শুক্রবার, ২০ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা
ইতিহাস

সাহসিকতার প্রতীক

ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে একজন নারী অপরিসীম দক্ষতা এবং অসীম দৃঢ়তায় সব প্রতিকূলতা জয় করে তুলে ধরেন সাহসিকতার মশাল। ১২৩৬ সালে একজন রমণীর এমন বিস্ময়কর উত্থান ভারতবর্ষের ইতিহাসে আজও অমলিন। সে সময় দিল্লির সর্বত্র তুর্কিদের প্রভাব-প্রতিপত্তি থাকায় সুলতানা রাজিয়াকে সবাই নিরঙ্কুশভাবে মেনে নিতে প্রস্তুত ছিলেন না। তার পরও সব প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে প্রায় চার বছর ধরে গোটা সাম্রাজ্য শাসন করেছিলেন সুলতানা রাজিয়া। সুলতানা পুরুষের পোশাক পরে সিংহাসনে বসতেন এবং হাতির পিঠে যাতায়াত করতেন। এসব কাজ অনৈসলামিক বলে তুর্কি আমিররা রাজিয়ার বিরুদ্ধে প্রচারণায় নামেন। সুলতানা রাজিয়া এতে থেমে থাকেননি। পুরুষের শেখানো নারীসুলভ আচার-আচরণ ও স্বভাব-প্রকৃতি বাদ দিয়ে তিনি শক্ত হাতে হাল ধরেছেন সাম্রাজ্যের। সেকালের প্রথা ও প্রচলন ডিঙিয়ে তিনি নিজেকে ঘোষণা দেন একজন সুলতান হিসেবে। রাজিয়া তাকে ‘সুলতানা’ সম্বোধন করাটা পছন্দ করতেন না। কারণ, তার মতে, ‘সুলতানা’ হচ্ছে ‘সুলতান’ অর্থাৎ শাসকের স্ত্রীর উপাধি। তিনি তো আর শাসকের স্ত্রী নন, বরং তিনিই স্বয়ং শাসক। তিনি তখন থেকে নিজের চেহারা অনাবৃত রেখে দরবারে হাজির হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। নিয়মমাফিক দরবারে এসে তিনি নিজেই সবার অভিযোগ শুনতেন, নিজেই সমাধান দিতেন। কোথাও যুদ্ধের প্রয়োজন দেখা দিলে নিজেই সেনাবাহিনী নিয়ে রওনা হতেন এবং লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতেন। ইতিহাসে স্বীকৃতি মেলে, ‘সুলতানা রাজিয়ার শাসনামল ভারতবর্ষের ইতিহাসে একটি অন্যতম সফল অধ্যায়।’ এত কিছুর পরও প্রজাদের অনেকে নারী নেতৃত্ব মেনে নিতে পারছিল না। শেষ পর্যন্ত তাকে ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়। ব্যক্তিগত বিশ্বস্ত কর্মকর্তা হিসেবে রাজিয়া জালাল উদ্দিন ইয়াকুত নামক একজন ইথিওপিয়ান দাসকে নিয়োগ দেন। এ কারণে তুর্কিরা হিংসায় পড়ে রাজিয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে নামেন। এ পর্বে প্রথমে বিদ্রোহ করেন লাহরের শাসনকর্তা কবির খাঁ। ১২৪০ খ্রিস্টাব্দে রাজিয়া এ বিদ্রোহ দমন করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর