রবিবার, ২৯ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

আসুন করোনা রোধ করি

ফাতিমা পারভীন

আসুন করোনা রোধ করি

ঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাস নেই, বৃষ্টি নেই, নেই আবহাওয়ার পূর্বাভাস। তার পরও মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অদেখা-অজানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার সবাই। লাশের মিছিল নেমেছে বিশ্বজুড়ে। চিকিৎসা নেই, জানাজা নেই, প্রিয়জনের বিয়োগেও আছে আতঙ্ক। অনাকাক্সিক্ষত এক চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে ধরায়। গোটা বিশ্ব যেন অসুস্থতায় অস্থির। বিশ্বব্যাপী করোনা আতঙ্কে মানুষ গৃহবন্দী। যারা প্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদা মেটাতে সক্ষম তারা ইতিমধ্যে নিজেদের গৃহবন্দী করে ফেলেছেন। এ অবস্থায় সামাজিক মাধ্যমগুলোয় হুমড়ি খেয়ে চেয়ে থাকছে অধিকাংশ মানুষ। একটু বিশ্বস্ত তথ্য পেলেই সবাই পড়ছে, শেয়ার করছে, ভুল হচ্ছে, নাকি সঠিক হচ্ছে, তথ্য সঠিক নাকি গুজব ছড়াচ্ছে এ বিষয়গুলো নিয়ে দারুণ বিপাকে অনেকেই। কেউ কেউ আবার টিভির চ্যানেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখেন যদি আশার আলো দেখতে পান। আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় কোনো স্ট্যাটাস আপডেট পেলেই একসঙ্গে অনেক মানুষের কাছে পৌঁছনোর জন্য লেখাটি সার্কুলেট হওয়া জরুরি ভেবে কপি পেস্ট করে ছড়িয়ে দিচ্ছে ইনবক্সেও। আবার জীবনের শেষ দিন ভেবে অনেকেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছেন। এ যেন প্রকৃতির প্রতিশোধ! নীরব প্রকৃতির সঠিক সময়ে প্রতি করোনায় আক্রান্ত গোটা বিশ্ব। যার প্রভাব পড়েছে সব ক্ষেত্রে। তবে অবাক হওয়ার বিষয় হলো বিশ্বের মানুষ করোনার প্রতিক্রিয়া নিয়ে তিন দলে বিভক্ত। একদল সিসিউশনটিকে খুবই প্যানিক আকারে নিচ্ছে তারা অতি উৎসাহী হয়ে অনুশোচনা, আত্মশুদ্ধি আর করোনার ইফেক্ট নিয়ে ঘরবন্দী। দ্বিতীয় দল ঘাড়ত্যাড়া, তারা অতি চালাক। ওই ঘাড়ত্যাড়া মানুষের জন্য প্রয়োজন ১৪৪ ধারা (কারফিউ)। এদের মধ্যে আছে আবার অতি মানবিক, অতি সামাজিক, অতি উৎসাহী, অতি বাকপটু। ওইদল করোনাভাইরাস নিয়ে কিছু মনে করছেন না। তারা দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছে, সিগারেট ভাগাভাগি করে খাচ্ছে, বেসিনের পাশে ঝুলিয়ে রাখা গামছা ব্যবহার করছে। আবার বিদেশফেরত আত্মীয়-স্বজনকে খুব সহজেই গ্রহণ করছে। আইসোলেশনে থাকা আত্মীয়ের সঙ্গে পাশাপাশি বসে গল্প করছে। অতি উৎসাহী কিছু মানুষ রাস্তার পাশে হাত ধোয়া শিখোনোর প্রতিযোগিতা করে একই পানির কল ব্যবহার করছে। অযথা বাজার করার জন্য গিজগিজ করছে মানুষের সমাগম। সরকারি ছুটি পেয়ে নিজ অবস্থানে না থেকে মূল্যবোধ হারিয়ে বাড়িতে উপস্থিত হওয়ার প্রতিযোগিতায় ছুটছে। ফলে বাড়িতে ছুটে আসা ওই মানুষেরা ৬৪ জেলায় ছড়িয়ে দিচ্ছে করোনাভাইরাস কোনো না কোনোভাবে। বাজারে, পথেঘাটে, ফেরিতে, লোকালয়ের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে যেন ঈদ উপলক্ষে আয়োজন। আরেক দল মানে তৃতীয় দল হলো হতদরিদ্র। ওই হতদরিদ্র মানুষগুলো ক্ষুধার কাছে জিম্মি। এখনো তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। শ্রমের বিনিময়ে খাদ্য জোটে। তাদের জীবন-জীবিকার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রশংসনীয়। তবে ওই পদক্ষেপ দ্রত বাস্তবায়ন হবে সেই আশার আলোয় অপেক্ষা। করোনা মোকাবিলায় ইতিমধ্যে সরকারের পদক্ষেপ বেশ প্রশংসিত তবে আর দেরি না করে প্রতিটি জেলায় করোনা টেস্ট একান্ত জরুরি, সাপোর্ট ও টেলিমেডিসিন চিকিৎসা চালু করা উচিত এবং প্রয়োজন অনুযায়ী তা সম্প্রসারিত করতে হবে। অবশ্য আগে থেকে প্রস্তুতি নিলে এমনভাবে অন্তত টেস্ট কিটসগুলোর ক্রাইসিস হতো না। তারপরও আমরা আশাবাদী আর কিছুদিন অন্তত সময় পেলে এই ক্রাইসিস কাটিয়ে উঠতে পারবে সরকার। মূলত এ রোগের পরিণতি সম্পর্কে সারা বিশ্বের স্বাস্থ্য প্রশাসনের ধারণা কম হয়তো তাই গোটা বিশ্বে এই হযবরল অবস্থা।

বৈশ্বিক চরম এ বিপর্যয়ে আজ অধিকাংশ মানুষ রুদ্ধ, অবরুদ্ধ, ভীতসন্ত্রস্ত। এমতাবস্থায় শুধু সচেতন নয় আমাদের একমাত্র সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করা উচিত। যারা মুসলিম তাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা উচিত, তাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের আগে পাঁচবার ওজুতে অন্তত হাত পরিষ্কার করার সুযোগ হয়, আর আমাদের অতি লোভ, অপরাধমূলক কর্মকান্ডের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। কেননা আমরা সৃষ্টির রহস্যময় জগতে স্বীয় প্রতিপালকের নেয়ামতের কথা ভুলতে বসেছি।

মহান আল্লাহর দরবারে হেফাজত চেয়ে আমরা সবাই যদি একে অপরের সহায়ক হয়ে সচেতন হই আর জ্বর, সর্দি, কাশি ও সাধারণ সমস্যা টেলি ডক্টরের সঙ্গে পরামর্শ করে চিকিৎসা নেই তাহলে হয়তো হাসপাতালে যাওয়া রোগীসহ ডক্টর, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী সবার জন্য ঝুঁঁকিপূর্ণ হবে না। আমাদের দেশে এখনো ডাক্তার নার্সের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাই তাদের নিরাপত্তার কথাও বিবেচনা করতে হবে। আমরা নিম্ন মধ্য আয়ের দেশের মানুষ তারপরও এখানে রয়েছে আরও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষ তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। বৈশ্বিক চরম এ বিপর্যয়ে ওই মানুষেরা যেন ক্ষুধার্ত হয়ে কষ্ট না পায়। সংখ্যাগরিষ্ঠ ওই পরিবারের শিশুসহ নারীরা যেন মৌলিক চাহিদা মেটাতে পারে সেই বিষয়টি নিয়ে সরকারের এখনই ভাবতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা, দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা, ধনী ব্যক্তিদেরও এগিয়ে আসতে হবে দুস্থ মানুষের পাশে।

                                লেখক : শিশু ও নারী অধিকার কর্মী

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর