সরকার পরিচালনা এবং দেশের উন্নয়নে রাজস্বের বিকল্প নেই। অথচ ২৭ হাজারের বেশি রাজস্ব-সংক্রান্ত মামলায় ঝুলে আছে ৪১ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব। মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তা আদায় করতে পারছে না। বিচার বিভাগের দীর্ঘসূত্রতায় এ অর্থ কবে আদায় হবে, সে নিশ্চয়তা পাওয়াও দায় হয়ে পড়েছে। স্বার্থান্বেষীদের মামলাবাজির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়া। আইনজ্ঞদের মতে, রাজস্ব-সংক্রান্ত মামলা বেশিদিন ঝুলে থাকা মানে সরকারের কোষাগারের ওপর ধারাবাহিকভাবে চাপ সৃষ্টি হওয়া; যার ভোগান্তি জনগণকেই ভুগতে হয়। বর্তমানে রাজস্ব-সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির জন্য হাই কোর্টে একাধিক বেঞ্চ নির্ধারিত থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। বেঞ্চ বৃদ্ধির পাশাপাশি এসব মামলা নিষ্পত্তিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এনবিআরের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, সারা দেশে রাজস্ব-সংক্রান্ত ২৭ হাজার ৭২৫টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এসব মামলার বিপরীতে সরকারের রাজস্ব জড়িত ৪১ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে উচ্চ আদালতে রিট, আপিল ও ট্রাইব্যুনালে অন্যান্য ১৮ হাজার ৭০টি কাস্টমস ও বন্ড-সংক্রান্ত মামলায় ৫ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা আটকে আছে। মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) সংশ্লিষ্ট ২২ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা আটকে আছে ৯ হাজার ৩০৫টি মামলায়। এ ছাড়া আয়কর-সংক্রান্ত ৩৫০টি মামলায় ১২ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় আটকে রয়েছে। রাজস্ব নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে করদাতা কিংবা ব্যবসায়ীরা চাইলে আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন। বিভিন্ন সময় এমন বিরোধে করদাতারা আদালতে গিয়েছেন। তবে সম্প্রতি এ প্রবণতা বেড়েছে। যে হারে রাজস্ব-সংক্রান্ত মামলা হচ্ছে, নিষ্পত্তির হার সে তুলনায় ধীরগতিতে হওয়ায় দিন দিন মামলার সংখ্যা বাড়ছেই। রাজস্ব আদায়ের ধারা নির্বিঘ্ন রাখতে এ-সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে হবে। নইলে রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়ায় জটিলতা সৃষ্টি হবে। মতলববাজরা মামলাকে ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করে সময় ক্ষেপণের সুযোগ নিতে পারে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নিশ্চয়তাবিধানে প্রধান বিচারপতির শরণাপন্ন হতে পারে রাজস্ব বিভাগ। আদালতের বাইরে সমঝোতার মাধ্যমে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায় কিনা সে
বিষয়েও ভাবা দরকার। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করলে সরকারের রাজস্ব ভান্ডার সমৃদ্ধ হবে। এ মুহূর্তে যার প্রয়োজন অনস্বীকার্য।