মঙ্গলবার, ৭ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

দয়াময় প্রভু মহান আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

দয়াময় প্রভু মহান আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন

মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা! নিরহংকারভাবে জাতিকে করোনাভাইরাসের তথ্য সরবরাহ করলে এবং তাতে দেশ উপকৃত হলে একজন মুসলমান হিসেবে আপনার নামাজ-রোজা-হজ-জাকাতের চেয়ে কম সওয়াব হবে না। তাই গভীর নিষ্ঠার সঙ্গে কাজটি করুন। আপনার শাড়ি বদল নিয়ে লোকজন কথা বলে। একটু লক্ষ্য করবেন। হয়তো ত্রুটি আপনার নয়। তার পরও যদি মানুষের চোখে কিছু লাগে তাকে সম্মান করতে হয়। নিশ্চয়ই আপনি তা করবেন। আর যদি তা পারেন সেটা হবে জাতির জন্য সব থেকে বড় সেবা। মনে রাখবেন, সবাই সব সময় সব সুযোগ পায় না। বয়সী মানুষ বলে রাস্তাঘাটের কথা শুনে উপদেশটি দিলাম; কিছু মনে করবেন না। আমার কাছে সব নারী মা-বোন-কন্যা। তাই কাউকে বিশেষ করে মেয়েদের ছোট করার জন্য কখনো কোনো কথা বলিনি, আপনাকেও বলছি না।

জীবনে কখনো এমন গৃহবন্দী হইনি। সারা বিশ্ব স্তব্ধ হয়ে আছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঘরে বসার আগে কেউ জানত না, কখনো এমনও হতে পারে। ভুল-ভ্রান্তি, দোষ-ত্রুটি যা-ই হোক মানুষ বড় বেশি সহযোগিতা করেছে সরকারকে। সেটা শুধু আমাদের দেশে নয়, অন্যান্য দেশেও। সরকারি সিদ্ধান্তে ঘরে বসে থাকার ব্যাপারে কেউ কোনো আপত্তি তোলেনি। ডাক্তার এবং সরকারের অনুরোধ অক্ষরে অক্ষরে মেনে নিয়েছে। বাংলাদেশে এর আগে কখনো কোনো সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষ এমন স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে নিয়েছে বলে মনে পড়ে না। তার পরও অনেকে খুশি না। ওই যে, ‘যত পাই তত চাই, আরও আরও আরও চাই’- চাওয়ার যেন শেষ নেই। যার এক বেলা কাজ না করলে চোখে অন্ধকার, সেও ১০-২০ বেলা কাজ না করে মুখ বুজে আছে। সবার একই আকুতি- যত কষ্টই হোক এ বিপদ থেকে জাতি পরিত্রাণ পাক। জানি না কী হবে, তবে আমার দৃঢ়বিশ্বাস, আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশ করোনার করাল থাবা থেকে বেঁচে যাবে। তবে সরকারি প্রশাসন যতটা যা করার করছে, কিন্তু স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক দলসমূহকে সম্পৃক্ত করতে চাচ্ছে না। আবার এখানে ওখানে খবর দেখছি, প্রবীণ কারও কারও নামে বলা হচ্ছে, ‘উনি কী করছেন? তিনি কী করছেন? কী করবেন?’ সরকার ছাড়া কারও কিছু করার আছে? যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার এই মহাপ্রয়াস, সেই প্রয়াস উৎসাহিত করতে আরও মানুষকে সম্পৃক্ত করা যেত। আদৌ হবে কিনা জানি না। তবে সেদিন বিরোধী দলের এক নেতার কথায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এতটা তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠা খুব একটা ঠিক হয়নি। তিনি দুর্যোগ অতিক্রমে কী বলেছেন বুঝতে পারছি না। শুধু দলীয় কমিটি না করে সর্বদলীয়ভাবে কমিটি সবাই চায়।

যাক সেসব কথা। সরকারদলীয় অনেকেই বারবার গুজবের কথা বলেছেন। আমি কোথাও গুজব খুঁজে পাইনি। খুঁজেছি অনেক। কিন্তু পাইনি কিছুই। তবে সেদিন গুজব দেখেছি। আজ থেকে ৫০ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধের সময় জীবন বাঁচাতে মানুষ ওভাবে শহর ছেড়েছিল, যেভাবে সেদিন গার্মেন্ট শ্রমিকরা হেঁটে শত মাইল পাড়ি জমিয়েছেন। এ বড় কষ্টের কথা। প্রধানমন্ত্রীর ২৫ মার্চের বক্তৃতায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি। মাঝে আবার ৯ তারিখ পর্যন্ত বৃদ্ধির কথা হয়েছিল। পরে সেটা ১১ তারিখ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয় যা অনেকেই জানত না। আর জানলেই বা কী, ৫ তারিখ গার্মেন্ট খোলা। গার্মেন্ট শ্রমিকরা কী করবেন? জীবন-মরণ পণ করে ঢাকার দিকে ছুটেছিলেন। এখন যে যাই বলুন, মালিক আর শ্রমিকনেতাদের সবই ঠুনকো যুক্তি। ছুটি দিয়েছেন বাড়ি গিয়েছে, বাড়ি গিয়ে ঘরে থেকেছে। মানুষ যদি সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখত প্রধানমন্ত্রীর কথা যদি না শুনত তাহলে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা এত দিন ৮-১০ জন নয়, ৮-১০ হাজার হতো। আর যদি তা হতো তাহলে তা সামাল দেওয়া খুব সহজ ছিল না। হয়নি, সবই আল্লাহর ইচ্ছা। আর হয়েছে কি হয়নি তাও তো জোর দিয়ে বলতে পারি না। কারণ আমরা কেউ জানি না, কার শরীরে করোনাভাইরাস আছে। যদি থেকে থাকে দু-চার জনের তাহলে ৪ তারিখ ঢাকার দিকে মানুষের ঢল থেকে যে কী হবে সেও পরম স্রষ্টা আল্লাহ রব্বুল আল আমিন জানেন। করোনা সংক্রমণ নাকি ২-১৪ দিনের মধ্যে বোঝা যায়। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, কারও যেন করোনা না হয়। তবে আন্তরিকতার সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। সারা জীবন চিকিৎসকদের সেবার ক্ষেত্রে আন্তরিক মনে হয়েছে। কিন্তু আর্তের সেবায় আমাদের দেশ থেকে উন্নত দেশের লোকজন অনেক বেশি এগিয়ে। যদিও ১৬ হলেই বাবা-মা সন্তানকে বহন করতে চায় না, অনেক সন্তান বাবা-মাকে চেনে না। কিন্তু তারা দুস্থকে বড় সেবাযতœ করে। যার অভাব আমাদের মধ্যে দেখি। তার পরও চিকিৎসকদের রোগীর প্রতি দরদ কখনো কম ছিল না। এই প্রথম শুনছি, ডাক্তাররা পিছিয়ে গেছেন। আগে চিকিৎসা ছিল সেবা, এখন চিকিৎসা হচ্ছে ব্যবসা। রাজধানী, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন কোথাও বাদ নেই। চেয়ার-টেবিল নিয়ে ক্লিনিক লিখে বসলেই হলো, কিছুদিনেই জমজমাট ব্যবসা। সেই ক্লিনিকও নাকি তালাবদ্ধ! একে খুব সহজভাবে নেওয়া উচিত নয়। এটা এক মস্তবড় অপরাধ। সেদিন আবার দেখলাম, হাসানুল হক ইনু বলেছেন, একজনকেও পরীক্ষা থেকে বাদ রাখা যাবে না। দিনে পরীক্ষা হয় এক-দেড় শ-দুই শ, খুব বেশি হলে তিন-চার শ। মানুষ ১৭-১৮ কোটি। সবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গেলে হাজার বছর লাগবে। সত্যিই কি সবার পরীক্ষার দরকার? মোটেই না। সর্দি-কাশি-হাঁপানিতে যারা বেশি আক্রান্ত তাদের ঠিক সময়ে পরীক্ষা হলেই হলো। আমি কয়েকজনকে চিনি, তাদের পাঁচ-সাত বছর ঠান্ডা-কাশি-সর্দি-জ্বর লেগেই আছে। এখনো আছে। তাই অভাবনীয় অসম্ভব কিছু বলে লাভ নেই। তবে আমার মনে হয়েছে গার্মেন্টের শ্রমিকদের ওভাবে নিয়ে আসা শ্রমিকদের চেয়ে মালিক এবং যারা এ ক্ষেত্রে ছড়ি ঘোরান তাদের ‘ডাল মে কুচ কালা হ্যায়’ বলে মনে হয়। বাংলাদেশে অনেক কিছুই তলিয়ে দেখা হয় না। কোনো কিছু হলে কারও ওপর দোষ চাপিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা হয়। সরকার চাইছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে। তাহলে গার্মেন্টের সঙ্গে যারা জড়িত তারা সরকারের ওপর সরকার? তা না হলে সামাজিক দূরত্বের সিদ্ধান্ত ব্যর্থ করে এমন ঘটনা ঘটল কেন বা কীভাবে? তাহলে তো ইচ্ছা করলেই ক্ষমতাবান বা প্রভাবশালীরা সরকারকে যে কোনো সময় বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে পারে। গার্মেন্ট শ্রমিকদের এভাবে আসা এবং কিছু গার্মেন্ট খুলে দেওয়ায় যদি সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে তাহলে সেটা কে সামাল দেবে? গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি মালিকরা? মনে হয় না। কারণ তাদের সে রকম সামর্থ্যও নেই, সে রকম ইচ্ছাও নেই। এর আগে অনেক কারখানায় দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে তারা কখনো তেমন মানবিক আচরণ করেননি। তাই গার্মেন্ট মালিকরা মানুষের জীবনের কথা চিন্তা করবেন- এটা ভাবাও এক অলৌকিক স্বপ্ন। তবে এটা প্রমাণিত হয়েছে, ইচ্ছা করলে সরকারি সিদ্ধান্ত তারা অমান্য বা উপেক্ষা করতে পারেন। তেমন করলে তাদের কিছুই হয় না। কারণ টাকার ক্ষমতা সব ক্ষমতার বড় ক্ষমতা। গরিব মানুষের জীবনের মূল্য কোনোকালেই ছিল না। কিন্তু করোনা তো আর গরিব-ধনী বিচার করছে না। তাই ধনীরা দালানের ভিতরে থাকলে তারা আক্রান্ত হবে না- এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। তাই হুঁশিয়ার সাবধান! করোনাকে অবহেলা করবেন না। সেদিন চ্যানেল আইয়ে কি এক গার্মেন্ট মালিককে দেখলাম। সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদিকা। আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদিকার যদি এমন কথাবার্তা জ্ঞান-গরিমা হয় তাহলে দেশ বাঁচবে না। গার্মেন্ট মালিকের কথা অসংযত-অসংলগ্ন; একেবারে ফালতু, মূল্যহীন। চাকরি যাবে না- এ কথা এখন যেভাবে বলছেন দুর্যোগের আগে কোনো দিন বলেননি। একটা সুতার ববিন, একটা সুই হারানোর জন্য কত ওয়ার্কারের চাকরি গেছে। এখন পন্ডিতরা বলছেন, কারও চাকরি যাবে না। ব্যাপকহারে ব্যাপারটা ঘটেছে বলে অমন বলছেন। একেই বলে ঠেলার নাম যশমত আলী ম-ল। ঠেলায় পড়লে বাঘেও ঘাস খায়।

প্রধানমন্ত্রী একটু খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন, গার্মেন্ট মালিকদের এমন হেলাফেলা খুব একটা কল্যাণকর নয়। ৪ থেকে ৯ তারিখ, সেখান থেকে ১৪ তারিখ সরকারি ছুটি। গার্মেন্টওয়ালারা ইচ্ছা করলেই সে নির্দেশ ভঙ্গ করতে পারেন কিনা? আর তারা ভাঙে ভাঙ্গুক, দেশের দরিদ্র-নিরীহ মানুষের শত শত মাইল বাচ্চা কোলে এভাবে হাঁটানোর ক্ষমতা তাদের কে দিয়েছে? একটু ভেবে দেখবেন। আপনার ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা প্রণোদনা গার্মেন্ট মালিকরা যে অপব্যবহার করবেন না তার গ্যারান্টি কোথায়? একটু খেয়াল রাখবেন। আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে, ’৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলনের সময় ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘কলকারখানার মালিক শিল্পপতিরা ২৮ তারিখে কর্মচারীদের বেতন দিয়ে দিবেন আমার গরিবের যাতে কষ্ট না হয়।’ আজও গার্মেন্ট মালিকরা বেতন দিয়েছেন কিনা জানি না। এখন বেতন দিতে কাউকে কারখানায় আসতে হয় না, বাড়িতে বেতন পাঠিয়ে দেওয়া যায়। দয়া করে একটু খেয়াল করবেন। লিখেছিলাম, জাতীয় এই দুঃসময়ে জেলখানার তালা খুলে দিন। খালেদা জিয়ার মতো একজন জাতীয় নেতাকে মুক্তি দেওয়ার বুকের পাটা দেখাতে পারলে সাধারণ কয়েদিদের জামিন অথবা মুক্তি দিয়ে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া এমন কী কঠিন কাজ- ভেবে দেখবেন। পুলসিরাতের চেয়েও কঠিন সময় পার করছে দেশ। শুধু দেশ নয়, পৃথিবী। কারও কোনো সামান্য ভুলে সর্বনাশ হয়ে যাক, তা বিবেকবান কেউ চায় না।

গত ৪ এপ্রিল ছিল আমার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী। শেষ শয্যায় মা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ছিলেন। ৩ এপ্রিল মোস্তফা মহসীন মন্টুর সঙ্গে জিনজিরায় গিয়েছিলাম ’৭১-এ হানাদারদের নৃশংস ধ্বংসযজ্ঞের স্মরণসভায়। যাওয়ার পথে মাকে দেখে গিয়েছিলাম। স্ত্রী নাসরীনকে মা বলেছিলেন, ‘তুমি বাড়ি যাও। বজ্র ফিরে এসে খাবে।’ বেলা আড়াই-তিনটা পর্যন্ত মায়ের হুঁশজ্ঞান ভালোই ছিল। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন, ‘তুই সভা করতে যা। আমার জন্য চিন্তা করিস না।’ সেই ছিল মায়ের সঙ্গে শেষ কথা। মা যে ১০-১২ দিন বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ছিলেন সে কদিন বাড়ি যাইনি। বারান্দায় বসে খাবার খেয়েছি। জিনজিরার মিটিং সেরে হাসপাতালে ফিরেছিলাম। সন্ধ্যার পর মায়ের অবস্থা খারাপ হতে থাকে। রাত ৯টায় তাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। তারপর লাইফ সাপোর্টে। আমি সিঁড়ির কাছে ফ্লোরে বসে ছিলাম। দুজন ডিউটি ডাক্তার তাদের ঘরে নিয়ে গিয়েছিলেন। একটা বেডে হেলান দিয়ে বসেছিলাম। প্রহরে প্রহরে ডাক্তার-নার্সরা খবর দিচ্ছিলেন। মনে হয় রাত ১টা কয়েক মিনিট দুজন ডাক্তার এসে মায়ের কাছে নিয়ে গেলেন। তাঁর পা দুটো বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। জীবদ্দশায় মায়ের পা টিপতে, মায়ের সুন্দর পা দুটো কোলে নিয়ে বসে থাকতে বড় ভালো লাগত। ইদানীং কুশিকে কোলে নিয়ে যে আনন্দ পাই মায়ের পা দুটো কোলে নিয়ে টিপতে তার চেয়ে কম আনন্দ হতো না। বড় আপন করে বুকে চেপেছিলাম মায়ের পা। এক অ্যাসোসিয়েটস প্রফেসর বললেন, অনুমতি দিলে লাইফ সাপোর্ট ছেড়ে দিই। বুক থরথর করে কাঁপছিল। অ্যাসোসিয়েটস প্রফেসর লাইফ সাপোর্ট ছেড়ে দিলেন। আমি কেমন যেন একটা শক্তি অনুভব করছিলাম। মনে হলো কিছু একটা চলে গেল। যেটা আমার হাতে ও বুকে বুঝলাম। ঠিক তেমনি দরজা-জানালা দেখেও একটা উপলব্ধি হলো। মনে হলো মানবের আত্মা যখন চলে যায় তখন হয়তো এমনই হয়। কিছুটা বোঝা যায়। মাকে কবর দেওয়া হয়েছিল ৪ এপ্রিল বাদ আসর। এই ক’বছর মায়ের মৃত্যুদিনে তাঁর কবরে যেতে একবারও বাদ পড়েনি। মা-পাগল ছেলে ছিলাম। তাঁর আরও আট-নয় জন ছেলেমেয়ে। সবাই সব সময় যেতে না পারলেও আমি কোনোবার তাঁর কবরে যেতে ব্যর্থ হইনি। শুধু মৃত্যুবার্ষিকীতে নয়, ওর আশপাশে কোথাও গেলে মা-বাবার কবরে যাই। তা ছাড়া এমনিতেও যাই। তাই ৪ এপ্রিল পুরো ১০ দিন একনাগাড়ে ঘরে থেকে দোয়াখায়ের করতে মা-বাবার কবরে গিয়েছিলাম। সে এক অভাবনীয় অবস্থা। লোকজন নেই। দু-এক জন হয়তো মনে করেছে আমি যেতে পারি। কিন্তু আমি কাউকে বলিনি। এমনকি আমাদের ইউনিয়নের প্রধান নেতা ইথার সিদ্দিকীকেও না। ছোট-বড় ৩০-৪০ জন নামাজি ছিল। কোনো মিষ্টির দোকান খোলা ছিল না। পকেটে টাকা থাকতেও এক ছটাক মিষ্টি নিতে পারিনি। কে এক মুরুব্বি অনেক বছর আগে বলেছিলেন, ‘সময় আসবে টাকা থাকবে, কিন্তু খাবার পাবে না। টাকাই চিবিয়ে খেতে হবে।’ কেন যেন বারবার সে কথাই মনে হচ্ছিল। তবু মা-বাবার জন্য দোয়া করেছি, সারা জাহানের জন্য আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করেছি আল্লাহ যেন দয়া করেন। রাস্তাঘাটে মানুষ দেখিনি সেটা এক কথা। কিন্তু খেত-খামারেও কাউকে দেখলাম না। পানি নেই, লোকজন নেই, খেতের ধান কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। এমন হলে কী যে হবে আল্লাহ রব্বুল আলামিনই জানেন। বড় শঙ্কায় আছি। আল্লাহর কাছে যেমন মা-বাবার মাগফিরাত কামনা করেছি, তেমনি দেশবাসীর কল্যাণ কামনা করেছি। দয়াময় আল্লাহ যেন বিশ্ববাসীকে এ মহাদুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করেন।

লেখক : রাজনীতিক।

www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর