রবিবার, ১ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

কোরআনের সমঝদার এক সাহাবির কথা

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

কোরআনের সমঝদার এক সাহাবির কথা

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের পর যেসব সাহাবি কোরআনুল কারিমের সমঝদার হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ তাদের মধ্যে পঞ্চম। চার খলিফার পর কোরআনের সমঝদার সাহাবির নাম বলতে গিয়ে অনেকে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের নাম বলেন, অনেকে ইবনে মাসউদের নাম বলেন। কোরআনের ইলমে ভরপুর ছিল এই সাহাবির বুক। থাকবেই না বা কেন, তার বেড়ে ওঠা, জীবনযাপন সবই ছিল জীবন্ত কোরআন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘরে। খুব অল্প বয়সেই ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য অর্জন করেন মাসউদের ছেলে আবদুল্লাহ। ইসলাম গ্রহণের পর নবীজির খাদেম হিসেবে থেকে যাওয়ার আরজি করেন। আরজি মঞ্জুর হয়। যেন চির-সৌভাগ্যের দুয়ারটি খুলে যায় ইবনে মাসউদের জন্য।

নবীজির ঘরে থাকার কারণে নবীজিকে খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়। কোরআনে আয়াতবলে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আইন জারি করেনÑ কারও ঘরে ঢুকতে হলে অনুমতি নেওয়া ফরজ। কিন্তু ইবনে মাসউদের বেলায় তিনি বলেন, ‘আমার ঘরে ঢুকতে হলে তোমার জন্য অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই।’ কোরআনের সমঝদার হওয়ার পাশাপাশি কোরআনের একজন কারিও ছিলেন তিনি। বুখারির বর্ণনায় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেউ যদি চায়, কোরআন যে মধুর সুরে নাজিল হয়েছে, সে সুরে কোরআন শুনবে তবে সে যেন ইবনে মাসউদের তিলাওয়াত শোনে।’ ‘একদিনের ঘটনা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ইবনে মাসউদ! আমাকে পড়ে শোনাও। ইবনে মাসউদ বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! আপনার ওপর কোরআন নাজিল হয়েছে, আর আপনাকেই কোরআন পড়ে শোনাব আমি! রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ! আমাকেই পড়ে শোনাও। ইবনে মাসউদ সূরা নিসা তিলাওয়াত শুরু করলেন। পড়তে পড়তে এক পর্যায়ে তিনি ৪১ নম্বর আয়াতে এসে থামলেন। আয়াতের অনুবাদ হলো, “আর সেদিন কেমন হবেÑ যখন আমি সব উম্মতের মধ্য থেকে একজন করে সাক্ষী ডাকব এবং আপনি হবেন তাদের সাক্ষী।” ইবনে মাসউদ বলেন, আমি দেখলাম এ আয়াত শুনে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চোখ দিয়ে দরদর করে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আমি তিলাওয়াত শেষ করলাম। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কেউ যদি কোরআন পড়ে মজা পেতে চায়, সে যেন ইবনে মাসউদের মতো ধীরে-সুস্থে তিলাওয়াত করে।’ তাফসিরে তাবারি। ড. হুসাইন আজ-জাহাবি প্রণীত আত তাফসির ওয়াল মুফাসসিরুন নামক প্রামাণ্যগ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ কোরআন সম্পর্কে এত গভীর জ্ঞান রাখতেন যে, তিনি অনেকটা দাবি করেই বলতেন, কোরআনের এমন কোনো আয়াত নেই যার শানে নুজুল, বিষয়বস্তু, মর্মগত অর্থ আমার জানা নেই। আমি যদি কখনো জানতে পারি যে, কোনো আয়াত সম্পর্কে আমার চেয়ে বেশি কেউ জানেন, তবে যত কষ্টের সফরই হোক আমি নিজে তার কাছে গিয়ে ছাত্র হয়ে ইলম হাসিলের জন্য বসে পড়ব।’ ইমাম তাবারি তাঁর তাফসিরেও এ কথাটি উল্লেখ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদকে ঘিরে ইরাকে কোরআন শিক্ষা কেন্দ্র গড়ে ওঠে। এখানে অসংখ্য ছাত্রকে তিনি কোরআনের মর্ম শিখিয়েছেন। তাদের মধ্যে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) অন্যতম। কোরআন শেখার নিয়ম সম্পর্কে ইবনে মাসুদ নিজেই বলেন, ‘আমরা কোরআন শিখেছি হাতে-কলমে। একটি আয়াত পড়ে, আমল না করা পর্যন্ত পরের আয়াত আমরা শিখতাম না। এভাবে সূরা বাকারাহ শেষ করতে আমার তিন বছরের বেশি লেগেছিল।’ তাফসিরে ইবনে কাসির। কোরআনের এই জ্ঞানী সাহাবি ৫৯৮ খ্রিস্টাব্দে মক্কার তামিম গোত্রে জম্ম গ্রহণ করেন। হজরত ওমর (রা.)-এর আমলে তিনি কুফার চিফ জাস্টিসের দায়িত্ব পালন করেন। এ পদে দীর্ঘ ১০ বছর সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি তিনি কোরআন শিক্ষার কাজও চালিয়ে যান। হিজরি ৩২ সনে ৬০ বছর বয়সে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ এ পৃথিবী ছেড়ে মাবুদের ডাকে সাড়া দেন। 

লেখক : মুফাস্সিরে কোরআন ।

সর্বশেষ খবর