শনিবার, ৭ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

আল্লাহর প্রিয়জনদের কোনো ভয় নেই

মুফতি মিজানুর রহমান , সিনিয়র পেশ ইমাম , বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের আলোচনায় পবিত্র কালামে পাকে ঘোষণা করা হয়েছে, খবরদার! নিশ্চয় আল্লাহর প্রিয়জনদের কোনো ভয় নেই, না তারা চিন্তিত হবে। যারা ইমান আনয়ন করেছে এবং যারা ভয় করে (আল্লাহকে)। তাদের জন্য রয়েছে ইহকাল ও পরকালে সুসংবাদ। আল্লাহর কথার কোনো ব্যত্যয় ঘটে না। এটাই মহাসাফল্য। (সূরা ইউনূস-৬৪-৬৫) প্রকাশ থাকে যে, এখানে আল্লাহ আল্লাহর ওলি বা বন্ধুদের পরিচয়ে স্পষ্ট আয়াতে ঘোষণা করেছেন, যারা ইমানদার হবে, আল্লাহকে ভয় করবে তারাই হচ্ছেন আল্লাহর ওলি বা বন্ধু। তবে প্রথম শর্ত হলো, যারা ইমানদার বা নির্ভেজাল আল্লাহ ও বিশ্বাসী হবে তারা ওলি হতে পারবেন যদি আল্লাহকে যথাযথ ভয় করেন। তাদের ভয় ও চিন্তা নেই- এ বাক্যের তাফসিরে আল্লামা ইমাদুদ্দীন ইবনে কাসীর আলাইহির রাহমাত বলেন, আখেরাতে তাদের কোনো ভয় থাকবে না এবং দুনিয়াতে কোনো সম্পদ না পাওয়ার বেদনায় তারা ব্যথাতুর হবে না। তবে অপরাপর মুফাসসিরীনে কেরাম বলেন, দুনিয়া এবং আখিরাতে কোথায়ও তাদের কোনো ভয় ও চিন্তা নেই। কারণ তারা আল্লাহর উদ্দেশে কাউকে ভালোবাসেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কারও সঙ্গে দুশমনী রাখেন। বোখারি শরিফের এক হাদিসে আছে, হজরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সঙ্গে শত্রুতা করবে, আমি তার সঙ্গে অবশ্যই যুদ্ধ ঘোষণা করলাম। যেসব বস্তু দ্বারা বান্দা আমার নৈকট্য লাভ করে তন্মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রিয় বস্তু হলো ফরজসমূহ। আর বান্দা বরাবরই তার নফল বা অতিরিক্ত কাজের মাধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জন করে থাকে। শেষ পর্যন্ত আমি তাকে এতটাই ভালোবাসি যে, আমি তার কান হয়ে যাই যে কান দ্বারা সে শুনে। আর আমি তার চোখ হয়ে যাই যে চোখ দ্বারা সে দেখে। আমি তার হাত হয়ে যাই যে হাত দ্বারা সে ধরে। আমি তার পা হয়ে যাই যে পা দ্বারা সে চলে। আর যদি সে আমার কাছে কোনো আবদার করে আমি অবশ্যই তা রক্ষা করি। যদি সে আশ্রয় প্রার্থনা করে আমি তাকে অবশ্যই আশ্রয় প্রদান করি। (বুখারি ২য় খ- ৯৬৩ পৃষ্ঠা)। আল্লাহ তার হাত-পা হয়ে যাওয়ার অর্থ হাক্বিক্বি অঙ্গ হওয়া নয়, বরং এ কথা দ্বারা মুমিন মোত্তাকি ব্যক্তিটি আল্লাহর মহব্বতের আতিশয্যে এতটাই উন্নীত হয়ে যান যে, তার হাত-পা, চোখ, কান তথা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা কৃত কার্যাদিকে আল্লাহর নির্দেশিত কর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া-ই উদ্দেশ্য। সুবহানাল্লাহ। আল্লাহর এমনই একজন প্রিয় বান্দা ছিলেন, শায়খ মুঈনুদ্দিন চিশতি (রহ.) যিনি খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতি নামে আমাদের এ উপমহাদেশে বেশ পরিচিত। হজরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতি মধ্য এশিয়ার খোরাসানের অন্তর্গত ইরান ও আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী জেলার সঞ্জর নামক গ্রামে ১১৩৮ ইংরেজি ৫৩৭ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন। হজরত প্রথমে তার পিতার কাছ থেকে দিনি শিক্ষা অর্জন করেন। তিনি সাত কিংবা নয় বছর বয়সে পবিত্র কোরআন তরজমাসহ মুখস্থ করেন। অতঃপর ১৩ বছর পর্যন্ত পিতার সার্বিক তত্ত্বাবধানে কোরআন, হাদিস, ফিকাহ, উসুল, তাফসির, আরবি, সাহিত্য ব্যাকরণ, মানবিক, হিকমত দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন। তাছাড়া তিনি প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হজরত হুসামুদ্দীন (রহ.)-এর কাছে দীর্ঘ ৫ বছর অধ্যয়ন করেন। চিশতি (রহ.) ১৫ বছর বয়সে এলমে তাসাওফ সম্পর্কিত মূল্যবান একটি গ্রন্থ প্রণয়ন করেছিলেন, তিনি তাসাওফ তত্ত্বে অগাধ জ্ঞান অর্জনের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। তারপর তার ওস্তাদ হজরত হিসাম উদ্দীন বুখারির নির্দেশক্রমে তিনি হজরত খাজা ওসমান হারনী (রহ.)-এর কাছে মুরিদ হতে যান। নিশাপুরের কাছে হারন নামের একটি ছোট শহরে বাস করতেন এই মহাসাধক হজরত ওসমান হারনী (রহ.)। তিনি ছিলেন শরীফ জিলানীর মুরিদ ও প্রধান খলিফা।  তার কাছে হিজরি ৫৬০ সালের ১১ শাওয়াল জোহরের নামাজের পর চিশতি (রহ.) মুরিদ হয়েছিলেন।

সর্বশেষ খবর