শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

সৎকর্মের পুরস্কার ও অসৎকর্মের সাজা

হাফেজ মুফতি মিজানুর রহমান
সিনিয়র পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, ঢাকা।

পার্থিব এ জীবনে আমরা যা-ই করি  রব্বুল আলামিন সবকিছুর হিসাব রাখছেন। ভালো কাজ করলে তার জন্য যেমন চিরস্থায়ী জান্নাতে উত্তম পুরস্কারের ব্যবস্থা রয়েছে, তেমন মন্দ কাজের জন্যও রয়েছে ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক অগ্নিকুন্ডের স্থান জাহান্নামে। মর্মন্তুদ শাস্তি। আল কোরআনে ঘোষিত হচ্ছে, ‘যে ব্যক্তি সৎকর্ম নিয়ে আসবে সে তদপেক্ষা উত্তম ফল লাভ করবে, আর কেউ মন্দ কর্ম নিয়ে এলে- যারা মন্দকর্ম করছে, ওদের তারই শাস্তি দেওয়া হবে যা ওরা করত।’ সূরা আল কাসাস, আয়াত ৮৪। দুনিয়ায় সৎকর্ম করে অনেক সময়ে পুরস্কারের পরিবর্তে তিরস্কৃত হতে হয়, বিপরীতে অনেকে মন্দ কাজ করেও হতে পারে পুরস্কৃত। আখেরাতে এমনটি হওয়ার বিন্দুমাত্রও সুযোগ নেই। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অতএব যে ব্যক্তি বিন্দুমাত্র সৎকর্ম করেছে সে তা দেখতে পাবে। আর যে ব্যক্তি বিন্দুমাত্র অসৎকর্ম করেছে সেও তা দেখতে পাবে।’ সূরা জিলজাল, আয়াত ৭-৮। পৃথিবীতে আদম (আ.) থেকে অদ্যাবধি যত মানুষ এসেছে, কেয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ আসবে রব্বুল আলামিন কেয়ামতের পর তাদের একত্র করে আমলনামার লিখিত প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার করবেন। অবশ্য এ সময় মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, হাত-পা কথা বলবে এবং ন্যায়-অন্যায়ের সাক্ষ্য দেবে। শেষ বিচারের দিন প্রতিটি মানুষ তার দুনিয়ার জীবনের কর্মফল অনুযায়ী ন্যায্য প্রতিদান পাবে। মন্দ কাজ করে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কেননা আল্লাহতায়ালা সবকিছু জানেন। এ ছাড়া প্রমাণস্বরূপ রয়েছে তার আমলনামা, যে জমিনে মন্দ কাজ সংঘটিত হয়েছে সে জমিন, দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। ভালো কাজ করলে পুরস্কার তথা জান্নাত আর মন্দ কাজ করলে শাস্তি তথা জাহান্নাম। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ‘আজ প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের প্রতিফল দেওয়া হবে, আজ কারও প্রতি জুলুম করা হবে না। আল্লাহ হিসাব গ্রহণে তৎপর।’ সূরা আল-মুমিন, আয়াত ১৭।

ইসলামের আদল-ইনসাফ বা ন্যায়বিচারের দাবি হচ্ছে যেমন কর্ম তদনুযায়ী প্রতিফল পাওয়া। সৎকর্ম করলে কাজের হার অনুসারে পুরস্কারপ্রাপ্তি আর অসৎকর্ম করলে তার পরিমাণ অনুযায়ী শাস্তি। সৎকর্ম সম্পাদনের প্রতিফল সম্পর্কে আল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘কেউ কোনো সৎকর্ম করলে সে তার ১০ গুণ পাবে এবং কেউ কোনো অসৎকাজ করলে তাকে শুধু তারই প্রতিদান দেওয়া হবে।’ সূরা আল-আনআম, আয়াত ১৬। এজন্য মানবজাতিকে অপকর্ম প্রতিরোধের শিক্ষা দিয়ে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাবধানবাণী ঘোষণা করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কাউকে অন্যায় কাজ করতে দেখে, তাহলে সে যেন তার শক্তি দ্বারা তা প্রতিহত করে; যদি সে এতে অক্ষম হয়, তবে মুখ দ্বারা নিষেধ করবে; যদি সে এতেও অপারগ হয়, তবে সে অন্তর দ্বারা ঘৃণা পোষণ করবে।’ মুসলিম।

বান্দা যদি ভুলবশত কোনো ঘোরতর পাপ কাজ করে ফেলে আর নিজের মধ্যে অনুশোচনা জাগ্রত হয় আর কায়মনোবাক্যে সিজদারত হয়ে তওবা করে আল্লাহর দরবারে ক্ষমাভিক্ষা চায় তাহলে আল্লাহ দয়াপরবশ হয়ে সেই বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। তাই আসুন, পরকালীন জীবনের ভয়ভীতির শঙ্কা মাথায় রেখে পার্থিব জীবনে সব ধরনের অনৈতিক, পাপ কাজ, অন্যায়-অপকর্ম থেকে নিজেদের সর্বদা বিরত রাখি এবং জাগতিক ও পারলৌকিক জীবন সর্বতোভাবে সুখ-শান্তিময় করে তোলার চেষ্টা করি।

 

সর্বশেষ খবর