শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

রোগমুক্তির সহজ আমল

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

রোগমুক্তির সহজ আমল

মহান রব্বুল আলামিন মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন বেশকিছু উপাদান দিয়ে। তার মধ্যে জ্ঞান, দেহ ও রুহ হলো মৌলিক উপাদান। এ তিনটি উপাদান যার ঠিক থাকবে তার পুরো দেহ, মন ও দেমাগ ঠিক থাকবে। আর যার এ তিনটির কোনোটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেমন রুহ সম্পর্কে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘প্রতিটি দেহে একটি গোস্তের টুকরা আছে। যদি সেই টুকরাটি ঠিক থাকে তাহলে তার পুরো দেহ ঠিক থাকবে আর যদি সে টুকরাটি খারাপ হয়ে যায় তাহলে তার পুরো দেহ খারাপ হয়ে যাবে।’ দুনিয়ায় মানুষ অনেক রোগে ভোগে। কিছু আছে মানসিক রোগ আর কিছু শারীরিক। মানসিক রোগের চিকিৎসা হয় শরিয়তের বিধিবিধান পালনের মাধ্যমে। বিশেষ করে কোরআন তিলাওয়াত ও আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে। আর শারীরিক রোগ মহান রব্বুল আলামিন বান্দাকে বিভিন্ন কারণে দিয়ে থাকেন। যেমন বান্দাকে পরীক্ষা করার জন্য দিয়ে থাকেন, বান্দার মর্যাদা বাড়ানোর জন্য দিয়ে থাকেন, বান্দার গুনাহ মাফের জন্য দিয়ে থাকেন। আবার কিছু রোগ আল্লাহর আজাব-গজবের ইঙ্গিত বহন করে। এসব রোগব্যাধি থেকে হেফাজতের জন্য রয়েছে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ আমল; যা আমি পাঠকদের সুবিধার জন্য নিচে সংক্ষেপে দিচ্ছি- ১. যে ব্যক্তি ফজরের নামাজের পর এই দোয়াটি তিনবার পাঠ করবে- সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি। সঙ্গে সঙ্গে এই দোয়াটিও একবার পড়বেÑ আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিমমা ইনদাকা ওয়া আফিজ আলাইয়া মিন ফাদলিকা ওয়ানসুর আলাইয়া রহমাতাকা ওয়ানজিল আলাইয়া বারকাতাকা। অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার কাছে যা আছে আমি তা-ই তোমার কাছে চাই। তোমার অনুগ্রহের একটু ধারা আমার দিকে প্রবাহিত কর এবং তোমার রহমতের একটু বারি আমার ওপর বর্ষণ কর আর তোমার বরকতসমূহ থেকে একটুখানি আমার প্রতি নাজিল কর।’ আল্লাহর রহমতে সে সব ধরনের রোগ থেকে মুক্ত থাকবে। তবে দোয়া কবুল হওয়ার কিছু শর্ত রয়েছে তা অবশ্যই আমাদের পালন করতে হবে। যেমন কোরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে হবে। পূর্ণ আস্থা ও ইয়াকিনের সঙ্গে দোয়া পাঠ করতে হবে। আল্লাহতায়ালা আল কোরআন মানুষের কল্যাণ ও কামিয়াবির জন্য নাজিল করেছেন। মানুষের জীবনে এমন কিছু নেই যা কোরআনে বর্ণিত হয়নি অর্থাৎ সবকিছুর সুন্দর সমাধান রয়েছে কোরআনে। কোরআনে এমন কিছু আয়াত আছে যেগুলো বিভিন্ন রোগব্যাধির জন্য শিফাস্বরূপ। তাই এসব আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সব রোগব্যাধি ও বালামুসিবত থেকে মুক্তি চাওয়া একান্ত প্রয়োজন এবং কর্তব্য। সব ধরনের বালামুসিবত ও রোগব্যাধি থেকে মুক্তিলাভের কয়েকটি আয়াত নিচে তুলে ধরা হলোÑ ১. বিসমিল্লাহসহ সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত। ২. সূরা তওবার ১৪ নম্বর আয়াত। উচ্চারণ হলোÑ ওয়া ইয়াশফি সুদু-রা কাওমিম মুমিনিন। অর্থ : এবং মুমিনদের (মুসলমানদের) অন্তরসমূহ শান্ত করে দেন। ৩. সূরা ইউনুসের ৫৭ নম্বর আয়াত। উচ্চারণ : ওয়া শিফাউল লিমা- ফিসসুদু-রি ওয়া হুদাও ওয়া রাহমাতুল লিল মুমিনিন। অর্থ : এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুসলমানদের জন্য। ৪. সূরা নাহলের ৬৯ নম্বর আয়াত। উচ্চারণ : ইয়াখরুজু মিমবুতু-নিহা-শারা-বুম মুখতালিফুন, আলওয়ানুহু- ফি-হি শিফা-উ লিন্না-সি। অর্থ : তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। ৫. সূরা শুআরার ৮০ নম্বর আয়াত উচ্চারণ : ওয়া ইজা মারিদতু ফা হুয়া ইয়াশফিনি। অর্থ : যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন। ৬. সূরা বনি ইসরাইলের ৮২ নম্বর আয়াত উচ্চারণ : ওয়া নুনাজ্জিলু মিনাল কুরআনি মা হুয়া শিফাউও ওয়া রাহমাতুল লিল মুমিনিন। অর্থ : আমি কোরআনে এমন বিষয় নাজিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা ও মুমিনের জন্য রহমত। প্রিয় পাঠক! উপরোল্লিখিত আয়াতগুলো নিয়মিত তিলাওয়াত করলে আল্লাহ সব জটিল ও কঠিন রোগ থেকে তিলাওয়াতকারীকে হেফাজত করবেন ইনশা আল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সব মুসলিম ভাই-বোনকে কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করার তৌফিক দান করুন এবং তামাম বালামুসিবত ও রোগব্যাধি থেকে মুক্ত রাখুন।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির, খতিব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর