সোমবার, ২ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

ভারতে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মানবতার জয় হোক

নূরে আলম সিদ্দিকী

ভারতে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মানবতার জয় হোক

আমেরিকা ও ভারতবর্ষ দুটি দেশই গণতন্ত্রের পীঠস্থান বললেও অত্যুক্তি হয় না। আমেরিকার গণতন্ত্র খুব সংক্ষিপ্ত শাসনতন্ত্রের দ্বারা পরিচালিত হলেও প্রকৃত অর্থে কনভেনশন ও গণতান্ত্রিক অনুশীলনের দ্বারা পরিচালিত একটি দেশ। আমেরিকার গৃহযুদ্ধবিধ্বস্ত পরিবেশে যারা আমেরিকাকে সব বিচ্যুতির ঊর্ধ্বে দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন, সেই সাত ফাউন্ডিং ফাদার অত্যন্ত তীক্ষ বিশ্লেষণের ভিতর দিয়ে অতি সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এই মননে একমত হয়েছিলেন, অতি ঢিলেঢালা বাঁধনের একটি ঐতিহ্যের আবিরে এবং পরস্পরের প্রতি সহনশীলতা ও সহমর্মিতার আঙ্গিকে আমেরিকার রাষ্ট্রসমূহকে একত্রিত রাখতে হবে। থাকা না থাকা ঐচ্ছিক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল হলেও অধিকারের সমন্বয় এবং রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধার বৈষম্য-বিবর্জিত বিস্তীর্ণ বিস্তারের মাধ্যমে এবং একমাত্র গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ৫০টি রাষ্ট্র আজ নিগূঢ় বন্ধনে আবদ্ধ। জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়। অন্যদিকে বিশাল বড় ও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র রাষ্ট্রের সবার জন্যই দুজন সিনেটর নির্বাচিত করার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিনিধি পরিষদের ৫৩৮ সদস্যের ভোটেই সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তাদের ইলেক্টর বলা হয়। নাগরিকের সংখ্যার তারতম্যের কারণে ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫৫ জন, টেক্সাসে ৩৮ জন ও নিউইয়র্ক ও ফ্লোরিডায় ২৯ জন ইলেক্টর নির্বাচিত হন। অন্যদিকে আলাস্কা, ডিলাওয়্যার, ভারমন্ট ও ওইয়োমিংয়ে সর্বনিম্ন তিনজন করে ইলেক্টর নির্বাচিত হন। তবে সিনেটে সবকটি রাষ্ট্রেরই প্রতিনিধি দুই সদস্যে বাঁধা। এর কোনো ব্যতিক্রম হওয়ার উপায় নেই। ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস বা নিউইয়র্ক দুটির বেশি সদস্যের দাবি কখনো তুলে নাই। এটি শুধু তাদের ঐতিহ্য নয়, এটি সংক্ষিপ্ত শাসনতান্ত্রিক অবয়বের দেশ আমেরিকার একসঙ্গে থাকার বা অগ্নিস্নাত নিষ্কলুষ গণতান্ত্রিক আভিজাত্যের সৃষ্টি করেছে। তারা সর্বক্ষেত্রেই নিজেদের আমেরিকান ভাবতেই ভালোবাসে। তাদের পূর্বপুরুষরা সবাই যে অভিবাসী, এটি তারা সবসময় স্মরণে রাখে। তাই অধুনা যারা অভিবাসী, তাদের প্রতিও তাদের বৈরিতা কম। অবশ্য অল্পকিছু তরুণ বা যুবক আছে, যারা নেতিবাচক মানসিকতা ধারণ করে। সময়ে অসময়ে কখনো বর্ণবিদ্বেষে, কখনো-বা অভিবাসী বিদ্বেষে তারা কিছু কিছু সামাজিক অপকর্ম, যথা- হত্যা, লুণ্ঠন এমনকি ব্যভিচার ধর্ষণও করে থাকে। কিন্তু আইন ও প্রশাসন সেখানে এতটাই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে যে, এর ব্যত্যয় ঘটতে পারে না। এবং অপরাধী যেই হোক না কেন, আইনের আওতার বাইরে যেতে পারে না। আমি বহুবার আমেরিকায় গিয়েছি এবং উপলব্ধি ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি- আইন সেখানে নিজস্ব গতিতে চলে। এবং আইনের প্রয়োগ সেখানে সবার জন্য সমান। অতি সূক্ষ্মভাবেও সেখানে আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার চলে না। তবে হ্যাঁ, খুব উচ্চমাত্রার আইনজীবী নিয়োগ করতে পারলে সম্পূর্ণ পরিত্রাণ না পেলেও অপরাধের শাস্তি কিছুটা শিথিল করা যেতে পারে।

নিবন্ধের এই পর্যায়ে একটু অপ্রাসঙ্গিক হলেও আমি আমার একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উল্লেখ করতে চাই। একবার নিউইয়র্ক থেকে বাফেলোতে আমরা ট্রেনে করে গিয়েছিলাম। স্টেশন থেকে আমাদের মোটেলের রাস্তাটুকু আমরা সিটি ম্যাপ থেকে জেনে নিয়েছিলাম। আমরা উঠে ট্যাক্সির মিটার চালু করার অনুরোধ করলে যিনি ট্যাক্সি চালাচ্ছিলেন তিনি ক্ষুব্ধ হন। সংক্ষিপ্ত পথে আমাদের মোটেলে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ অগ্রাহ্য করে তিনি তার মতো করে গাড়ি চালিয়ে প্রায় চার গুণ ভাড়া উঠিয়ে যখন আমাদের মোটেলে নিয়ে যান, তখন আমরা প্রায় চার গুণ ভাড়া দিতে অসম্মতি জানালে তর্ক-বিতর্ক চলাকালে আমি মোটেলের দিকে যাই পুলিশ ডাকার জন্য। অবস্থা বুঝে ট্যাক্সি ড্রাইভার নিজেই পুলিশ ডেকে আনেন। উল্লেখ্য যে, যেহেতু পুলিশ ডেকেছে ড্রাইভার, তাই পুলিশের বদ্ধমূল ধারণা, ড্রাইভারটি ক্ষতিগ্রস্ত ও অসহায় হয়ে তাদের সাহায্য চেয়েছে। অতএব, পুলিশ আমার কোনো কথাই শুনতে চাইল না। তার ধারণা অনুযায়ী ড্রাইভারের শুধু পক্ষই নিল না, ড্রাইভারের দাবি করা অযৌক্তিক সমুদয় অর্থ আমাকে দিতে বাধ্য করল। জরিমানাসহ আমাকে ডলার গুনতে হলো। গোটা আমেরিকায় সেটি আমার সবচাইতে তিক্ত অভিজ্ঞতা হলেও আমাদের গোটা পরিবার পুলিশের সিদ্ধান্তে বিস্ময়াভিভূত হয়েছিলাম। পরে বন্ধুবান্ধবের কাছে ঘটনার বিবরণের পরিপ্রেক্ষিতে জানতে পারলাম, যেহেতু ড্রাইভার পুলিশ ডেকেছে, সেহেতু পুলিশ ড্রাইভারকে সাহায্য করে তাকে বঞ্চিত হওয়ার হাত থেকে উদ্ধার করল। তবুও আমার ধারণা, ব্যতিক্রমধর্মী হলেও নন-আমেরিকানের ন্যায়সঙ্গত অভিযোগকে উপেক্ষা করে পুলিশ তখন সাদা আমেরিকানের পক্ষ অবলম্বন করেছে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আইনের বাহক পুলিশটির কর্মকান্ড ও আচরণে আজও আমি পক্ষপাতিত্ব ও বর্ণবাদের প্রভাব অনুভব করি। তবুও আমেরিকা গৃহযুদ্ধ উৎরে এসে এমন একটি জায়গায় পা রেখেছে, যার পূর্ণ ভিত্তিটা হলো গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক। আমেরিকা যখন পারমাণবিক শক্তিধর হয়ে পৃথিবীর একমাত্র মুরব্বি বনতে চেয়েছিল, তখনো আমেরিকার অভ্যন্তরে তীব্র আওয়াজ উঠেছিল- পারমাণবিক শক্তিতে নয়, চন্দ্র অবতরণের অহমে নয়, মানবতার সেবায় নিবেদিত হয়েই আমেরিকাকে অনন্য অদ্বিতীয় সত্তায় বিকশিত হতে হবে। এখানে জনান্তিকে জানিয়ে রাখি, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বব কেনেডি যখন ভারতবর্ষে এসেছিলেন, তখন তার সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে। দেশ স্বাধীন হলে ছাত্রলীগ ও ডাকসুর উদ্যোগে আমরা কেনেডি দম্পতিকে ছাত্র-জনসভার মাধ্যমে বিশাল আকারে সংবর্ধনা প্রদান করেছিলাম। এতে তারা অভিভূত ও বিমুগ্ধ হয়েছিলেন। বিমুগ্ধ চিত্তে কেনেডি দম্পতি ওই সভাতেই আমাকে বলেছিলেন- এত বিশাল জনসমাগম আমাদের বিস্ময়াভিভূত ও আশ্চর্যান্বিতই করেনি, উদ্বেলিত করেছে। বাংলার মানুষের হৃদয়ের উত্তাপ আমাদের হৃদয়কেও আলোড়িত ও ভীষণভাবে স্পর্শ করেছে। এর উত্তরে আমি বলেছিলাম, বাংলার মানুষ পারমাণবিক অস্ত্রে শক্তিধর নয়, কিন্তু তাদের হৃদয়ের উচ্ছ্বাস ও উত্তাপ সমগ্র বিশ্বকে আলোকিত করার শক্তি রাখে। কেনেডি দম্পতি বিস্ময়াভিভূত হৃদয়ে আমার দিকে চেয়ে থাকলেন। তাদের চোখগুলো জ্বলজ্বল করছিল। আমার মনে হয়েছিল ওই উজ্জ্বল চোখগুলোতে পরিস্ফুটিত হয়েছে বাংলার মানুষকে তারা সম্মান করে, বাঙালিদের উচ্চকিত হৃদয়কে তারা অভিবাদন জানায়Ñ স্যালুট করে।

সে যাই হোক, এই পরিচয়ের সুবাদে মূলত স্টেট ডিপার্টমেন্টের আমন্ত্রণে তাদেরই অতিথি হয়ে সেবার আমি আমেরিকায় গিয়েছিলাম। আমি যেখানেই যেতাম, স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন প্রতিনিধি আমার সঙ্গে থাকতেন। অবশ্য আমেরিকায় বছরের সেরা নাগরিক উপাধিপ্রাপ্ত শিকাগোর সিয়ার্স টাওয়ারের বাঙালি আর্কিটেক্ট ফজলুর রহমান খান সাহেবের ব্যক্তিগত আতিথেয়তায় তিন দিন কাটানোর সময় তারা আমাকে তাদের তত্ত্বাবধান ছাড়াই থাকার সুযোগ দিয়েছিলেন। ফজলুর রহমান সাহেব ও তার বিদেশিনী শ্বেতাঙ্গ স্ত্রীর আন্তরিক ও উচ্ছ্বসিত আতিথেয়তায় চরম পরিতৃপ্তির সঙ্গে মুক্ত বিহঙ্গের মতো তিনটি দিন আমার চরম আনন্দে কেটেছিল। শিকাগো এবং তার চারপাশের অনেক দর্শনীয় স্থানে যাওয়ার ও দেখার দুর্লভ সুযোগ ঘটেছিল। এত বিশাল মাপের একজন মানুষের এমন শিশুর মতো সরলতা অন্য কোনো ব্যক্তির মধ্যে আমি কখনো দেখিনি। ব্যক্তিগত সাহচর্য ছাড়াও গর্ব আমার এখানে, বঙ্গীয় সন্তান মরহুম ফজলুর রহমান সাহেব বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী যে, আকাশচুম্বী ভবনের উদ্ভাবক তিনি এবং তার অনুসরণে ও তার উদ্ভাবনী সংজ্ঞার অনুকরণেই বর্তমান সময়েও আকাশচুম্বী অট্টালিকাগুলো গড়ে উঠছে। সুউচ্চ অট্টালিকার কনসেপ্ট-এর উদ্ভাবক ওই গর্বিত বঙ্গ-সন্তান। আজকে বেদনাদায়ক হলেও বাস্তব, আমেরিকা রাষ্ট্রপ্রধান ডোনাল্ড ট্রাম্প তার অন্য পরিচয় যা হোক, তিনি যে ঘোরতর মুসলিমবিরোধী এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। এটি আমেরিকার সুদীর্ঘকালের রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে আদৌ যায় না। আমেরিকা বহু ধর্মের বহু বর্ণের মানুষের সম্মিলনে গড়ে ওঠা অভিবাসী অধ্যুষিত একটি দেশ। সেখানে ধর্মান্ধতা অচল। তবুও আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, চরম মুসলিমবিদ্বেষী ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই আমেরিকার রাষ্ট্রপ্রধান। এত কট্টর মুসলিমবিদ্বেষী ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বাভাবিকভাবেই তার দোসর হিসেবে খুঁজে নেবেন আরেক উগ্র সাম্প্রদায়িক মুসলিমবিদ্বেষী নরেন্দ্র মোদিকে। এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি গুজরাটে ধুতিতে কাচা মেরে গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় নেতৃত্ব দিয়েছিল। এ দলের নেতা-কর্মী সমর্থকরা হাতে তরবারি নিয়ে অনেক মুসলিম নরনারীকে হত্যাও করেছে। নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহর হাতে ভারতের মুসলমানদের ভবিষ্যৎ মারাত্মকভাবে আশঙ্কার সম্মুখীনÑ এটাই দিনে দিনে প্রতীয়মাণ হচ্ছে। সময় ও সুযোগ পেলে তারা আবার নেংটি বেঁধে মুসলিম নিধনে নেমে পড়বে, এ আশঙ্কা থেকেই যায়।

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে আজ যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টি হয়েছে, সেখানেও বিজেপির ইন্ধন আছে বলে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ভারত আমাদের বিরাট প্রতিবেশী ও ঐতিহ্যমন্ডিত একটি দেশ। সেখানে সাম্প্রদায়িকতা দানা বাঁধলে আমরা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারি না। তাই ভারতের বিশাল মানবতাবাদী জনগোষ্ঠীর কাছে আমাদের আবেদনÑ যে কোনো মূল্যে সহিংস হিংস্র সাম্প্রদায়িক শক্তি বিজেপিকে আপনাদের রুখতে হবে। নইলে শুধু মুসলমানদের জীবনীপাতই ঘটবে না। দাদাভাই নওরোজি, মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু, রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, শওকত আলী, মোহাম্মদ আলী, সুবাস চন্দ্র বোস, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামের উদার ভারতের সব ঐতিহ্য মুখ থুবড়ে পড়বে। যা হবে অধুনা বিশ্বের সবচাইতে কালো অধ্যায়।

সেই ব্রিটিশ ভারত থেকে শুরু করে যুগে যুগে ভারতবর্ষ বহু ধর্মের বহু মননের একটি সমন্বিত ও আলোকিত দেশ হিসেবে পৃথিবীতে দ্যুতি ছড়িয়েছে। এই ভারতবর্ষের অনেক মনীষীর জ্ঞানের আলোকপ্রভা, ঐতিহ্যমন্ডিত ও অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ভারতের বিকীর্ণ সূর্যালোকে পাশ্চাত্য বিশ্বের চোখ ঝলসে দিয়েছে। পরাধীন ভারতে স্বাধীনতার হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সব একযোগে হাতে হাত ধরে যেভাবে পথপরিক্রমণ করেছে, পৃথিবীর ইতিহাসে তার নজির বিরল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কলমে-

“কেহ নাহি জানে কার আহ্বানে কত মানুষের ধারা

দুর্বার স্রোতে এলো কোথা হতে, সমুদ্রে হলো হারা।

হেথায় আর্য, হেথা অনার্য, হেথায় দ্রাবিড় চীন-

শক-হুন-দল পাঠান-মোগল এক দেহে হলো লীন।

পশ্চিম আজি খুলিয়াছে দ্বার, সেথা হতে সবে আনে উপহার,

দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে, যাবে না ফিরে-

এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।

এসো হে আর্য, এসো অনার্য, হিন্দু-মুসলমান।

এসো এসো আজ তুমি ইংরাজ, এসো এসো খ্রিস্টান।

এসো ব্রাহ্মণ, শুচি করি মন ধরো হাত সবাকার।

এসো হে পতিত, হোক অপনীত সব অপমানভার।

মার অভিষেকে এসো এসো ত্বরা, মঙ্গলঘট হয়নি যে ভরা

সবার পরশে পবিত্র করা তীর্থনীড়ে-

আজি ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।”

সেই ভারতকে নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহরা যদি হিন্দুস্তানে রূপান্তরিত করতে চান, তাহলে তাদের সেই স্বপ্ন অলীক হবে কি-না জানি না। কিন্তু ভারতের ঐতিহ্যকে নিষ্ঠুরভাবে কলঙ্কিত করবে- সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। যে ভারত গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা ও মানবতার শত শত বছরের স্রোতধারায় তিল তিল করে গড়ে উঠেছে, সেই ভারতে নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে সবকিছুকে তছনছ করে দেবে- এটা ভাবলেও সমস্ত হৃদয় কুঁকড়ে কেঁদে ওঠে। অসাম্প্রদায়িক ও মানবতাবাদী ভারতীয়দের কাছে আমাদের আহ্বান, মানবতা-বিদ্বেষী ধর্মান্ধদের রুখে দিন। এরা শুধু মুসলমানদের নয়, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ভারতের যে গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে, তার পাদপীঠকে ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবে। সচেতন ভারতবাসী যত শিগগিরই এটি অনুধাবন করবেন, সমগ্র ভারতের জন্য, তার ঐতিহ্যের জন্য, মননের জন্য ও মানবতার জন্য ততই মঙ্গল। সেই মঙ্গলের জন্য তৃষিত হৃদয়ে অপেক্ষায় রইলাম।

লেখক : স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা।

সর্বশেষ খবর