শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

উচ্চ আদালতে বাংলায় রায়

এ উদ্যোগ আশাজাগানিয়া

দেশের উচ্চ আদালতে বাংলায় রায় লেখার সংখ্যা বাড়ছে। দুই বিচারপতি এযাবৎ সব রায় বাংলায় লেখার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। বাংলায় রায় লেখা শুরু করেছেন আরও কয়েকজন বিচারপতি। অন্যদের ইংরেজিতে লেখা রায় বাংলায় অনুবাদের উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। সর্বস্তরে বাংলা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের এ বিবর্তন আশাজাগানিয়া ঘটনা হিসেবে অভিহিত করা যায়। ভাষার জন্য আজ থেকে ৬৮ বছর আগে রক্ত দিয়েছিল বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা। ’৫২-এর মহান ভাষা আন্দোলনের কারণেই বাংলা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায়। পাকিস্তান আমলে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার ব্যবহার ছিল সীমিত। স্বাধীন বাংলাদেশে সব ক্ষেত্রে বাংলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হলেও নানা জটিলতায় দেশের উচ্চ আদালতের রায় লেখার ক্ষেত্রে বাংলার ব্যবহার ছিল না বললেই চলে। সদিচ্ছার অভাব না থাকলেও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি ছিল সীমিত। আশার কথা, উচ্চ আদালতেও বাংলায় রায় লেখার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সব ক্ষেত্রে বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে ১৯৮৭ সালের ৮ মার্চ বাংলা ভাষা প্রচলন আইন প্রণয়ন করা হয়। সংবিধানেও সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে। তার পরও বাস্তব কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে উচ্চ আদালতে পূর্ণাঙ্গভাবে এ বিধান কার্যকর হয়নি। আদালতসহ সর্বত্র বাংলা ভাষার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে আট বছর আগে আইন কমিশন থেকেও সরকারকে সুপারিশ করা হয়েছিল। তার পর থেকে বিচারপতিরাও বাংলায় রায় ও আদেশ দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বাংলায় রায় ও আদেশের বিষয়ে নতুন প্রজন্মের আইনজীবীদের বেশি ভূমিকা রাখতে হবে বলেও মনে করেন আইনজ্ঞরা। স্মর্তব্য, ’৯০-এর দশকে উচ্চ আদালতে বাংলার ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়। প্রয়াত সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও বিচারপতি এম আমীরুল ইসলাম চৌধুরী বাংলায় কয়েকটি আদেশ ও রায় দেন। তার পর থেকে বিচারপতিদের মধ্যে বাংলায় রায় লেখার প্রবণতা গড়ে ওঠে। সর্বস্তরে বাংলা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের রায় বাংলায় লেখা বা বাংলায় অনুবাদ করার উদ্যোগকে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে অভিহিত করা যায়। এ অগ্রগতির জন্য যাঁরা অবদান রেখেছেন তাঁরা অবশ্যই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। আমাদের বিশ্বাস, সবার জন্য তা অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর