শনিবার, ২৮ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় রসুল (সা.)-এর নির্দেশনা

মেরাজুল ইসলাম

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যে গাইডলাইনগুলো দিয়েছেন, কোনো মানুষ যদি সেগুলোর অনুকরণ করে, তাহলে সে ডায়াবেটিস, করোনা, মহামারী ও যে কোনো বড় ধরনের রোগব্যাধি এবং জীবাণুর আশঙ্কা থেকে আত্মরক্ষা পেতে পারে। শরীরের যেসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দ্বারা জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে, সেগুলো কখন কীভাবে ও কোন পদ্ধতিতে সুরক্ষা পাবে তাও বলে দিয়েছে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্বাস্থ্যগাইড। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার সাহাবায়ে কিরামের মাঝে ঘোষণা করেন, ‘(দেখ!) এমন দুটি নিয়ামত রয়েছে, যেগুলো সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষ ধোঁকাগ্রস্ত (অসচেতন) হয়ে আছে- ১. স্বাস্থ্য ২. স্বাচ্ছন্দ্য ও সচ্ছলতা।’ বুখারি। এজন্য রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে মুখ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য মিসওয়াকের নির্দেশ করেছেন, শুধু কি তাই! এ স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করেছেন এবং প্রতিটি ভালো কাজের জন্য শতকরা ১০ থেকে ৭০ ভাগ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছেন। যেমন বলছেন, ‘মিসওয়াকের মধ্যে ৭০টি উপকারিতা বা নিয়ামত রয়েছে- ১. যে ব্যক্তি অজুর সঙ্গে মিসওয়াক করে নামাজ পড়বে, আল্লাহ তাকে ৭০ গুণ সওয়াব দান করবেন।’ বাজ্জার। সর্বশেষ অর্থাৎ মরণের সময় ইমান নসিব হবে। সুবহানাল্লাহ!। মুখের দুর্গন্ধ ও দাঁত অপরিষ্কার রাখা শরীরে জীবাণু ছড়ার আশঙ্কা মাত্রাতিরিক্ত। এজন্য আমাদের সব সময় মুখ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে পবিত্র থাকা প্রয়োজন। যেমন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মিসওয়াক হলো মুখের পবিত্রতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যম।’ নাসায়ি। মুখ অপরিষ্কার রাখার দ্বারা যেমন শরীরে রোগজীবাণু ছড়ায়, তেমনি শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দ্বারাও শরীরে জীবাণু ছড়ায়। যেমন নখ। নখ যদি বড় থাকে, তাহলে সেখানে ময়লা জমে শরীরে রোগজীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সপ্তাহে অন্তত একবার নখ কেটে শিখিয়ে দিয়েছেন এবং টয়লেট করার পর কুলুখ ব্যবহারের কথা বলেছেন। কারণ, কুলুখ বা টয়লেট পেপার ব্যবহারের আগে ময়লা পরিষ্কারে প্রথমে হাত ব্যবহার করলে হাতের সূক্ষ্ম ছিদ্রগুলো দিয়ে জীবাণু প্রবেশ করার আশঙ্কা থাকে, এজন্য রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘ঢিলা’ বা ঢেলা (মাটির টুকরো) বা কাপড়/টয়লেট পেপার ব্যবহারের কথা বলেছেন। ঠিক তেমনি, দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে প্রস্রাব কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন এবং দাঁড়িয়ে পানিও খেতে নিষেধ করেছেন। কারণ, দাঁড়িয়ে পানি খেলে পানিটা সরাসরি কিডনিতে আঘাত করে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাবারের সময়ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়ম বলে দিয়েছেন। খাবারের বসার আদব ও পরিমাণমতো খাওয়া। কারণ, একজন মুমিনের মাঝে যেসব গুণাগুণ বা বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন তার মধ্যে একটি হলো পরিমিত আহার করা।  কারণ, পরিমিত আহার করলে শরীর সুস্থ, স্বচ্ছন্দ ও সতেজ থাকে। যেমন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন, ‘বনি আদমের এ পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করা, যার দ্বারা তার পেট সোজা থাকে। এর পরও যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য, আর এক-তৃতীয়াংশ খালি রাখবে, যাতে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া যায়।’ তিরমিজি।

                লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর