মঙ্গলবার, ১০ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

দারিদ্র্য বিমোচনে জাকাতের ভূমিকা

মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবী

ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম একটি হলো জাকাত। শরিয়তের দৃষ্টিকোণে যে ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদ তথা সাড়ে ৭ তোলা সোনা বা সাড়ে ৫২ তোলা রুপা অথবা এর সমমূল্যের সম্পদ বা সঞ্চয়ের মালিক হয় এবং তা এক বছর তার কাছে সঞ্চিত থাকে, তার ওপর জাকাত আদায় করা ফরজ। আল্লাহ আল কোরআনের প্রায় ৩২ জায়গায় জাকাত আদায়ের ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন। ইসলামী অর্থব্যবস্থার চালিকাশক্তি হলো জাকাত। ইসলাম ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে জাকাতব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলিম জাতিকে এক ভারসাম্যমূলক অর্থনীতি উপহার দিয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন ও ধনী-গরিবের মাঝে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণে জাকাতের গুরুত্ব অপরিসিম। বছরের যে কোনো দিন জাকাত আদায় করা যায়। তবে অধিক সওয়াব লাভের আশায় অধিকাংশ মুসলিম রমজানে জাকাত প্রদান করেন। যারা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও জাকাত আদায় করে না, আল্লাহ তাদের ব্যাপারে কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি প্রদান করেছেন। আল কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা কর ও জাকাত আদায় কর এবং তোমরা নিজের জন্য যে নেকি অগ্রিম পাঠাবে, তা আল্লাহর কাছে পাবে। তোমরা যা কিছু কর, নিশ্চয় আল্লাহ তা প্রত্যক্ষ করেন।’ সূরা বাকারা, আয়াত ১১০।

আল কোরআনে আরও ইরশাদ হচ্ছে, ‘আর যারা সোনা ও রুপা জমা করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না (জাকাত আদায় করে না), আপনি তাদের কঠোর আজাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সেদিন তা (জমাকৃত সম্পদ) জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ¦ ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে, (সেদিন বলা হবে) এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে, সুতরাং যা জমা করেছিলে এখন তা আস্বাদন কর।’ সূরা তওবা, আয়াত ৩৪-৩৫। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত- ১. এ সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রসুল। ২. নামজ কায়েম করা। ৩. জাকাত আদায় করা। ৪. হজ করা। ৫. রমজান মাসে সিয়াম পালন।’ বুখারি।

প্রিয় পাঠক! পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় ধনী-দরিদ্রের মাঝে বিরাট বৈষম্য দেখা যায়। পুঁজিপতিরা সমাজের সিংহভাগ মানুষকে শোষণ করে বিরাট সম্পদের মালিক হয়। অন্যদিকে সমাজের দরিদ্র শ্রেণির লোকেরা বঞ্চিত ও সর্বহারা হয়। অথচ ইসলাম ধনীর সম্পদে বঞ্চিতের অধিকার এবং জাকাতব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ধনীর সম্পদ গরিবের মাঝে সুষ্ঠু বণ্টনের নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। কিন্তু অতি দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো, সমাজের খুব কমসংখ্যক মানুষই সঠিকভাবে জাকাত প্রদান করে। অনেক সামর্থ্যবান ব্যক্তি জাকাত আদায়ের ব্যাপারে বড়ই উদাসীন, আবার অনেকে জাকাত আদায় করলেও সমুদয় সম্পদ হিসাব করে সঠিকভাবে জাকাত আদায় করে না। যদি আমাদের সমাজের বিত্তশালী ও সামর্থ্যবানরা সঠিক পন্থায় ও সুপরিকল্পিতভাবে জাকাত প্রদান করেন তাহলে এ দেশের বিরাট বঞ্চিত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী দরিদ্রতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে এবং অদূর ভবিষ্যতে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে।

লেখক : মুফাস্সিরে কোরআন খতিব ও প্রিন্সিপাল, মারকাযুল উলুম আজিজিয়া মাদ্রাসা, কাজলা (ভাঙ্গাপ্রেস) যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।

Email : [email protected]

সর্বশেষ খবর