সোমবার, ৯ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

ফসলি জমিতে ব্রিজ

অর্বাচীন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসুন

ঢাকা মহানগরীকে সুপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউক প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানটি উন্নয়নের ক্ষেত্রে আদৌ জুৎসই অবদান রাখতে পারছে কিনা সে প্রশ্ন দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি রাজধানীর ভাটারা এলাকায় ফসলি জমির ওপর অযৌক্তিকভাবে ব্রিজ নির্মাণের কর্মকান্ডে এ প্রশ্ন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। ভাটারার মাদানী এভিনিউয়ের পাঁচখোলা খাল ছিল এলাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক জলাধার। রাজউকের বিগত চেয়ারম্যান ও প্রধান প্রকৌশলীর সময় এ খাল ভরাট করে সড়ক নির্মাণের স্ববিরোধী ও কান্ড জ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই ভুল কর্মকান্ডের ফলে বন্ধ হয়ে যায় পানি প্রবাহের পথ। এখন ভুল সংশোধনে ভরাটকৃত খাল পুনঃখননের বদলে ফসলি জমিতে কৃত্রিম খাল তৈরির কসরত চালাচ্ছে রাজউক। এর ফলে বেরাইদ ও সাঁতারকুল মৌজার কয়েকশ জমির মালিক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। তাদের বক্তব্য মূল খাল ভরাট করে সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে পানিপ্রবাহ বন্ধের মতো পরিবেশ ধ্বংসের দায়-দায়িত্ব রাজউকের বর্তমান চেয়ারম্যান ও প্রধান প্রকৌশলী কেন নেবেন? স্মর্তব্য, প্রগতি সরণির নতুনবাজার থেকে পূর্বদিকে বালুনদী পর্যন্ত সম্প্রসারিত প্রধান সড়কটি মাদানী এভিনিউ হিসেবে পরিচিত। সম্প্রসারিত এ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের বেরাইদ-৩ নম্বর ব্রিজ নির্মাণের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের ভুলের খেসারত দিচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সেখানে নিরীহ মানুষের ফসলি জমি খনন করে কৃত্রিম খাল তৈরির কসরত করছে রাজউক। ফলে একদিকে বাপ-দাদার জায়গা-জমি তাদের হাতছাড়া হচ্ছে, অন্যদিকে গভীর খাল খননের ফলে আশপাশের জমির মাটিও ধসে পড়তে শুরু করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের আবেদন-নিবেদন, স্থানীয় এমপির পাঠানো নির্দেশনাপত্র- কোনোকিছুই আমলে নেওয়া হচ্ছে না। এমনকি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যৌথ উদ্যোগে সরেজমিন যে সার্ভে হয়, প্রকল্প বাস্তবায়নে সেই সার্ভে প্রতিবেদনকেও পাত্তা দিচ্ছে না রাজউক। বরং ভুল পরিকল্পনার নির্মাণকাজ তড়িঘড়ি শেষ করাটাই যেন উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে জনমনে যে ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে তা যে কোনো সময় বিস্ফোরণমুখ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাজধানীর উন্নয়নে রাজউকের সৃষ্টি। রাজধানীবাসীকে পথে বসানোর জন্য নয়। মাদানী এভিনিউয়ের ব্রিজ নিয়ে রাজউক যে কসরত করছে তা দুর্ভাগ্যজনক। এ অপখেলা থেকে তারা সরে আসবেন এমনটিই প্রত্যাশিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর