শনিবার, ১৪ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

হারিয়ে যাচ্ছে তিতাস নদী

দূষণ বন্ধ ও ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নিন

অদ্বৈত মল্লবর্মণের অমর উপন্যাস ‘তিতাস একটি নদীর নাম’-এর কল্যাণে বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে তিতাস নদী। সেই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলেও তিতাস অববাহিকার ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ভাবা হতো উপমহাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আত্মপরিচিতির অনুষঙ্গ তিতাস নদীর নামে নামকরণ করা হয়েছে দেশের বৃহত্তম গ্যাসকূপ এবং গ্যাস বিতরণ প্রকল্পের। কিন্তু সেই তিতাস এখন অস্তিত্ব হারাতে চলেছে দখল-দূষণের শিকার হয়ে। একসময় জেলাজুড়ে বিস্তৃত তিতাস ছিল প্রমত্তা এক নদী। তিতাসের সেই জৌলুস আর নেই। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় জেলেদের আগের মতো মাছ ধরতেও দেখা যায় না। খরস্রোতা তিতাস নদীকে কেন্দ্র করে শহরের অন্যতম বৃহৎ হাট আনন্দবাজার ও জগৎবাজার গড়ে উঠেছিল। ডুবোচর জেগে ওঠা, অপদখল আর আবর্জনায় নাব্য হারিয়ে তিতাস এখন জীর্ণশীর্ণ খালে পরিণত হয়েছে। পলি জমে গত দুই দশকে তিতাসের তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। একসময় লঞ্চের শব্দ আর বড় বড় পালতোলা নৌকার মাঝিমাল্লার ভাটিয়ালি গানের সুরে ঘুম ভাঙত তিতাসপাড়ের মানুষের। কিন্তু তিন দশকের ব্যবধানে এ নদীর তলদেশে অসংখ্য ডুবোচর জেগে উঠেছে। তীরের বিভিন্ন অংশ নির্দয় দখল আর দূষণের শিকার হওয়ায় খরস্রোতা তিতাস মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। মেঘনা থেকে বোমালিয়া খাল দিয়ে এসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল-নাসিরনগর ব্রিজের নিচ দিয়ে ভাটির দিকে যে পানি প্রবাহিত হচ্ছে, তা থেকে তিতাস নদীর সৃষ্টি। পরে তা জেলার নবীনগর উপজেলার চিত্রি গ্রামে গিয়ে মেঘনা নদীতে মিলেছে। দেশের অন্যান্য নদীর চেয়ে তিতাস বেশি আঁকাবাঁকা। সর্পিল তিতাসের প্রায় ৪০ কিলোমিটার ইতোমধ্যে ভরে গেছে। নদীর বুকে এখন আর মাঝিমাল্লাকে পালতোলা নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে দেখা যায় না। বর্ষায়ও চোখে পড়ে না তিতাসের রুদ্রমূর্তি। পাড় দখল করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা। কোথাও কোথাও চোখে পড়ে জেগে ওঠা চর। তিতাস অববাহিকার লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা এ নদীর অস্তিত্বের ওপর নির্ভরশীল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আত্মপরিচিতির প্রতীক তিতাসকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে নদী খনন দরকার। দখল-দূষণ বন্ধেও নিতে হবে জোরালো পদক্ষেপ। এ ব্যাপারে সরকারের দৃঢ় ভূমিকার পাশাপাশি তিতাস অববাহিকার জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয়তাও কাম্য। শুধু তিতাস নয়, দেশের সব নদ-নদী তথা প্রাকৃতিক জলাধার

সুরক্ষায় জাতিকে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর