকাকে তার পূর্বতন গৌরবে পুনঃঅধিষ্ঠিত করেন। এরপর তিনি বিচার বিভাগের প্রতি নজর দেন। তিনি অসৎ কাজী ও মীর আদলদের বরখাস্ত করে তাদের স্থলে সৎ ব্যক্তিদের নিয়োগ দান করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর