মশার আগ্রাসনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে নগরবাসী। পুরো বছরটা ভাগাভাগি করে নিচ্ছে কিউলেক্স আর এডিস মশা। সারা বছর ধরে থাকে কিউলেক্সের রাজত্ব। তবে সে রাজত্বে বর্ষা মৌসুমে এডিস মশা এমনভাবে থাবা বিস্তার করে যে সে সময় শুধু শোনা যায় এডিস মশার নাম। কারণ এ মশার কামড়ে মানুষ ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। কষ্টকর জ্বরে কাহিল করা শুধু নয়, প্রাণ কেড়েও নেয় সুযোগ পেলে। গত বছর তো ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দুই দশকের সম্মিলিত সংখ্যাকেও হার মানিয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। মশা নিধনে দুই সিটি করপোরেশন খরচ বাড়ালেও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মশা। রাজধানীতে মশক নিধনের জন্য ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাজেট ছিল ২১ কোটি টাকা। এ অর্থবছরে দুই সিটি মিলিয়ে মশক নিধনে বরাদ্দ দিয়েছে ৯২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বরাদ্দ দিয়েছে ৪৯ কোটি ৩০ লাখ আর দক্ষিণ সিটির বরাদ্দ ৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এ খাতে গত পাঁচ বছরে দক্ষিণ সিটিতে বরাদ্দ বেড়েছে ১৩৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ আর উত্তর সিটিতে ১২২ দশমিক ২২ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মশক নিধন খাতে ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, অন্যদিকে উত্তর সিটি করপোরেশন করেছে ২১ কোটি টাকা। এই সময়ে দক্ষিণ সিটি ১৮২ শতাংশ ব্যয় বাড়িয়েছে। বাজেট বাড়লেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি মশা। এডিস মশার মৌসুম শেষ হতেই রাজধানী দখল করেছে কিউলেক্স মশা। এর মধ্যে আগামী ১০ দিনে মশার ঘনত্ব রেকর্ড ছাড়াতে পারে এমন তথ্য উঠে এসেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায়। গবেষক দলের মতে, ড্রেন ও ডোবায় অগণিত ডিম দিয়েছে মশা। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে সারা দেশে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়ায় মশা জন্মানোর জন্য এটি উপযুক্ত সময়। এ ছাড়া ডিমগুলো আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ মশায় রূপান্তরিত হবে। অতি জরুরি ভিত্তিতে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়ে মশা জন্মানোর স্থানগুলোয় লার্ভিসাইড ছিটানো না হলে মার্চে মশার উৎপাত ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। মশার আগ্রাসন বন্ধে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো কোনো সমাধান নয়। বরাদ্দকৃত অর্থ সঠিক খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সে ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকায় অর্জন খুবই সীমিত। ঢাকার দেড় কোটি মানুষকে মশার জ্বালাতন থেকে রেহাই দিতে হলে সততার সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মশা নিধনে মানসম্মত ওষুধ কেনা ও তা ব্যবহারে নজর দিতে হবে। জনসচেতনতা গড়ে তোলার বিষয়টিও খুবই জরুরি।