একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের গৌরবান্বিত দিন। দেশের স্বাধীনতার বীজও বপিত হয়েছিল এই দিনে। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্র“য়ারিতে রক্ত দিয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, শফিকসহ বাংলা মায়ের সেরা সন্তানরা। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতিদানে পাকিস্তানি শাসকরা বাধ্য হয়েছিল। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই বিকশিত হয় বাঙালির স্বাধিকার চেতনা। যার চূড়ান্ত রূপ সত্তরের নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়েছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সেই অবিনশ্বর চেতনা বাঙালি জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইপ্সিত লক্ষ্য অর্জন করেছে। ভাষাশহীদদের এ দিনটি এখন জাতিসংঘের উদ্যোগে সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদ্যাপিত হয়। দুনিয়ার দেশে দেশে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার সমুন্নত রাখার শপথ নেওয়া হয় এ দিনে। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার যে একটি মানবাধিকার তাও স্বীকৃত এখন আন্তর্জাতিকভাবে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানে ১৯৪৭ সালের মধ্য আগস্টে জম্ম নেয় পাকিস্তান ও ভারত নামের দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় বাঙালি মুসলমানরাই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। কিন্তু অচিরেই ভারত থেকে উদ্বাস্তু হয়ে আসা উর্দুভাষী রাজনীতিক, আমলা ও সেনাপতিদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ে পাকিস্তান। দেশের শতকরা ৫ ভাগ মানুষ উর্দুভাষী না হলেও তারা উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার ধৃষ্টতা দেখায়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নিতেও অস্বীকৃতি জানায় পাকিস্তানের ক্ষমতা কুক্ষিগতকারী শাসকরা। ছাত্রসমাজ এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। ’৫২ সালের একুশে ফেব্র“য়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পাকিস্তানি পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। একুশের শহীদদের রক্তদান বাঙালি জাতিকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সাহস জুগিয়েছে। এ সাহসই ছিল একাত্তর পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের অনুপ্রেরণা। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধেও তা অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। বাংলাভাষী জনগণের জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে এ প্রেরণাকে বুকে লালন করতে হবে। সর্বস্তরে বাংলা প্রতিষ্ঠার দায় পূরণেও উদ্যোগী হতে হবে। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের হার না মানা চেতনাকে সঙ্গী করে দেশ গঠনে ব্রতী হলে কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জন সম্ভব হবে। অমর একুশের এই দিনে ভাষাশহীদদের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।
