ইসলাম কোনো ধরনের অন্যায়কে সমর্থন করে না। যারা অবৈধ পথে উপার্জন করে তাদের প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই কঠোর। ইসলামী বিধানে বান্দার হককে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যেসব কারণে বান্দার হক লঙ্ঘন হয় তার মধ্যে অবৈধ পথে উপার্জন অন্যতম। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য। ইবাদত কবুলের অন্যতম শর্ত হালাল রিজিক। শুধু ইবাদত কবুলের শর্তই নয়, বরং হালাল রিজিক আল্লাহর পক্ষ থেকে খাস রহমত-বরকত প্রাপ্তির অন্যতম উপায়। আর রহমত-বরকত মানুষকে দুনিয়া-আখিরাতে সম্মানিত করে। পক্ষান্তরে অবৈধভাবে উপার্জিত সম্পদ শুধু ইবাদত কবুলের অন্তরায়ই নয়, বরং তা ইহকাল-পরকালে অপমানিত করে। হালাল রিজিক গ্রহণকারীর অন্তরাত্মা প্রশান্তি লাভ করে, পক্ষান্তরে অবৈধভাবে উপার্জিত সম্পদ আহারকারীর অন্তরে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। হারাম পথে উপার্জিত সম্পদ আহারকারীর ভয়াবহতা সম্পর্কে হজরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, ‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে শরীর হারাম মাল দ্বারা লালিত তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ অন্য বর্ণনায় হজরত ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ১০ টাকা দিয়ে কোনো কাপড় কিনল, যার ভিতর একটি ছিল হারাম টাকা, যতক্ষণ পর্যন্ত ওই কাপড় তার পরনে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার নামাজ কবুল হবে না।’ এ হাদিসে হারাম আয় কতটা অগ্রহণযোগ্য তা স্পষ্ট করা হয়েছে।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনো বান্দা হারাম পথে উপার্জিত অর্থ দান-খয়রাত করলে তা কবুল হয় না। তা নিজ কাজে ব্যয় করলে তাতে বরকত পায় না। আর ওই সম্পদ উত্তরাধিকারীর জন্য রেখে গেলে তা তার জন্য জাহান্নামের পাথেয় বলেই বিবেচিত হবে।’ মুসনাদে আহমদ।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে সাদ! তোমার আহার পবিত্র বানাও, তাহলে তুমি মুস্তাজাবুদ দাওয়াত (যার দোয়া তৎক্ষণাৎ কবুল হয়) হতে পারবে। কসম সেই সত্তার যার হাতে আমি মুহাম্মদের প্রাণ। বান্দা হারাম লোকমা নিজ উদরে নিক্ষেপ করলে ৪০ দিন পর্যন্ত তার কোনো আমল কবুল হয় না। বান্দার শরীরের সেই গোশত অবৈধ উপার্জন দ্বারা উৎপন্ন, জাহান্নামই তার উপযুক্ত স্থান।’ ইমাম তাবরানি। ওলামায়ে কিরামদের অভিমত, জোর করে অর্থসম্পদ আদায়, আমানত আত্মসাৎ, প্রবঞ্চনা, চুরি, জালিয়াতি, সুদ, ঋণের অর্থ অস্বীকার, অসত্য সাক্ষ্য দেওয়া, এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ, ঘুষ লেনদেন, ওজনে কমবেশি করা, উল্লেখ না করে দোষযুক্ত পণ্য বিক্রি করা, জুয়া, লটারি, বাণ-জাদুটোনা, ভাগ্য গণনা, যথার্থ মূল্য গোপন করে অধিক মূল্য উল্লেখ করে পণ্যদ্রব্য বিক্রি, অর্থের বিনিময়ে ক্রেতাকে পণ্যের খোঁজ দেওয়া, স্বাধীন মানুষকে দাসরূপে বিক্রি, মদ ও শূকর এবং অন্য নিষিদ্ধ জিনিস বিক্রয়লব্ধ সম্পদ হারাম উপার্জনের শামিল। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের অবৈধভাবে উপার্জিত হারাম সম্পদ থেকে হেফাজত করুন এবং বৈধ পথে হালাল উপার্জনের তৌফিক দান করুন।ইসলামবিষয়ক গবেষক।