বুধবার, ১ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

মহামারী রোধে ইসলামের নির্দেশনা

মুহাম্মদ নওয়াব আলী ভুইয়া

করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত সারা দুনিয়া। দুনিয়ার ৭৫০ কোটি মানুষের জন্য এ ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটেছে সাক্ষাৎ মুসিবত হিসেবে। বাংলাদেশের মানুষও এ মহাবিপদ থেকে মুক্ত নয়। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশবাসীকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। নাগরিক হিসেবে যা পালন করা আমাদের অবশ্যকর্তব্য। রসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহামারীর সময় ঘরে থাকা ও সতর্কবস্থা অবলম্বনের তাগিদ দিয়েছেন। আল কোরআনে মানুষের ওপর বালা-মুসিবত সম্পর্কে বেশকিছু আয়াত রয়েছে। করোনাভাইরাস নিঃসন্দেহে আল্লাহর গজব। মানুষের অন্যায় ও পাপের যে শাস্তি এটি- তা মনে রাখতে হবে। যে কোনো ধরনের আজাব বা গজব আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে।

আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোনো বিপদই আসে না। যে ব্যক্তি আল্লাহকে বিশ্বাস করে তিনি তার অন্তরকে সুপথে পরিচালিত করেন। আর আল্লাহ সব বিষয়ে সম্যক অবগত রয়েছেন।’ সূরা তাগাবুন, আয়াত ১১।

করোনাভাইরাস আমাদের জন্য দৃশ্যত ক্ষতিকর হলেও এর মধ্যে কল্যাণও লুকিয়ে থাকতে পারে। রব্বুল আলামিন বলেন, ‘তোমাদের কাছে হয়তো কোনো একটা জিনিস পছন্দীয় নয়, অথচ তা কল্যাণকর। আর হয়তো বা কোনো একটি জিনিস তোমাদের কাছে পছন্দনীয়, অথচ তা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহ সবকিছুই জানেন, যা তোমরা জানো না।’ সূরা বাকারা, আয়াত ২১৬।

মানুষ যখন বিপদে পড়ে, যখন সে নিজেকে বিপন্ন ভাবে, তখন সে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। মানবমনের এই গতিপ্রকৃতির কথা আল্লাহ বর্ণনা করেছেন চমৎকারভাবে- ‘তিনিই (আল্লাহ) তোমাদের জলে ও স্থলে ভ্রমণ করান। এমনকি যখন তোমরা নৌকায় আরোহণ করে অনুকূল হাওয়ার তালে আমোদ-আহ্লাদে ভ্রমণ করতে থাকো, তখন ঝড়ো হাওয়া আঘাত হানে আর চারদিক থেকে তরঙ্গমালা ধেয়ে আসে, আর তারা মনে করে, তারা তরঙ্গমালায় পরিবেষ্টিত হয়ে পড়েছে। তখন তারা বিশুদ্ধচিত্তে আল্লাহকে ডেকে বলে, তুমি যদি এ থেকে আমাদের পরিত্রাণ দাও তাহলে অবশ্যই আমরা কৃতজ্ঞ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।’ সূরা ইউনুস, আয়াত ২২।

করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে মানুষ নিজেকে বিপন্ন মনে করছে। আল্লাহ রব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য এ মুসিবত এসে থাকতে পারে।

আল্লাহ বলেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব, কখনো ভয়ভীতি, কখনো ক্ষুধা-অনাহার, কখনো জানমাল ও ফসলাদির ক্ষতি সাধন করে। তুমি  ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দান কর।’ সূরা বাকারা, আয়াত ১৫৫। আমি আমার ৭৬ বছরের জীবনে এ ধরনের বালা-মুসিবত আর দেখিনি। এটাকে দুনিয়ায় ছোট বিপদ আর আখিরাতে এর চেয়ে বড় বিপদ অপেক্ষা করছে ভেবে সতর্ক হয়ে হকের দিকে ফিরে আসতে হবে। আসুন আমরা আর গুনাহ না করার শপথ করে আল্লাহমুখী হয়ে যাই। তাহলে সুসংবাদ রয়েছে যে পেছনের পাপ মাপ করে দেওয়া হবে এবং কিয়ামতের দিন জবাবদিহি সহজ করে দেওয়া হবে। সেজন্য ১০ দিন ঘরবদ্ধ থাকার জন্য আমরা যেন আফসোস না করি। মুসিবতের এই সময়ে ঘরে ১০ দিন থাকাকালে নফল ইতিকাফের নিয়ত করে ফেলি। কেননা দুনিয়ার কাজে ব্যস্ত থেকে অনেকে রমজানে ইতিকাফ করতে পারি না। তাই আল্লাহর দেওয়া এ সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করা উচিত।

আল্লাহর নিয়ামত মনে করে আমরা এই সময়কে নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত ও রোজা রেখে কাটিয়ে দিই। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব ও শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রেখেছেন। আমরা তা অনুসরণ করতে পারি। এতে বর্তমান চরম ভীতিকর অবস্থার মধ্যেও মনে এক প্রকার জান্নাতি প্রশান্তি বিরাজ করবে। আল্লাহ নিজেও সময়ের কসম খেয়ে অর্থাৎ অতিশয় গুরুত্ব দিয়ে ইমানদার বান্দাদের নেক কাজ করতে, হকের ও সবরের বিষয়ে পরস্পরকে উপদেশ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমরাও নিজে হকের ওপর তথা ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকব এবং সবর করে ঘরের মধ্যেই অবস্থান করব, কোনো অবস্থায় ঘরের বাইরে যাব না আর অন্যদের এসব উপদেশ দিতে থাকব। আমরা সমস্ত সতর্কতা অবলম্বন করেই আল্লাহর ওপর ভরসা করব। সে ক্ষেত্রে দেখা যাবে ঘরে থাকার সময় দুনিয়াবি কাজ যেটুকু করতে পারিনি তার চেয়েও বেশি ইবাদতের সুযোগ আল্লাহর তরফ থেকে পাওয়া গেছে আর এ মহাবিপদও হয়তো বাংলাদেশ থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।

আমাদের কেউ সর্দি, কাশি, জ্বরে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। করোনাভাইরাস যেহেতু দেহের ভিতরে আঘাত করে, সে কারণে সূরা ইউনুসের ৫৭ নম্বর আয়াতটি বেশি বেশি পড়ি, সেখানে অন্তরের শেফার কথা বলা হয়েছে। আমরা কোনোভাবেই কোনো জাতি বা সম্প্রদায়কে দোষারোপ করব না। বরং মন খুলে আল্লাহর বান্দা সমস্ত দুনিয়াবাসীকে মাফ করে দেওয়ার জন্য দোয়া করব। সূরা রুমের ৪১ নম্বর আয়াতে এ মহাবিপর্যয়কে মানুষের হাতের কামাই বলা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা যাদের দোষারোপ করতে চাই, তারাও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মত। তাদের হকের ওপর নিয়ে আসার দায়িত্ব আমরা পালন করতে পারিনি। সেজন্য তওবা করি এবং বিশ্ববাসীকে মাফ করে দিয়ে আজাব উঠিয়ে নিয়ে আল্লাহর রহমত নাজিল করার জন্য বেশি বেশি দোয়া করি। আমাদের সবাইকে আল্লাহ তাঁর হুকুম মেনে চলার তৌফিক দান করুন।

                লেখক : সভাপতি, মসজিদ সমাজ বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর