শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

রসুলের শিক্ষা সন্দেহ থেকে দূরে থাকতে হবে

জিয়া বিন মহিউদ্দিন

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনভর তাঁর উম্মতকে পরস্পর ভাই হয়ে থাকার তাগিদ দিয়েছেন। সাহাবিদের কাছে পরবর্তী প্রজন্মের প্রতি এ নির্দেশ পৌঁছানো জরুরি বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা সন্দেহ পোষণ থেকে নিজেদের রক্ষা কর, সন্দেহ পোষণ বেশির ভাগ মিথ্যায় পর্যবসিত হয়। তোমরা পরস্পর ছিদ্র অন্বেষণ করবে না, অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াবে না, দালালি করবে না, হিংসা পোষণ করবে না, ঘৃণা পোষণ করবে না এবং পরস্পর সম্পর্ক ছিন্ন করবে না বরং আল্লাহর বান্দারূপে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে থাকবে।’ বুখারি, মুসলিম, মিশকাত।

ভ্রাতৃত্ববোধে উৎসাহিত করে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এক মুসলমান অন্য মুসলমানের ভাই। সে তার ভাইয়ের প্রতি জুলুম করবে না; তাকে লাঞ্ছিত করবে না এবং তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও খাটো করবে না।’ তিনি বলেছেন, ‘একজন মানুষের খারাপ লোক হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ রাখে।’ মুসলিম, মিশকাত।

মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠায় রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এক মুমিনের ওপর অন্য মুমিনের ছয়টি দাবি রয়েছে। তা হলো- অসুস্থ হলে দেখতে যাবে, মারা গেলে জানাজায় উপস্থিত হবে, ডাকলে সাড়া দেবে, দেখা হলে সালাম দেবে, হাঁচি দিলে জবাব দেবে, উপস্থিত কিংবা অনুপস্থিত থাকুক সর্বদা তার কল্যাণ কামনা করবে।’ মিশকাত।

কোনো মুসলমান তার অন্য কোনো মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখলে আল্লাহ তার প্রতি রহমতের হাত বাড়িয়ে দেন। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘এক ব্যক্তি একদিন তার একজন ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য পথে বের হলো। ওই ভাই বসবাস করত ভিন্ন গ্রামে। এ সময় আল্লাহ একজন ফেরেশতা পাঠালেন মানুষের আকৃতি দিয়ে; ফেরেশতা তাকে বলল, আপনি কোথায় যাচ্ছেন? সে বলল, ওই গ্রামে যাচ্ছি আমার এক ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য। ফেরেশতা বলল, তার সঙ্গে কি আপনার কোনো দেনা-পাওনা আছে, যার তথ্য জানার জন্য যাচ্ছেন? সে বলল, তা নয়; বরং আমি তাকে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালোবাসি। অতঃপর ফেরেশতা বলল, আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে এই সুসংবাদ জানানোর জন্য এসেছি যে, আপনি যেমন আল্লাহর ওয়াস্তে ওই সম্পর্ক চলমান রেখেছেন, মহান আল্লাহও তেমনি আপনার সঙ্গে তাঁর নিজের সম্পর্ক চলমান রেখেছেন।’ মুসলিম, মিশকাত।

মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের অন্যতম দাবি হলো, একজন মুসলমান অন্য মুসলমানের সম্মানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। সে কখনো অন্য মুসলমানের মানহানি করবে না; বরং অন্য কেউ তার মানহানি করতে গেলে তা প্রতিহত করবে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো মুসলমানের সামনে অন্য মুসলমানের গিবত ও দুর্নাম করা হলে ওই মুসলমানের যদি তা প্রতিহত করার ক্ষমতা থাকে গিবতকারীকে প্রতিহত করার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তকে সাহায্য করে, তাহলে আল্লাহ আখিরাতে তাকে সাহায্য করবেন। আর যদি ক্ষতিগ্রস্তকে সাহায্য করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তাকে সাহায্য না করে তবে আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে এ রকম দুর্নাম ও গিবতযোগ্য হওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন।’ কোরআন সুন্নাহ-মিশকাত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার এবং নিজেদের মধ্যে বাস্তবায়ন করার তৌফিক দিন।

 লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর