বুধবার, ১১ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

জিবের সুব্যবহার মুমিনদের কর্তব্য

আবদুর রশিদ

মানবচরিত্রে যেসব খারাপ দিক আছে তার মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ অন্যতম। হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টিতে জিবের ভূমিকা যে সবচেয়ে বেশি তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজজীবনে জিবের অপব্যবহারের কুফল অনুভূত হয়। যা থেকে দূরে না থাকতে পারলে সমাজে অশান্তি ও সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে। জিবের সুব্যবহার মুমিনদের কর্তব্য হওয়া উচিত। কারণ জিব মানুষের অন্তরের দরজা। মানুষের অন্তরের গোপনীয়তা জিব দ্বারা প্রকাশ পায়। স্বভাবতই জিবের ক্ষমতা প্রবল। এর অপব্যবহার মানুষকে ধ্বংসের অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করতে পারে। আবার সুব্যবহার সাফল্যের স্বর্ণশিখরে আরোহণ করাতে পারে। অধিকাংশ পাপ ও নেকির কাজ জিব দ্বারাই সংঘটিত হয়। গিবত-পরনিন্দা, কুটনামি, মিথ্যা, অশ্লীল কথা, গালমন্দ ইত্যাদি জিবের কাজ। সুতরাং জিবকে সংযত রাখাই মানুষের জন্য জরুরি কর্তব্য। আল্লাহ বলেন, ‘ধ্বংস নিশ্চিত এমন ব্যক্তির জন্য যে সামনাসামনি মানুষকে গালাগাল দেয় এবং পেছনে নিন্দা রটাতে অভ্যস্ত।’ সূরা হুমাজাহ, আয়াত ১।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কিয়ামতের দিন সর্বাপেক্ষা মন্দ লোক ওই ব্যক্তিকে পাবে, যে দ্বিমুখী। সে এক মুখ নিয়ে এদের কাছে আসে এবং আরেক মুখ নিয়ে তাদের কাছে যায়।’ মিশকাত।

এ হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়, মানুষের জিব ও লজ্জাস্থান কবিরা গুনাহসমূহের উৎস। কেননা মানুষ মুখ দ্বারা মিথ্যাচার, গালমন্দ, চোগলখোরি, ধোঁকাবাজি, গিবত-তোহমত, অভিসম্পাৎ প্রভৃতি কবিরা গোনাহ করে। কিন্তু মানুষ এসব পাপ থেকে সাবধান হওয়ার ন্যূনতম চেষ্টা করে না। এগুলো থেকে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের জিবকে সংবরণ করা অত্যাবশ্যক। কেননা এগুলোর ব্যাপারে কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘চোগলখোর ও খোঁটাদানকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ বুখারি, মুসলিম, মিশকাত।

হজরত হুজাইফা (রা.) বলেন, ‘আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ মুত্তাফাক আলাইহি, মিশকাত।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘একদা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি জানো গিবত কী? তারা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রসুল অধিক জানেন। তিনি বললেন, তোমার কোনো ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে। জিজ্ঞাসা করা হলো, আমি যা বলি যদি তা আমার ভাইয়ের মধ্যে বিদ্যমান থাকে, তাহলে আপনার কী অভিমত? তখন তিনি বললেন, তুমি যা বল তার মধ্যে তা থাকলে তুমি তার গিবত করলে। আর যদি তার মধ্যে তা না থাকে তবে তুমি তার প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করলে।’ মুসলিম, মিশকাত। হিংসা-বিদ্বেষ একটি সংক্রামক ব্যধি। আল কোরআনে হিংসা-বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে সাবধানবাণী উচ্চারণ করে বলা হয়েছে, ‘তোমরা হিংসা-বিদ্বেষ থেকে নিবৃত্ত থাকবে। কেননা হিংসা মানুষের নেক আমল এমনভাবে খেয়ে ফেলে যেভাবে আগুন কাঠ জ্বালিয়ে নিঃশেষ করে দেয়।’ আবু দাউদ।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে জিবের সদ্ব্যবহার করার তৌফিক দান করুন এবং অপব্যবহার থেকে দূরে রাখুন।

                লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

 

সর্বশেষ খবর