মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ঢাকার তীব্র যানজট ১০ মাসে ৮০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব

সরকার মাহবুব

ঢাকার তীব্র যানজট ১০ মাসে ৮০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব

ঢাকা মহানগরীতে যানজটের তীব্রতা কেবল বাড়ছেই। মেট্রোরেল লাইন স্থাপনের কাজ শুরু হওয়ার পর যানজটের তীব্রতা আরও প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কদিন আগেও ঢাকায় যে পথ পাড়ি দিতে লাগত এক ঘণ্টা, এখন সে পথে লাগছে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা। কর্মব্যস্ত লাখ লাখ মানুষ যানবাহনে বসেই কোটি কোটি ঘণ্টা অলস সময় পাড়ি দিচ্ছে। যানবাহনের জ্বালানি পুড়ছে আর মানুষের জীবন থেকে ঝরে যাচ্ছে মূল্যবান সময়।

হয়তো মেট্রোরেলের পিয়ারগুলো উঠে দাঁড়ালে বিকল্প ব্যবস্থায় যান চলার ব্যবস্থা করে পথের অলস সময় কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। তবে আমার বিবেচনামতে, যানজটের এ অসহ্য অবস্থা আরও দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকবে। তাই এ অসহ্য যানজট থেকে পরিত্রাণের উপায় দ্রুত প্রয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

মিরপুর থেকে রোকেয়া সরণি হয়ে ফার্মগেট শাহবাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে মতিঝিল, মূলত যে পথে মেট্রোরেল বসছে অথবা উত্তরা থেকে এয়ারপোর্ট বনানী মহাখালী হয়ে মতিঝিল, মূলত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যে অ্যালাইনমেন্ট ধরে হচ্ছে সে দুটি উত্তর-দক্ষিণমুখী রুট ছাড়াও প্যারালাল সড়কগুলোতেও তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। যেমন পশ্চিমের মিরপুর রোড, ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোড, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ সড়ক এবং পূর্বের মহাখালী তেজগাঁও মগবাজার রোড, রামপুরা রোড, শাহজাহানপুর রোড, শান্তিনগর গুলিস্তান রোড, রাজারবাগ ডিআইটি রোড, বকশীবাজার রোড, নবাবপুর রোড, ধোলাইখাল রোড ইত্যাদি রোডে তীব্র যানজটে মানুষ নাকাল। যানজটের প্রধান কারণগুলো মোটামুটি আমরা সবাই জানি। যেমন

চাহিদার অনুপাতে রাস্তার দৈর্ঘ্যস্বল্পতা।

রাস্তার স্বল্প প্রশস্ততা। রাস্তার পাশে কমন/পাবলিক স্পেসের অভাব। শহরাঞ্চলে রাস্তার জন্য ২৫% ভূমির স্থলে ঢাকায় মাত্র ৮% ভূমি প্রাপ্তি। অবৈধ হকারদের দখলে ফুটপাথের মেজর পার্ট। রাস্তার উভয় পাশে অর্ধেক লেন অবৈধ দখলে।

পর্যাপ্ত বৈধ পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকা। সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় আইন প্রয়োগে শিথিলতা। এ ছাড়া প্রধান যে কারণটি তা হলো- ইন্টারসেকশনগুলোয় বাধাহীনভাবে যানবাহনসমূহ চলাচলে বাধাগ্রস্ত হওয়া। আমার স্টাডিতে উঠে এসেছে, ইন্টারসেকশনগুলো যথাযথ অ্যাড্রেস করতে পারলে এ তীব্র যানজট দ্রুততম সময়ে সমাধান করা সম্ভব। এখানে উল্লেখ্য, ২০১০ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত প্রায় চার বছর রাজউকের সদস্য উন্নয়ন পদে দায়িত্ব পালনকালে হাতিরঝিলের সেতুসমূহ ও সড়ক নেটওয়ার্কের পরিকল্পনা প্রণয়ন, রামপুরা সড়কে দুটি ইউলুপ সংযোজনের আইডিয়া প্রদান, কুড়িল ফ্লাইওভারসহ পূর্বাচল ৩০০ ফুট সড়কের পরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদি কাজ করতে গিয়ে ঢাকার যানজট নিয়ে আরও বেশ কিছু কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল। যেমন তেজগাঁও রেললাইনের ওপর ওভারপাস, বারিধারা থেকে বালু নদ পর্যন্ত ১০০ ফুট প্রশস্ত সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, শান্তিনগর থেকে গুলিস্তান নয়াবাজার হয়ে ঢাকা-মাওয়া রোড পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণের পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে কামরাঙ্গীর চরসহ ঢাকার চারদিকে চারটি স্যাটেলাইট সিটি স্থাপনের পরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদি। এসব অভিজ্ঞতার আলোকে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ঢাকা মহানগরীর মূল দুটি সড়কের চলমান উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রেখে পূর্ব ও পশ্চিমের প্যারালাল সড়কসমূহের ইন্টারসেকশনগুলোকে অবিলম্বে অ্যাড্রেস করতে হবে। সরকার চাইলে দ্রুত ডিটেইল স্টাডি পেশ করা সম্ভব। আশা করা যায়, মাত্র ১০ মাসে ঢাকার তীব্র যানজট ৮০% হ্রাস করা সম্ভব হবে।

লেখক : প্রকৌশলী, যুগ্মসচিব (অব.), সাবেক সদস্য, উন্নয়ন রাজউক)।

 

সর্বশেষ খবর