শিরোনাম
শুক্রবার, ২০ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

ভূমিকম্প

বিজ্ঞানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক শ্বাস-প্রশ্বাসে। অক্সিজেন ছাড়া যেমন কোনো প্রাণী বাঁচতে পারে না, তেমন বিজ্ঞান ছাড়া আমাদের বেঁচে থাকা অসম্ভব। বিজ্ঞান কোনো আলাদা বস্তু নয়। এগিয়ে চলার নামই বিজ্ঞান, বিশেষ জ্ঞানের নামই বিজ্ঞান, সৃষ্টির নামই বিজ্ঞান। ফলে বিজ্ঞানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সৃষ্টির জন্মক্ষণ থেকেই। আমাদের মুনি-ঋষিরা ছিলেন বিজ্ঞানের অনুরাগী। শুনলে আশ্চর্য মনে হতে পারে, ধর্মগ্রন্থ যদি ভালোভাবে বিশ্লেষণ করা যায় তাহলে দেখা যাবে এর সবকিছুই বিজ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল। সৃষ্টির জন্ম ধ্বংসস্তূপ থেকেই, ফলে সৃষ্টি ও ধ্বংস পাশাপাশি বিরাজ করছে। ধ্বংসের বিভিন্ন রূপের মধ্যে একটি হলো ‘ভূমিকম্প’। ভূমিকম্পের এক মুহূর্তের নৃত্যে স্তব্ধ হয়ে যায় সৃষ্টি। সৃষ্টিকে তার যাত্রা আবার নতুন ভাবে করতে হয় সেই ধ্বংসস্তূপ থেকেই। প্রকৃতির রাজ্যে বিজ্ঞান অনেক কিছু জয় করে নিয়েছে, তবে সে এখনো নিরুপায় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস প্রদানে। ভূমিকম্প সম্পর্কে আমাদের অসীম কৌতূহল। ভূমিকম্পের সৃষ্টির উৎস কোথায়? ভূমিকম্পের ঠিক আগে মাটির নিচে বৈদ্যুতিক পরিবহনতা ও ভূজলের গভীরতায় কিছু পরিবর্তন ঘটে। তা ছাড়া শিলাচ্যুতি বরাবর শিলাস্তরের উত্থান ও পতন ঘটে। তার মধ্যে চাপ ও তাপের তারতম্য ঘটে ভূমিকম্পের ঠিক আগে। ভূমিকম্পের আগে শিলাস্তরের ওপর যে চাপের সৃষ্টি হয় এবং সে চাপ যখন শিলাস্তরের অভ্যন্তরীণ শক্তিকে ভেদ করে তখনই শিলাস্তরের ভাঙনের সৃষ্টি হয় এবং এর সঙ্গে সঙ্গেই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। শিলাস্তরের ওপর যে চাপের সৃষ্টি হয় তা যদি আঁচ করে নেওয়া যায় তাহলে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস সম্ভবপর হবে। কিন্তু এসব ব্যাপার নির্ণয় করতে হলে ভূকম্পপ্রবণ অঞ্চলে পুঙ্খানুপুঙ্খ সমীক্ষা চালিয়ে যাওয়া দরকার। ভূমিকম্প সম্পর্কে যেটুকু তথ্য পাওয়া গেছে তা হলো ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দু, গভীরতা ও কম্পনের পরিমাণ। ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দু গভীরতার ওপর নির্ভর করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবং এর ব্যাপকতা। বিশেষ বিশেষ কেন্দ্রবিন্দু বা এপিসেন্টার থেকে এ কম্পন ছড়িয়ে যাচ্ছে। কখনো বা অনুভব করা যায় কখনো যায় না। অনুভবের মাত্রা যখনই বৃদ্ধি পায় তখনই তার চারপাশে ধ্বংস ছড়ায়। মাটির নিচে পোঁতা থাকে সংবেদী হেলিকর্ডরের একটি প্রান্ত। তা বেয়ে ভূস্তরের সূক্ষ্মতম কম্পন ও গ্রাফের আকারে আঁকা হয়ে যায়। এ গ্রাফকে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় ‘সিসমোগ্রাফ’ বলে। সিসমোগ্রাফ প্রথমে আবিষ্কৃত হয় জাপানে আজ থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ বছর আগে। কেবল প্রাকৃতিক কম্পনই নয়, ভূগর্ভের পরমাণু বিস্ফোরণজনিত কম্পনও ধরা পড়ে সিসমোগ্রাফে। সিসমোগ্রাফে পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞরা পরিমাপ করেন ‘রিখটার স্কেল’। এ রিখটার স্কেলই হলো ভূকম্পনের মাপকাঠি।

‘রিখটার স্কেল’, যা দ্বারা ভূকম্পনের পরিমাপ করা যায়; তা সম্পর্কে সামান্য বলা প্রাসঙ্গিক মনে করি। মার্কিন ভূকম্পন বৈজ্ঞানিক চার্লস রিখটার এ স্কেল আবিষ্কার করেন ১৯৩৫ সালে। যার দ্বারা ভূকম্পনের তীব্রতা মাপা হয়। তার নামানুসারে এ স্কেলের নাম হয় ‘রিখটার স্কেল’। এ স্কেল অনুসারে ২.৫ কম্পনের শক্তি ১০১৭ আর্গস শক্তি থাকে। ২.৫ স্কেলের ভূমিকম্প খুবই ছোট মাপের যা সাধারণত অনুভব করা যায় না। অনুভব করা যায় ৪.৫ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্প, যার শক্তি থাকে ১০২০ আর্গস। তবে ৬ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি ভাঙা ও জীবনহানি ঘটে। ৭ রিখটার স্কেলের শক্তি ১০২৫ আর্গস। এ স্কেলের ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি অত্যধিক। আর ৮ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্প মহাভয়ঙ্কর। পরিসংখ্যায় সাধারণত দেখা যায় ভূকম্পন এলাকায় ৪-৫ রিখটার স্কেল ভূমিকম্প সাধারণত পাঁচ বছর অন্তর হয়। ৬ বা তার ওপর রিখটার স্কেলের ভূমিকম্প সাধারণত ৪০-৫০ বছরের মধ্যে হয়। তবে রিখটার স্কেলের সঙ্গে ভূমিকম্পের গভীরতার ওপর নজর রাখতে হবে। গভীরতা যদি কম হয় তাহলে ৫ অঙ্কের রিখটার স্কেলের কম্পনেও অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

                আফতাব চৌধুরী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর