শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
ইতিহাস

সীমান্তনীতি

বাংলায় মীর জুমলার শাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে তাঁর উত্তর-পূর্ব সীমান্তনীতি, যার দ্বারা তিনি সীমান্তবর্তী কামরূপ ও আসাম রাজ্য জয় করেছিলেন। কোচবিহার ছিল সামন্ত রাজ্য, কিন্তু উত্তরাধিকার যুদ্ধের সুযোগে রাজা প্রাণনারায়ণ আনুগত্য অস্বীকার করেন। আসামের রাজা জয়ধ্বজ সিংহ কামরূপ দখল করে নেন। এটা আগে বাংলা সুবাহর অঙ্গীভূত ছিল। এক বিশাল সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী নিয়ে মীর জুমলা শত্রুর বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর মূল অংশ কামরূপের দিকে প্রেরণ করে তিনি নিজে কোচবিহারের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। তিনি নিকটবর্তী হলে প্রাণনারায়ণ দেশ ত্যাগ করে পাহাড়ের দিকে পালিয়ে যান। কোচবিহার দখল করতে দেড় মাসের মতো লেগেছিল এবং সেখানকার প্রশাসনিক বন্দোবস্ত করে মীর জুমলা কামরূপের দিকে প্রেরিত অগ্রবর্তী দলের সঙ্গে যোগ দেন। আসামের রাজা কামরূপ ত্যাগ করে যথেষ্ট দূরদর্শিতার পরিচয় দান করেন। তবে মীর জুমলা আসাম জয়েরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তখনকার দিনে আসাম ছিল একটি বড় ভূখ- এবং এর ভৌগোলিক প্রকৃতি ছিল বাংলা থেকে অনেকটা ভিন্নতর। তবে কিছুই মীর জুমলাকে নিরুৎসাহিত করতে পারেনি। গৌহাটি থেকে যাত্রা শুরু করার পর ছয় সপ্তাহেরও কম সময়ে মীরজুমলা আসামের রাজধানী গড়গাঁও পর্যন্ত এলাকা জয় করেন। রাজা যেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেই ভূখন্ডটি ছিল ঘোড়া ও সৈন্যদের পক্ষে দুর্গম উঁচু পাহাড়। বর্ষাকালে মুগল সৈন্যবাহিনী কিছু উঁচু ভূমিতে আটকে পড়ে, রাস্তাঘাট ডুবে যায় এবং ছোট ছোট নদী, এমনকি নালাগুলোও (নর্দমা) স্ফীত হয়ে বড় নদীর আকার ধারণ করে। অসমিয়াগণ চারদিক থেকে তাদের অভ্যাসগত রাত্রিকালীন আক্রমণ চালিয়ে মুঘলদের নাজেহাল করে; রাস্তাগুলো প্লাবিত হওয়ার ফলে কোনো কিছু পাঠানো অসম্ভব হয়ে পড়ে যার ফলে ঘাঁটি থেকে তাদের জন্য খাদ্য দ্রব্যাদি আসাও বন্ধ হয়ে যায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর