বুধবার, ১৮ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

শবেমেরাজ রসুল (সা.)-এর অন্যতম মাজেজা

মুহম্মাদ জিয়াউদ্দিন

শবেমেরাজ রসুল (সা.)-এর অন্যতম মাজেজা

রজব ইসলামের ইতিহাসে একটি গৌরবান্বিত মাস। এ মাসের ২৭ তারিখের রাতে মেরাজে আল্লাহর দিদার লাভ করেন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

আল্লাহর অসীম কুদরত শবেমেরাজের এ রাত নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। পুণ্য এই রাতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সৌভাগ্য লাভ করেন। নবুয়তের দ্বাদশ সালের রজবে  এক শুভ রাতে কাবার হাতিম থেকে বোরাকযোগে ঊর্ধ্বাকাশে গমন এবং আল্লাহর দিদার ও সান্নিধ্য লাভ করেন। এ পুণ্যরাতে মুসলমানের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অসংখ্য মাজেজার মধ্যে মেরাজ অন্যতম। মেরাজ শব্দের অর্থ ঊর্ধ্বগমন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস এবং বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে ঊর্ধ্বাকাশে গমন, সপ্ত আকাশ ভ্রমণ, নবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, বেহেশত-দোজখ দর্শন ও সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত গমন, সিদরাতুল মুনতাহা থেকে রফরফের মাধ্যমে আরশে আজিমে গমন, সেখান থেকে লা-মাকান ভ্রমণ এবং আল্লাহর দিদার ও সান্নিধ্য লাভ এবং সেখান থেকে পুনরায় মক্কায় আগমন- এ বিস্ময়কর সফর বা ভ্রমণকেই এক কথায় মেরাজ বলা হয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মেরাজ ছিল বাস্তব- শারীরিক ও আধ্যাত্মিক ঘটনা। মেরাজের কথা আল কোরআনের সূরা বনি ইসরাইলের প্রথম আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতের বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি। যাতে আমি তাকে কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিই। নিশ্চয় তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।’ সূরা নজমের ১ থেকে ১৭ নম্বর আয়াতে মেরাজের বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসেও মেরাজ সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কার কাবাঘর থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস, সেখান থেকে সপ্ত আকাশ পাড়ি দিয়ে সিদরাতুল মুনতাহা, তার ওপরে ৩৬ হাজার বছরের পথ পাড়ি দিয়ে আরশে গমন করেন এবং সেখান থেকে ৭০ হাজার নুরের পর্দা অতিক্রম করে একেবারে দিদারে এলাহিতে পৌঁছেন। সেখানে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলে পুনরায় মক্কায় উপস্থিত হয়েছিলেন। এটি সম্ভব হয়েছিল আল্লাহর কুদরতে। অতীতেও আল্লাহ অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। যেমন বিশ্বাসীদের আদিপিতা হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে আল্লাহ নমরুদের অগ্নিকা- থেকে রক্ষা করেন এবং অগ্নিকান্ডের মধ্যে বেহেশতি পরিবেশ সৃষ্টি করে তাঁকে জীবিত রাখেন। মাছের পেটের ভিতর জীবিত রেখেছিলেন হজরত ইউনুস (আ.)-কে। ফেরাউনের হাত থেকে বাঁচাতে হজরত মুসা (আ.)-এর জন্য নীল দরিয়ায় রাস্তা করে দিয়েছেন। হজরত ইসা (আ.)-কে আল্লাহ আকাশে নিয়ে গেছেন এবং তাঁকে আবার এ পৃথিবীতে পাঠাবেন। মেরাজের মাধ্যমে আল্লাহ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখা দিয়ে তাঁকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি উম্মতে মোহাম্মদিকেও বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। শবেমেরাজের রাতে বেশি করে ইবাদত-বন্দেগি করা উচিত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সে তৌফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর