সোমবার, ৯ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা
খাসিয়া সমাজ

নারী থেকেই সভ্যতার সূচনা

খাসিয়া প্রবাদ মতে, নারী থেকেই সভ্যতার সূচনা। মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার দরুন মেয়েরা অন্য গোত্রের পছন্দসই কোনো যুবককে বিয়ে করে ঘরজামাই করে রাখে। স্বগোত্রে বিবাহ নিষেধ। স্বগোত্রে কোনো ছেলেমেয়ে বিয়ে করলে তারা সম্পত্তির অধিকার হারায়, গ্রাম থেকে বহিষ্কৃত হয় এবং মৃত্যুর পর এদের কবর দেওয়া হয় না। অধিকাংশ বিবাহই হয় মেয়েদের অগ্রভূমিকায় পূর্বানুরাগের ভিত্তিতে। মেয়েটি ভালোবাসার পাত্রকে স্বগৃহে দাওয়াত করে। কখনো কখনো ২/৪ দিন একসঙ্গে বসবাস করে। উভয়ের মধ্যে অনুকূল মতবিনিময়ের পর অভিভাবককে জানানো হয়। উভয়পক্ষের বৈঠকে বিবাহ দিবস স্থির হয়। পুরুষ বরযাত্রীরা বরকে সাদা ধুতি, চাদর, পাগড়ি পরিয়ে কনের বাড়িতে রওনা হয়। যাওয়ার সময় মাতৃস্থানীয় নারীরা ছেলেকে আশীর্বাদ করে। কনে পক্ষ, অগ্রগামী হয়ে এদের অভ্যর্থনা করে নিয়ে যায়। খাসিয়া ধর্মগুরুর মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন হয় এবং নবদম্পতিকে ‘ধনে-জনে অদৈন্য’ প্রার্থনা করে, তারপর সুস্বাদু আহার পর্ব অনুষ্ঠিত হয় এবং বরকে রেখে মধ্যরাতে বরযাত্রী বিদায় নেয়। এ সময় দেবতাকেও মদ ও শুঁটকি মাছ দিয়ে ‘ভোগ’ দেওয়া হয়। কনের ভাইবোনরা বরের আপন ভাইবোনের মতো বিবেচিত। পূর্বানুরাগ ছাড়াও, অভিভাবকদের আলোচনায় বিয়ে হয়ে থাকে। বিয়ের পর কন্যার মাতৃগৃহের পাশেই নবদম্পতির জন্য নতুন কুঁড়েঘর তৈরি করে দেওয়া হয়। তা সম্ভবপর না হলে মাতৃগৃহের পাশেই তারা বাস করে। কোনো কোনো পুঞ্জিতে তা বাধ্যতামূলক। কনিষ্ঠ কন্যার জন্য আলাদা ঘর নির্মাণ করা হয় না। কারণ সে মাতৃগৃহ ও সম্পত্তির উত্তরাধিকারিণী। সংসারে টাকা পয়সার লেনদেন হয় স্ত্রীর হাত দিয়ে।

খাসিয়া সমাজে স্বামী-স্ত্রী পরস্পর সহযোগিতা ও সমঝোতার মাধ্যমে কৃষি ও সংসারের কাজকর্ম করে। এদের মধ্যে মতান্তর কমই দেখা যায়। পুরুষরা নারীদের সমীহ করে। বিপত্নীক বৃদ্ধ পিতার লালন-পালনের ধর্মীয় দায়িত্ব সন্তানদের। স্ত্রীর অকালমৃত্যু হলে তারা মাতৃনামেই পরিচিত হয়। পুরুষটি অন্যত্র বিবাহ করে চলে যেতে পারে। খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করলেও খাসিয়ারা মাতৃনাম পরিত্যাগ করে না। সম্পত্তির মালিক কনিষ্ঠ কন্যা কিন্তু অন্য বোনরাও ভাগ পায়, তবে তাদের সম্পত্তি বিক্রয় করার অধিকার নেই।

সর্বশেষ খবর