বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

রসুলুল্লাহ (সা.) গরিবি জীবন যাপন করেছেন

মুহাম্মদ ওমর ফারুক

রসুলুল্লাহ (সা.) গরিবি জীবন যাপন করেছেন

গরিবি অবস্থার জন্য হতাশ হওয়া উচিত নয়। কেউ গরিব বলে তাকে উপেক্ষা করাও অনুচিত। কারণ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই গরিবি জীবন যাপন করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘একদিন এক লোক রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, হে আল্লাহর রসুল! আল্লাহর কসম! আমি নিঃসন্দেহে আপনাকে ভালোবাসি। তিনি বললেন, তুমি যা বলছ, তা চিন্তা করে বল। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমি নিঃসন্দেহে আপনাকে ভালোবাসি। এরূপ তিনি তিনবার বললেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যদি তুমি আমাকে ভালোবাসো, তাহলে দারিদ্র্যের জন্য বর্ম প্রস্তুত রাখ। কেননা, যে আমাকে ভালোবাসবে স্রোত তার শেষ প্রান্তের দিকে যাওয়ার চেয়েও বেশি দ্রুতগতিতে দারিদ্র্য তার কাছে আগমন করবে।’ তিরমিজি। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দোয়া আল্লাহ কবুল করেছিলেন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! ওফাতের সময় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো দিনার বা দিরহাম রেখে যাননি। কোনো গোলাম বাঁদিও রেখে যাননি; বরং তিনি যে লৌহবর্মটি দিয়ে জিহাদ করতেন তাও ৩০ কফিজ (এক প্রকার আরবি পরিমাপ) যবের বিনিময়ে বন্ধক রেখে যান। তাঁর পরিবারে এমন অনেক রাত কেটেছে, যখন তাঁরা রাতের খাবার গ্রহণের জন্য কিছুই পাননি।’

মক্কি জীবনে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিবারে অভাব-অনটন ছিল নিত্যকার ঘটনা। দাওয়াতের উদ্দেশ্যে তিনি সফরে যেতেন। এমন এক সফরের কথা তিনি এভাবে বর্ণনা করেছেন, ‘আমি আর বিলাল সফরে বের হয়েছি, একাধারে তিন দিন চলে গেছে, আমাদের সঙ্গে কোনো খাবার ছিল না। বিলালের বগলে লুকানো (পোঁটলা বাঁধা) যৎসামান্য খাবার ছাড়া একটা প্রাণ বেঁচে থাকতে পারে এতটুকু খাবারও আমাদের কাছে ছিল না।’ এমন অভাবগ্রস্ত অবস্থায় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল আপনি চাইলে মক্কার পাহাড়কে সোনায় পরিণত করে দেওয়া হবে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি তা চাই না বরং আমি চাই এ অভাব-অনটনের মধ্যেই থাকব। এক ওয়াক্ত খাবার খাব আর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করব। আবার এক ওয়াক্ত উপবাস থাকব আর ধৈর্য ধারণ করব।’ মক্কার কুরাইশরা তাঁকে রাজত্ব প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছিল। তিনি তা গ্রহণ না করে দরিদ্রতাকেই আপন করে নিয়েছিলেন। এতেই প্রমাণিত হয়, তিনি দরিদ্রতাকে কতটা পছন্দ করতেন। মদিনার জীবনে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে নববীর পাশে তাঁর প্রত্যেক স্ত্রীর জন্য পৃথক কামরা করে দিয়েছিলেন। মেহমানদের জন্য ছিল পৃথক একটি কামরা। প্রতিটি কামরার দেয়াল খেজুর গাছের শাখার মধ্যে কাদামাটি লাগিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল। ছাদও ছিল খেজুর পাতা দিয়ে তৈরি। তেলের অভাবে অনেক সময় সান্ধ্যবাতিও তাঁর ঘরগুলোয় জ্বলত না। ঘরের কাজ নবীপত্নীরা নিজেরাই করতেন। এমন সাদাসিধা ছিল তাঁর পারিবারিক জীবন। তিনিসহ সব নবী-রসুল দুনিয়ায় এসেছেন আল্লাহর দীন কায়েমের জন্য, ভোগবিলাসের জন্য নয়। তাদের সুন্নাত পালনে ভোগবিলাসিতা থেকে দূরে থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদের সে তৌফিক দান করুন।

                লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর