সোমবার, ২ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু এক ও অভিন্ন

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু এক ও অভিন্ন

যত দিন রবে পদ্মা মেঘনা গৌরী যমুনা বহমান/ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান। মার্চ এলেই প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে সর্বাগ্রে যে নামটি উচ্চারিত হয় এবং মনের পাটাতনে আলোড়ন সৃষ্টি করে তিনিই শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতির পিতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, যার বদৌলতে আজ আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক। একাত্তর থেকে এ পর্যন্ত যত মার্চ আমরা পেরিয়ে এসেছি তার থেকে ২০২০ সালের মার্চ আমাদের সামনে এক অভিন্ন মাত্রায় আজ উপস্থিত। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পূর্ণ হবে আর কয়দিন পর, ১৭ মার্চ। তাই আগামী ১৭ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত, এই ১২ মাস জাতীয়ভাবে মুজিববর্ষ পালন করা হবে। তার কীর্তি আর মহত্ত্বের মহিমায় বাঙালির হৃদয় ভরপুর। শেখ মুজিবের অমর কীর্তি বাংলাদেশ। আর শ্রেষ্ঠ মহত্ত্ব, বাঙালির অফুরন্ত ভালোবাসায় বারবার নিজের জীবনের ওপর বাজি ধরছেন এবং শেষ পর্যন্ত জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন বাঙালি ও বাংলাদেশের স্বার্থের ব্যাপারে তিনি কারও সঙ্গে আপস করবেন না। তাই বাংলাদেশ আর শেখ মুজিব দুটি সমার্থক শব্দ। একটি বাদ দিলে অন্যটির অস্তিত্ব থাকে না। মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে দখলদার বাহিনীকে সম্পূর্ণ পরাজিত করে স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস বিশ্বে বিরল, যেটা আমরা করেছি ১৯৭১ সালে। এটাও বিরল ঘটনা যে, দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর প্রায় ৯৩ হাজার সেনা সদস্যও বিনাশর্তে প্রকাশ্য জনসম্মুখে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে পাঁচ বছর যুদ্ধ করার পর ১৭৮৩ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে। কিন্তু ব্রিটিশ বাহিনী আত্মসমর্পণ করেনি। তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় ১৭৮৩ সালে প্যারিসে স্বাক্ষরিত চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার আমেরিকার স্বাধীনতাকে মেনে নেয়। ভিয়েতনামের ইতিহাসও একই রকম। ১৯৪৫ সালে হো চি মিন ভিয়েতনামের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ২৮ বছর ধরে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলার পর ১৯৭৩ সালে প্যারিস শান্তিচুক্তির মধ্য দিয়ে আমেরিকান দখলদার বাহিনী প্রত্যাহৃত হলে ভিয়েতনামের স্বাধীনতার পথ সুগম হয়। ভিয়েতনামের ক্ষেত্রেও দখলদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করেনি। সুতরাং মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন এবং পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের অনন্য উদাহরণ সৃষ্টির পেছনে এককভাবে যার ভূমিকা কাজ করেছে তিনিই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

শেখ মুজিব ছিলেন ক্ষণজন্মা মহান নেতা। ওই সময়ে তার জন্ম না হলে এবং গত শতকের ষাটের দশকে বাঙালির ক্যারিশমেটিক ও আপসহীন শীর্ষ নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আবির্ভাব না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলার স্বার্থকে কেন্দ্র করে যত ঘটনা ঘটেছে, যত আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে তার প্রত্যেকটির প্রধান চালকের ভূমিকায় ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যদিও ষাটের দশকের মধ্যবর্তী সময়ের আগ পর্যন্ত রাজনীতির দলীয় কাঠামোতে তিনি শীর্ষ অবস্থানে ছিলেন না। কিন্তু ওই সময়ের দিকে তাকালেও দেখা যায় অন্য সিনিয়র নেতারা পাকিস্তানিদের সঙ্গে অনেক সময় আপস করলেও শেখ মুজিবই একমাত্র নেতা যিনি বাঙালির স্বার্থের প্রশ্নে একটি বারের জন্যও আপস করেননি। পাকিস্তানি শাসকদের সব লোভনীয় প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে দু-একটি উদাহরণ দিই। ১৯৫৫ সালের ঘটনা। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কাউকে কিছু না জানিয়ে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারে প্রধানমন্ত্রী বগুড়ার মোহাম্মদ আলীর মন্ত্রিসভায় আইনমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন। বঙ্গবন্ধু খবর পেয়ে করাচিতে গিয়ে সোহরাওয়ার্দীর সামনে হাজির হলেন। শেখ মুজিবকে দেখেই সোহরাওয়ার্দী বললেন, ‘রাগ করছ বোধ হয়।’ বঙ্গবন্ধু উত্তরে বললেন, ‘রাগ করব কেন স্যার, ভাবছি সারা জীবন আপনাকে নেতা মেনে ভুলই করেছি কিনা। আমার মনে হয় আপনাকে ওরা ট্র্যাপ করেছে। ফল খুব ভালো হবে না, কিছুই করতে পারবেন না। যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন তাও শেষ করতে চলেছেন’ (অসমাপ্ত আত্মজীবনী পৃ-২৮৬)। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর অনুমানই ঠিক হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর দূরদৃষ্টি এবং বাঙালির স্বার্থের প্রশ্নে আপসহীনতার আরেকটি উদাহরণ দিই। এটিও ১৯৫৪-৫৫ সালের কথা। পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান চূড়ান্তকল্পে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা চলছে। পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যায় যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে তার সুবিধা ও প্রভাব পাকিস্তানের রাজনীতিতে যেন না থাকে সে জন্য পাঞ্জাবি আমলা ও রাজনৈতিক চক্র অত্যন্ত সুকৌশলে ষড়যন্ত্রের চাল চালে। সমগ্র পশ্চিম পাকিস্তান মিলে একটি প্রদেশ এবং পূর্ব পাকিস্তানকে আরেকটি প্রদেশ করার পরিকল্পনা নেয়। উভয় প্রদেশের জন্য জাতীয় পার্লামেন্টে আসন সংখ্যা থাকবে সমান সমান, সংখ্যাসাম্য নীতি সংবিধানে সংযোজনের উদ্যোগ নেয়। শহীদ সোহরাওয়ার্দী তখন পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী এবং নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি। সোহরাওয়ার্দী সংখ্যাসাম্য নীতি মেনে নিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান এই সংখ্যাসাম্য নীতির বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাতে থাকেন। বঙ্গবন্ধুর ভরসা ছিল মওলানা ভাসানী, তখনো তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি। কিন্তু দেখা গেল কী কারণে যেন ভাসানীও অতি সহজে সংখ্যাসাম্য নীতি মেনে নিলেন (ইতিহাসের রক্তপলাশ, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী পৃ-১৪৭-৪৮)। ১৯৬৯ সালে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুকে নমনীয় করার জন্য এবং বাঙালিদের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর ছদ্মবেশ হিসেবে সংখ্যাসাম্য নীতি, বাতিল করে দেন। কিন্তু এই যে যতটুকু ছাড় ইয়াহিয়া খান দিলেন তার লাগাম নিজের হাতে রাখার জন্য ঘোষণা করলেন লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার বা এলএফও (সূত্র : অ্যান্তনি মাসকারেনহাস-দ্য রেইপ অব বাংলাদেশ; পৃ-৬৭)। তখন মওলানা ভাসানী, আতাউর রহমানসহ অনেকেই বলেছিলেন লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডারের অধীনে নির্বাচনে গিয়ে কোনো লাভ হবে না, জয়লাভ করলেও ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না। পাকিস্তানি সামরিক অফিসার সিদ্দিক সালিক তার লিখিত উইটনেস টু সারেন্ডার গ্রন্থের প্রথম অনুচ্ছেদ উল্লেখ করেছেন, ‘শেখ মুজিব তার জ্যেষ্ঠ নেতাদের নির্বাচনের পূর্বে বলেছিলেন নির্বাচন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি এলএফও টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলবেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাই তার একমাত্র লক্ষ্য।’ ইয়াহিয়া খান সংখ্যাসাম্য নীতি বাতিল করার ফলে জাতীয় পার্লামেন্টে সমগ্র পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত ৩০০টি সরাসরি নির্বাচনী আসনের মধ্যে জনসংখ্যা হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান পায় ১৬২টি আসন আর পশ্চিম পাকিস্তান পায় ১৪৮টি আসন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২টি সরাসরি নির্বাচনী আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৬০টি আসনে বিজয়ী হয়। সমগ্র পাকিস্তানের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাওয়া বিজয়ী দল হয়ে আওয়ামী লীগ এককভাবে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের অধিকার পায়। কিন্তু সংখাসাম্য নীতি বহাল থাকলে দুটি আসনে হেরে যাওয়ার কারণে সমগ্র পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হতে পারত না। কারণ পশ্চিম পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ কোনো আসন পায়নি। সে রকম হলে আওয়ামী লীগ এককভাবে কেন্দ্রে সরকার গঠনের দাবিও করতে পারত না। আর তাহলে ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনায়ও বসতে চাইত না। সমগ্র পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ার অজুহাতে পাকিস্তানিরা ছয় দফাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করার সুযোগ পেত। বিশ্বজনমত আমাদের পক্ষে থাকত না। ভারত একেবারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সমর্থনে যে বিশাল ভূমিকা রেখেছে সেটিও ভারতের জন্য কঠিন হতো। বাংলাদেশের স্বাধীনতা হতো সুদূরপরাহত। ছয় দফা প্রদান ও ঘোষণার বেলায়ও দেখা যায় বঙ্গবন্ধুকে একলা চলতে হয়েছে। তখনকার সময়ে পূর্ব-পাকিস্তানের সব সিনিয়র বাঙালি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ছয় দফার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তাদের মতে এটা বিচ্ছিন্নবাদিতা ও দেশদ্রোহের শামিল, আইয়ুব খান সবাইকে ফাঁসিতে ঝোলাবে। তখন বঙ্গবন্ধু একাই এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং ছয় দফাকে দলের প্রধান কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করে আওয়ামী লীগকে নতুনভাবে পুনর্গঠিত করেন। তারপর ছয় দফা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শুরু করেন আপসহীন সংগ্রাম। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে ছয় দফার ওপর সম্পূর্ণ অনড় থাকার কারণেই স্বাধীনতার পথে আমরা দ্রুত এগোতে থাকি এবং সেই পথ ধরেই একাত্তরের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার চূড়ান্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। সুতরাং যে কোনো বিশ্লেষণই বলবে ছয় দফাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য এক নম্বর অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। নেতৃত্বের বিচারে এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব বঙ্গবন্ধুর একার। ছয় দফা থেকে সরে যাওয়ার বিনিময়ে আইয়ুব খান প্রস্তাব করেন মোনয়েম খানের পরিবর্তে শেখ মুজিবকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর করা হবে। একই সঙ্গে আইয়ুবের ছেলে গওহর আইয়ুবের মালিকানাধীন গান্ধারা (বর্তমান বাংলাদেশের প্রগতি) ইন্ডাস্ট্রির ৪৯ ভাগ শেয়ার বঙ্গবন্ধুকে দেওয়া হবে। এই শেয়ার কেনার টাকার ব্যবস্থাও আইয়ুব খান করবেন। এই প্রস্তাব বঙ্গবন্ধু শুধু ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করেননি, বেগম মুজিব প্রস্তাবকারীকে বলেন, শেখ মুজিবকে মোনয়েম খান বানাবার চেষ্টা করবেন না (আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা; পৃ-১৩০)।

ইয়াহিয়া খানের এলএফও এবং ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর দক্ষিণ বাংলায় ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের অজুহাতে পূর্ব পাকিস্তানের অনেক সিনিয়র নেতা নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন? নির্বাচন স্থগিত করার দাবি তোলেন। মওলানা ভাসানী, আতাউর রহমান খান, ইউসুফ আলী চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক পার্টির সভাপতি এস এম সোলায়মান নির্বাচনে ভোট দেননি (ইত্তেফাক-১০ ডিসেম্বর ১৯৭০)। কিন্তু নির্বাচন স্থগিত করার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দৃঢ় প্রতিবাদ এবং বঙ্গবন্ধুর আপসহীন অবস্থানের কারণে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মাত্র নয় মাসে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনে ভারতের বিশাল ভূমিকা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদানের জন্য একাত্তরের ৩১ মার্চ ভারতের পার্লামেন্টে প্রস্তাব গ্রহণ, লাখ লাখ শরণার্থীর জন্য সীমান্ত খুলে দেওয়াই শুধু নয়, স্বাগত জানানোর ব্যবস্থা, যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং শুরু থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধ সরঞ্জামাদি প্রদানের সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে নতুন একটি রাষ্ট্রের জন্ম হবে তার শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে পূর্ব বোঝাপড়া ব্যতিরেকে এটা হতে পারে না। বঙ্গবন্ধু তাঁর দূরদৃষ্টি দিয়ে বুঝেছিলেন সশস্ত্র যুদ্ধ ব্যতিরেকে বাংলাদেশকে স্বাধীন করা যাবে না এবং তার জন্য ভারতের সর্বাত্মক সমর্থন ও সহযোগিতার প্রয়োজন হবে। বঙ্গবন্ধু পূর্ব থেকে সব বোঝাপড়া ও ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন বলেই যুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভারতের পক্ষ থেকে সব কিছু করা সম্ভব হয়। তারপর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অফুরন্ত শক্তির আধার ছিল বঙ্গবন্ধু। জয় বাংলা স্লোগান ও ৭ মার্চের ভাষণ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের টনিক। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে মৃত্যু অবধারিত জেনেও মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুর বাঙ্কারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু করে একাত্তর এবং স্বল্প সময়ে মুক্তিযুদ্ধের সফল সমাপ্তি, সব ঘটনার বিচার-বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুর সীমাহীন ত্যাগ ও সাহস এবং একক সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। একবার ভেবে দেখুন, পাকিস্তানি শাসকদের লোভনীয় প্রস্তাবের প্রলোভনে পড়ে বঙ্গবন্ধু যদি গভর্নর, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী হতেন তাহলে বাংলাদেশ কি স্বাধীন হতো? সত্তরের নির্বাচন না হলে এবং নির্বাচনী ১৬২টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ এককভাবে বন্দী ১৬০টি আসন না পেত তাহলে কি এত স্বল্প সময়ে দেশ স্বাধীন হতো? ছয় দফা নিয়ে বঙ্গবন্ধু যদি এককভাবে এগিয়ে যাওয়ার সাহস না দেখাতেন এবং একাত্তরে সেটি নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আপস করতেন, তাহলে কি বাংলাদেশ স্বাধীন হতো? ভারতের বিশাল সমর্থন ও সর্বাত্মক সহযোগিতার বোঝাপড়া ও ব্যবস্থা যদি বঙ্গবন্ধু পূর্ব থেকে না করে রাখতেন তাহলে কি হতো? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরই বলে দেয় বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু এক ও অভিন্ন।

লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

[email protected]

সর্বশেষ খবর