রবিবার, ২৯ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

মহামারী এলাকায় আমাদের করণীয়

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

মহামারী এলাকায় আমাদের করণীয়

মহামারী আল্লাহর একটি আজাব ও শাস্তি। পৃথিবীর ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে মহামারী দেখা গেছে। অসংখ্য মানুষ মহামারীতে প্রাণ দিয়েছে। সাহাবায়ে কিরামের যুগেও মহামারী দেখা দিয়েছিল। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা.) যিনি ছিলেন হজরত ওমর (রা.)-এর যুগে শাম দেশের (বর্তমান ফিলিস্তিন ও জর্ডান) সেনাপ্রধান, তিনি এবং তার সেনাবাহিনীর অনেক সদস্য প্লেগে (এক প্রকার ভয়ঙ্কর চর্মরোগ) আক্রান্ত হয়ে শহীদ হন। তা ছাড়া হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) এবং তার পরিবারের সদস্যরাও এই মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে শাহাদাতবরণ করেছিলেন। বর্তমান যুগের সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারী কভিড-১৯ যা করোনাভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। সারা পৃথিবীর প্রায় সব দেশে এ মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এখন কঠিন সময় পার করছে। এ অবস্থায় আমাদের করণীয় হলো- প্রথমত সব সময় অজু অবস্থায় থাকা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় অজু অবস্থায় থাকতেন। সাহাবায়ে কিরামকেও অজু অবস্থায় থাকার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। সব সময় অজু অবস্থায় থাকলে বিভিন্ন জীবাণু ও ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকা যায়। অজু করতে হলে দুই হাত, পুরো চেহারা, দুই পা ধোয়া এবং মাথা মাসেহ করা ফরজ (অবশ্যপালনীয়)। নাকে পানি দেওয়া, কুলি করা সুন্নত। প্রতিটি কাজ তিনবার করা সুন্নত। আমরা জানি, এসব অঙ্গে সাধারণত জীবাণুু আক্রমণ করার আশঙ্কা থাকে। তাই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত অজু করলে এবং প্রতিটি অঙ্গ তিনবার ধুইলে সাধারণত জীবাণু দূর হয়ে যায়। তাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় ছাড়াও অন্যান্য সময় অজু অবস্থায় থাকার অভ্যাস করতে হবে। এতে সুন্নত পালনের সওয়াব পাওয়া যাবে আবার বিভিন্ন জীবাণু ও ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকা যাবে। মহামারীপ্রবণ এলাকায় আমরা দ্বিতীয়ত যে কাজটি করব তা হলো- ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলব। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সুস্থতা  আল্লাহর নিয়ামত ও অনুগ্রহ। তাই অসুস্থ হওয়ার আগে সুস্থতাকে মর্যাদা দাও। আমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ হয় সে যেন সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে যায়। চিকিৎসা গ্রহণ করে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেছিলেন। তা ছাড়া যেসব খাবারে রোগ-প্রতিরোধ হয় সেসব খাবার গ্রহণের জন্য তিনি সাহাবায়ে কিরামকে উদ্বুদ্ধ করতেন। যেমন দুধ, মধু, কালিজিরা, ফলমূল, খেজুর ইত্যাদি। তাই আমরাও চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী খাবার ও অন্যান্য উপায়-উপকরণ গ্রহণ করব। তৃতীয়ত, আমরা তওবা-ইসতিগফার বেশি বেশি করব। আল্লাহ চাইলে আমাদের ওপর থেকে এ করোনাভাইরাসের আজাব উঠিয়ে নিতে পারেন। তাই আল্লাহর দরবারে বারবার নিজেদের গুনাহ থেকে মাফ চাইতে হবে। কান্নাকাটি করতে হবে। সূরা আনফালের ৩৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘(হে নবী) আপনি  যেখানে অবস্থান করবেন আল্লাহ সেখানে আজাব দেবেন না এবং যারা আল্লøাহর কাছে তওবা-ইসতিগফার করবে  (মাফ চাইবে) তাদেরও তিনি কঠিন শাস্তি দেবেন না।’ এ আয়াত থেকে বোঝা গেল, আমরা যদি আল্লাহর কাছে মাফ চাই, কান্নাকাটি করি তাহলে তিনি এ ভয়াবহ বিপদ থেকে আমাদের মুক্ত রাখবেন।

লেখক : খতিব, সমিতিবাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর