রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

তিস্তাপাড়ের দুঃখ

পানি বণ্টন চুক্তির ওয়াদা পূরণ হোক

উজানে পানি প্রত্যাহারের অনুদার কর্মকান্ডে একসময়ের প্রমত্তা তিস্তা নদী তার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলছে। দেশের অন্যতম প্রধান এ নদী শুকিয়ে এখন মৃতপ্রায়। শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার বুকজুড়ে শুধু বালু আর বালুর স্তর। নদী টিকে আছে খালের অবয়বে। ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর নীলফামারীর কালীগঞ্জ সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তিস্তা। লালমনিরহাট,      নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিশেছে। ভারতের চেয়ে নদীটি বাংলাদেশে পড়েছে বেশি অংশ। তিস্তার দৈর্ঘ্য ৩১৫ কিলোমিটার হলেও বাংলাদেশ অংশে পড়েছে ১৬৫ কিলোমিটার। ভারতের গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে একতরফা তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণের পরিণতিতে এ নদী মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। ফলে লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীর ১৬৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে তিস্তার অববাহিকায় জীবনযাত্রা ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দেশের অন্যতম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারাজ অকার্যকর হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তিস্তা রেলসেতু, তিস্তা সড়কসেতু ও নির্মাণাধীন দ্বিতীয় তিস্তা সড়কসেতু দাঁড়িয়ে রয়েছে ধু-ধু বালুচরের ওপর। সেতু থাকলেও হেঁটেই পার হচ্ছে এ নদী অনেকে। ঢেউহীন তিস্তায় রয়েছে শুধুই বালুকণা। এ নদীতে মাছ আহরণ করে জীবিকা অর্জন করতেন এ অঞ্চলের হাজারো জেলে। তারাও আজ কর্মহীন হয়ে মানবেতর-জীবন যাপন করছেন। তিস্তা অববাহিকার জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে। অভিন্ন নদী তিস্তার পানি সমভাবে বণ্টনে ঐকমত্যে পৌঁছে ছিল প্রতিবেশী দুই বন্ধু দেশ বাংলাদেশ ও ভারত। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফরকালে দুই দেশের মধ্যে এ-সংক্রান্ত চুক্তি হবে এমন ঐকমত্যও হয়েছিল। কিন্তু সব ধরনের প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও চুক্তি সম্ভব হয়নি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের বিরোধিতার অজুহাতে। বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের মধ্যে অপচ্ছায়া হয়ে দেখা দিয়েছে তিস্তাসংক্রান্ত জটিলতা। এ বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার যেহেতু তাদের প্রতিশ্রুতিতে অটল সেহেতু আমরা আশা করব, তিস্তা চুক্তি সম্পাদনে তারা এগিয়ে আসবে।

বাংলাদেশকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে। দূর হবে তিস্তা অববাহিকার লাখ লাখ মানুষের দুঃখ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর