দুনিয়ার যেসব দেশে সাপের দংশনে মৃত্যুর হার বেশি বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। কালের বিবর্তনে দেশে সাপের দংশনে মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস পেলেও গ্রামাঞ্চলে প্রায়ই বিষধর সাপের দংশন মানুষের জন্য বিসংবাদ ডেকে আনছে। আশার কথা, সাপের দংশনে আক্রান্ত হওয়া রোগীর চিকিৎসায় দেশ অচিরেই সক্ষমতা অর্জন করতে যাচ্ছে। দেশেই তৈরি হবে বিষধর সাপের প্রতিষেধক। দেশে প্রথমবারের মতো তৈরি হওয়া এ প্রতিষেধক ২০২২ সালে চূড়ান্তভাবে বাজারে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ প্রতিষেধক তৈরিতে পোষা হচ্ছে ৯ প্রজাতির ১২০টি সাপ। এজন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পুরনো ভবনের নিচে সুতপা লেকচার গ্যালারিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে পৃথক সর্প গবেষণাগার। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগ, মেডিসিন টক্সিকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর অ্যাডভান্স মেন্টর ট্রপিক্যাল মেডিসিন ও জার্মানির গ্যাটে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিশেষজ্ঞ প্রতিষেধক তৈরিতে কাজ করছেন। জার্মানি থেকে জীববিজ্ঞানীরা এসে নিজেদের নিরাপদ রেখে বিষধর সাপ ধরা ও সাপগুলোকে লালনপালন করে সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে গেছেন। বর্তমানে কাজ করছেন দেশি-বিদেশি ১৮ জন। বর্তমানে বিষধর সাপের প্রতিষেধক আনতে হয় ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে। স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রতিষেধকের বিদেশনির্ভরতা কমাতে ২০১৮ সালের মার্চে দেশে অ্যান্টিভেনম তৈরির পাঁচ বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রথমে গবেষণাগারে ক্রেইট, গোখরাসহ বিষধর ১২টি সাপ সংগ্রহ করা হয়। দুই মাসের মাথায় তিনটি ক্রেইট ৩৮টি বাচ্চা ফোটায়। পর্যায়ক্রমে ৯ প্রজাতির ১২০টি সাপ হয়। গবেষণাগারের ৩৬টি বক্সে রাখা হয়েছে এসব সাপ ও সাপের বাচ্চা। বাংলাদেশে সাপের দংশনে বিপুলসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়। অপচিকিৎসার কারণে তাদের অনেকেই প্রাণ হারায়। দেশে ২০২২ নাগাদ সাপের প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম উৎপাদন হলে বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবন রক্ষায় তা অবদান রাখবে। বিশেষ করে বন্যা মৌসুমে সাপের দংশনে বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা এড়ানো যাবে।