রবিবার, ১ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের চেতনায় চিরঞ্জীব তাজুল

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের চেতনায় চিরঞ্জীব তাজুল

কারও কারও মৃত্যু মহান। বিশেষ করে শহীদদের। কারও জীবন আবার তার মৃত্যুর চেয়ে মহান। শুধু বিশেষ কিছু মানুষের জীবন ও মৃত্যুÑ দুটোই হয় সুমহান। কমরেড তাজুল ইসলাম ছিল তেমনই একজন মানুষ। তার মৃত্যু ছিল অসীম সাহসী এক বীর যোদ্ধার। কিন্তু তার স্বল্পজীবন ছিল অসাধারণ প্রেরণাময় দৃষ্টান্তের মহিমায় উজ্জ্বল। শহীদ কমরেড তাজুলের জীবনবৃত্তান্ত দেশবাসীর ভালো করে জানা নেই। কিন্তু তা জানা প্রয়োজন। রাষ্ট্র থেকে তার অমর কীর্তির কথা সেভাবে প্রচারিত হয়নি। প্রচার হয় বড়-বড় অপরাধী, দুর্বৃত্ত, লুটপাটকারী, মাস্তান, সন্ত্রাসী, গডফাদার, দলকানা ভাড়াটিয়া ‘ক্যাডারদের’ কথা। তাদের বৃত্তান্তই ‘হেডলাইন’ পায়। ১ মার্চ কমরেড তাজুল ইসলামের ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী সামনে রেখে সম্পর্কে দুই কথা লেখা আজ পরম কর্তব্য বলে মনে করছি।

১৫ দল ও ৮ দল ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছিল। শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদও তাদের ১০ দফা দাবিতে একই দিন কলকারখানায় ২৪ ঘণ্টা ধর্মঘট ডেকেছিল। সে বছর লিপিয়ার হওয়ায় ফেব্রুয়ারি ছিল ২৯ দিনের। ২৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্র মিছিলে পুলিশের ট্রাকের চাকায় চাপা পড়ে শহীদ হয়েছিলেন সেলিম ও দেলোয়ার। হরতাল ও শ্রমিক ধর্মঘট সফল করার জন্য তৎপরতা আরও তীব্র হয়ে উঠেছিল। এরশাদের বিরুদ্ধে আহূত এর আগের কোনো কর্মসূচিতে আদমজীতে কাজ বন্ধ করা যায়নি। এবার সেখানে ধর্মঘট সফল করতে পারাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। কমরেড তাজুলের ওপর সেই বিশেষ দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল। আগের দিন ঢাকায় পরামর্শ শেষে দুপুরের দিকে আদমজী এলাকায় ফিরে যাওয়ার সময় সে আমাকে বলেছিলÑ ‘সেলিম ভাই! টেনশন করবেন না। এবার আদমজীতে কাজ বন্ধ হবেই।’ সেদিন (২৯ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতের আগে আগে ধর্মঘট সফল করার জন্য তাজুলের নেতৃত্বে মিল এলাকায় শ্রমিক মিছিল বের হয়েছিল। শ্রমিকরা কাজে যাওয়া বন্ধ করে বাড়ি-ঘরে ফিরে যেতে শুরু করেছিলেন। এমন সময়, স্বৈরশাসক এরশাদের গুন্ডাবাহিনী মিছিলের সামনে থাকা কমরেড তাজুলকে টার্গেট করে তার ওপর অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল তাজুল। অস্ত্রের আঘাতে সে মারাত্মক আহত হয়ে জ্ঞানহীন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিল। তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসকদের পক্ষে তাকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। ১ মার্চ কমরেড তাজুল ইসলাম মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল। তার মৃত্যু নিছক কোনো দুর্ঘটনা ছিল না। সে জেনে-বুঝে, সচেতনভাবে মৃত্যুভয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, আদমজীতে শ্রমিক ধর্মঘট সফল করতে শ্রমিক মিছিলের সামনে দাঁড়িয়ে হাসিমুখেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিল। এ মৃত্যু বীরোচিত। এ মৃত্যু অনন্যসাধারণ। এ মৃত্যু তাজুলকে দিয়েছে অমরত্ব। কমরেড তাজুলের মহিমান্বিত মৃত্যুর মতো তার ৩৪ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনটিও এক মহৎ বীরত্বগাথা। তার মৃত্যুর মহিমার চেয়ে সে জীবনের মহত্ত্ব কোনোভাবেই কম নয়। কমরেড তাজুলের জন্ম হয়েছিল এক নিতান্ত দরিদ্র পরিবারে। মাতৃহারা সন্তান তাজুলের কৈশোরের একটা সময় কেটেছিল গৃহশিক্ষকের কাজ আর আইসক্রিম বিক্রি করে। পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহের কারণে জীবিকার জন্য সংগ্রাম করার পাশাপাশি তাজুল সাফল্যের সঙ্গে অতিক্রম করেছিল শিক্ষাজীবনের বিভিন্ন পর্ব। সে ছিল ছাত্র হিসেবে মেধাবী। কলেজের পাট শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে (যে বিভাগে সবচেয়ে ভালো ছাত্ররাই কেবল ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়) অধ্যয়ন করেছিল। সে অর্জন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা বিভাগের সর্বোচ্চ ডিগ্রি। পড়াশোনার পাশাপাশি কমরেড তাজুল ছাত্র আন্দোলনে রেখেছিল অসামান্য ভূমিকা। স্কুলজীবনেই সে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। সেই চেতনা ও দায়িত্ববোধ সযতেœ ধারণ করেই সে প্রবেশ করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে এসে হয়ে উঠেছিল ছাত্র ইউনিয়নের একজন অগ্রণী সংগঠক। ছাত্র ইউনিয়নের নির্দেশে তখনকার সময়ের সবচেয়ে প্রতিকূল অথচ দুর্বল ছাত্র হল এস এম হলের ছাত্র হিসেবে নাম লিখিয়ে সেই হলে থাকতে শুরু করেছিল। সেখানে ছাত্র ইউনিয়নের শাখা সংগঠন ও প্রকাশ্য তৎপরতা কিছুটা জোরদার করতে সক্ষম হয়েছিল সে। তা ছাড়া অল্প দিনের মধ্যেই সেখানে গোপন কমিউনিস্ট পার্টির একটি ‘গ্রুপ’ও গড়ে উঠেছিল। সেই পার্টি গ্রুপে সে ছাড়াও ছিলেন শহীদ নিজামউদ্দিন আজাদ, শহীদ লুৎফুল আজিম, আবুল কালাম আজাদ ও মিজানুর রহমান। আইয়ুববিরোধী আন্দোলন ও ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে সে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিল। দেশমাতৃকার ডাকে সাড়া দিয়ে তাজুল দ্বিধাহীনচিত্তে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে। ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর অধীনে সীমান্তের ওপারে আগরতলার ‘বরদোয়ালি ক্যাম্পে’ নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছিল। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদকসহ ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন দায়িত্ব সে পালন করে। ’৭৩ সালে তাজুল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে। তখন থেকেই সে ভাবতে থাকে যে, ছাত্রজীবন শেষ করে শ্রমিকদের মাঝে বিপ্লবী ট্রেড ইউনিয়ন গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করবে। ’৭৫-এর পর ছাত্র আন্দোলনের দায়িত্ব পালন করার শেষ দিকে ছাত্র থাকা অবস্থাতেই সে আদমজীতে শ্রমিক আন্দোলন সংগঠিত করার কাজে নিজেকে যুক্ত করে। উচ্চশিক্ষিত মধ্যবিত্ত তরুণ হিসেবে যা ছিল এক কঠিন চ্যালেঞ্জ।

অনেকটাই নিজস্ব আগ্রহ ও উদ্যোগে কমরেড তাজুল কাজ শুরু করে শ্রমিকদের মধ্যে। পার্টি তাকে দায়িত্ব দেয় আদমজীর শ্রমিকদের মাঝে পড়ে থেকে সেখানে ট্রেড ইউনিয়ন ও পার্টির কাজ করার। কঠোর একাগ্রতা ও বিপ্লবী নিষ্ঠার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালনে কমরেড তাজুল সর্বশক্তি দিয়ে কাজে নেমে পড়ে। কয়েকজনের যে ছোট পার্টি টিম পাকিস্তান আমল থেকে আদমজীতে সক্রিয় ছিল, কমরেড তাজুল তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করতে থাকে।

শ্রমিকদের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার প্রয়োজনে এবং ক্রমবর্ধমান দৈনন্দিন কাজ দক্ষভাবে পরিচালনার জন্য তাজুল তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির কথা গোপন রেখে স্বেচ্ছায় আদমজীতে সাধারণ ‘বদলি শ্রমিকের’ কাজ নিয়েছিল। বসবাস শুরু করেছিল আদমজীর শ্রমিক কলোনিতে। কিছুদিন পর তার স্ত্রী ও সন্তানদেরও নিয়ে এসেছিল তার সেই ‘ঢাকা বাজু’র বস্তিঘরে। আদমজীনগর হয়ে উঠেছিল তাজুলের আসল ঠিকানা। সেখানে বিপ্লবী ধারার ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলার কাজ জোরদার হয়ে উঠেছিল তাজুলের দক্ষ পরিচালনায়। নানামুখী তৎপরতার মধ্য দিয়ে কমরেড তাজুল অল্প দিনের মধ্যেই হয়ে উঠেছিল সাধারণ শ্রমিকদেরও প্রিয় নেতা। শ্রমিকদের নিজস্ব দাবিতে ‘আদমজী মজদুর ট্রেড ইউনিয়ন’ সংগঠিত করার মুখ্য দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে সে। শ্রমিক আন্দোলনের পাশাপাশি সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য সংগ্রামে শ্রমিক শ্রেণির অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য সে সবসময় যতœবান ছিল। তা ছাড়া মানবমুক্তির মহান আদর্শ, সমাজতন্ত্র -সাম্যবাদের লক্ষ্যে শ্রমিক শ্রেণিকে জাগিয়ে তুলতে ও তদের সংগঠিত করতে সে নিরলস দায়িত্ব পালন করেছে। অর্থকষ্ট, অক্লান্ত পরিশ্রম, পারিবারিক সংকট কোনো কিছুই তাকে দমাতে পারেনি।

কমরেড তাজুল যেমন প্রিয় ছিল আদমজীর শ্র্রমিকদের কাছে, তেমনই আবার ছিল স্বৈরাচারের পেটোয়া গুন্ডাবাহিনীর কাছে প্রধান একজন ‘টার্গেট’। তাজুলসহ কমিউনিস্ট কর্মীরা ’৮৪ সালের ১ মার্চের ধর্মঘট সফল করার কাজকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন। অন্যদিকে ধর্মঘট বানচালের চক্রান্তমূলক প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছিল। প্রশাসনের সঙ্গে দালাল ‘মাফিয়া নেতা’ সাদু ও রবের আঁতাত ছিল। তাদের টার্গেট শ্রমিকদের প্রিয় নেতা কমরেড তাজুল। ধর্মঘটের সমর্থনে গভীর রাতে সংগঠিত শ্রমিক মিছিলে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছিল সরকার সমর্থক গুন্ডারা। লাঠি, লোহার রড, চাকুর আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিল তাজুল। তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল কমরেড তাজুল। কমরেড তাজুলের মৃত্যুর খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল সারা দেশে। তার মৃত্যুতে স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন পেয়েছিল নতুন মাত্রা। সংগ্রামী মেজাজে উদীপ্ত হয়ে উঠেছিল শ্রমিকরা। তীব্রতর হয়ে উঠেছিল সংগ্রাম। বলা বাহুল্য, মধ্যরাত থেকেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আদমজী কারখানার সব মেশিন। তাজুল তার কথা রেখেছিল। জীবন দিয়ে আদমজী পাটকলে সফল করেছিল ধর্মঘট। প্রচলিত সমাজব্যবস্থায় নিছক একজন ব্যক্তি মানুষ হিসেবে আত্মপ্রতিষ্ঠার সবরকম সুযোগ ছিল কমরেড তাজুলের। কিন্তু সে পথে সে পা বাড়ায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও সর্বোচ্চ ডিগ্রি তাকে সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি ‘নিরাপদ ও আয়েশি জীবন’ এনে দিতে পারত। কিন্তু সে সচেতনভাবেই তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। বেছে নিয়েছিল যথার্থ বিপ্লবীর জীবন। যে জীবন ভোগের নয়, ত্যাগের। যে জীবন শুধু নিজের জন্য নয়, সমগ্র জনগণের জন্য নিবেদিত। কমরেড তাজুল অবতীর্ণ হয়েছিল সমাজ বিপ্লবের প্রকৃত যোদ্ধা হিসেবে লড়াই করার এবং সেজন্য নিজেকে তৈরি করার সুমহান প্রয়াসে। কঠোর একাগ্রতা ও বিপ্লবী জেদ তার সহজাত বৈশিষ্ট্য। আয়েশি মধ্যবিত্ত জীবনের প্রলোভন, আত্মপ্রতিষ্ঠার হাতছানি, পারিবারিক পিছুটানÑ  কোনো কিছুই কমরেড তাজুলকে তার আদর্শ-লক্ষ্য ও বিপ্লবী জীবন থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। একজন কমিউনিস্ট হিসেবে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছে সে। তাজুলের প্রিয় আদমজীতে এখন আর ভেঁপু বাজে না। হাজার হাজার শ্রমিকের জীবনে নেমে এসেছে চরম অন্ধকার। সুবিধাবাদী, আপসকামী, টাউট, প্রতিক্রিয়াশীল, দালাল নেতৃত্ব আদমজী জুট মিলকে রক্ষা করতে পারেনি। আদমজী মিল ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে তারা অংশীদার হয়েছিল। যেদিন আদমজী মিল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল সেই কলঙ্কজনক দিনে সাধারণ শ্রমিকরা বেদনায় হাহাকার করেছিল। বলেছিল ‘তাজুল ভাই’ যদি জীবিত থাকতেন তাহলে আদমজী জুট মিলকে কেউ ধ্বংস করার সাহস পেত না। আজও প্রতিক্রিয়াশীলরা শ্রমজীবী জনগণ ও দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে আঘাত হেনে চলেছে। সাম্রাজ্যবাদ, লুটপাটতন্ত্র, গণতন্ত্রহীনতা ও সর্বোপরি সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত ছোবলে দেশ আজ বিপন্ন। বিপন্ন দেশের গরিব-মেহনতি মানুষ। দেশ ও মানুষকে বাঁচাতে হলে সমাজপ্রগতির ঝান্ডাকে অগ্রসর করে নিতে হবে। এ কর্তব্য পালন করতে হলে আজ অনেক নিবেদিতপ্রাণ কর্মীর প্রয়োজন। প্রয়োজন অসংখ্য ‘কমরেড তাজুলের’। তাই মানুষের কথা জানতে হবে। তাদের মর্যাদা দিতে হবে। অনেকে এ কথা ভেবে হতাশ হন যে, কমরেড তাজুলের মতো মানুষ আজ আর কোথায় পাওয়া যাবে? এ হতাশা অনর্থক। কমরেড তাজুলের মতো অনেক আত্মনিবেদিত কর্মী আজও সমাজে রয়েছে। তারা হয়তো লোকচক্ষুর আড়ালে কাজ করে যাচ্ছে। সে কারণেই হয়তো তাদের খবর সবাই পায় না। ধরুন না কমরেড তাজুলের কথাই। সে শহীদ না হলে কজনই বা তার ত্যাগী-সংগ্রামী জীবনের ইতিবৃত্ত জানার সুযোগ পেত? একসময়ের অজানা কমরেড তাজুল সেভাবেই লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে কাজ করেছে। এখনো অনেক ‘তাজুল’ সেভাবেই কাজ করছে। তাদের খবর আজও অজানা থেকে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের বিপ্লবী জীবনের মহিমা তাতে বিন্দুমাত্র ক্ষুণœ হচ্ছে বলা যায় না। যে সমাজ বাস্তবতা ‘কমরেড তাজুলের’ জন্ম দিয়েছে সেই বাস্তবতাই আরও অগণিত ‘কমরেড তাজুলের’ উদ্ভবের সম্ভাবনা নিরন্তর সৃষ্টি করে রাখছে। ইতিহাস ক্রমাগত জন্ম দিতে থাকবে অসংখ্য ‘কমরেড তাজুলের’। তাই, ‘তাজুলের মতো মানুষ আজ আর কোথায় পাওয়া যাবে’ এ প্রশ্ন নিয়ে সংশয়ের কোনো কারণ থাকতে পারে না। জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ে পরাজিত হয়নি কমরেড তাজুল। তাজুলের জীবন-প্রদীপ নিভে গেছে। কিন্তু তার মৃত্যু হয়নি। মহৎ আদর্শ ও মহৎ জীবনের কোনো মৃত্যু নেই। তাজুল চিরঞ্জীব।

লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি

[email protected]

সর্বশেষ খবর