রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

রাজধানীর বিপন্ন খাল

কর্তৃপক্ষের দৃঢ় ভূমিকা কাম্য

রাজধানী ঢাকা থেকে একে একে উধাও হয়ে যাচ্ছে একসময়ের প্রাণবন্ত খালগুলো। ঢাকার যোগাযোগ ক্ষেত্রে যে খালগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত তার সিংহভাগ এখন দখলদারদের কবলে পড়ে অস্তিত্ব হারিয়েছে। বাদবাকি অংশ দখল ও দূষণে পরিণত হয়েছে নোংরা নালায়। নদী, খাল, লেকসহ প্রাকৃতিক জলাশয় সুরক্ষায় বর্তমান সরকার আমলে অঙ্গীকারবদ্ধ ভূমিকা রাখার কথা বারবার বলা হলেও তা রক্ষায় কাক্সিক্ষত সাফল্য আসেনি বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবহেলায়। গত আট বছরে ঢাকার ১১টি খাল নর্দমা আর ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। আবর্জনায় জমাটবাঁধা খালের নর্দমায় খুঁটি পুঁতে পাটাতন বসিয়ে তার ওপর একের পর এক বস্তি তোলা হয়েছে। স্থায়ীভাবে আটকে গেছে পানিপ্রবাহের পথ। ৩০-৩২ বছর আগেও ঢাকার প্রান্তসীমায় স্রোতোবাহী যেসব খালে পণ্যবাহী বড় বড় নৌকার আনাগোনা ছিল, সে খালগুলো এখন দুই-আড়াই ফুট চওড়া নর্দমার আকার ধারণ করেছে। ঢাকা ওয়াসার তথ্যানুযায়ী, দখলবাজদের আগ্রাসী থাবায় মাত্র ৩০ বছরেই অন্তত ৩৯টি খালের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এমনকি সরকারি ওই দফতরে খালগুলোর কোনো নথি নেই। ওয়াসার একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশেই প্রভাবশালী মহল বছরের পর বছর ধরে খাল দখলের মচ্ছব চালিয়ে আসছে। তারা প্রথমেই খালের নির্দিষ্ট কোনো পয়েন্টে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়। পরে বাঁধ ঘেঁষে রাতারাতি গড়ে তোলা হয় একের পর এক বস্তিঘর। ওয়াসা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে খালের মূল নথিপত্র বের করে সে আদলেই মালিকানা-সংক্রান্ত জাল কাগজপত্র বানিয়ে নেয় তারা। এর পরই বস্তিবাসীকে খালের অন্য অংশে সরিয়ে সে জায়গা প্লট আকারে বিক্রি করে দেয় প্রভাবশালী দখলবাজরা। রাজধানীর খাল, বিল, লেক, বিলঝিল ভরাট ও অপদখলের শিকার হওয়ায় পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে। যে প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো মানুষের হৃদরাজ্য ভালোলাগার অনুভূতি সৃষ্টি করত সেগুলোর মধ্যে যেগুলো টিকে আছে তা মশা উৎপাদনের ক্ষেত্র হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে। দখল-দূষণে সেগুলোরও অস্তিত্ব এখন বিপন্নের পথে। রাজধানীতে মানুষ বসবাসের পরিবেশ টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি পানি নিষ্কাশনের সুবিধা নিশ্চিত করতে অপদখলকৃত খালগুলো উদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। যেগুলোর অস্তিত্ব এখনো কোনোরকমে টিকে আছে সেগুলোর সংস্কারও জরুরি। এ ব্যাপারে সরকার, সিটি করপোরেশন সবার অঙ্গীকারবদ্ধ ভূমিকা প্রত্যাশিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর